1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘এশিয়ার ১৩টি দেশ বিপর্যয়ে পড়বে'

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রচ্যে। করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই সেখানে নতুন করে বেজেছে যুদ্ধের দামামা৷

https://p.dw.com/p/4ezDk
প্রবাসী শ্রমিক
''গত অর্থবছরে আমরা ১৩ লাখ কর্মী পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, অর্থবছর শেষে এবারও ১০-১১ লাখে পৌঁছে যাবো,'' বলেছেন আলী হায়দার চৌধুরীছবি: Shariful Hasan/DW

এ বিষয়েই ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-র মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী।

ডয়চে ভেলে : বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিক যাওয়ার হার কমার কারণ কী?

আলী হায়দার চৌধুরী : শ্রমিক যাওয়ার হার কমছে, এই কথাটার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত নই। গত অর্থবছরে আমরা ১৩ লাখ কর্মী পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, অর্থবছর শেষে এবারও ১০-১১ লাখে পৌঁছে যাবো। মধ্যপ্রচ্যের কাতার, কুয়েত, ইউএই-তে আমাদের মার্কেট প্রায় বন্ধ। প্রচলিত মার্কেটগুলোর মধ্যে আমাদের বড় মার্কেট হলো সৌদি আরব। সেখানে লোক যাওয়ার পরিমান অনেক বেড়ে গেছে। ওখানে যে মেগাসিটিগুলো হচ্ছে সেই কারণে। মালয়েশিয়াতে পাইপলাইনে যে লোকগুলো যাওয়ার কথা ছিল, সেগুলো যাচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পরিমান বেড়েছে। তবে সেটা এখনও উল্লেখযোগ্য না।

শ্রমিক যাওয়ার হার কমছে, এর সঙ্গে একমত নই: হায়দার

অভিবাসনের ক্ষেত্রে খরচ তো বেড়েছে। এই কারণেও অনেকের বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ থাকলে যেতে পারছেন না, বিষয়টি কী এমন?

আমি সেটা মনে করি না। ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা আলোচনার জন্য আলোচনা করি। আমি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কথা বলছি, সরকার নির্ধারিত যে খরচ আছে তার থেকে আমাদের খরচ খুব বেশি না। কাছাকাছি। খরচ বাড়ার পেছনে আবার অনেকগুলো কারণ আছে। বিমানের ভাড়া অনেক বেড়েছে। আমাদের দেশে শ্রমিক ভাড়া বলে কিছু নেই। মধ্যপ্রাচ্যে যেতে আমাদের সময় লাগে ৫ ঘ৷ণ্টা। অথচ ভাড়ার যে হার, সেই ভাড়া দিয়ে অ্যামেরিকা চলে যাওয়া যায়। দেশীয় এয়ারলাইন্স বলেন আর বিদেশি বলেন, সবাই এক। মধ্যপ্রচ্যে যেতে ২৪ হাজার টাকার ভাড়া কখনো কখনো ৮০ হাজার টাকা হয়ে যায়। এখন কিছুটা কমলেও ৪০ হাজার টাকার নীচে নামেনি। বিমানভাড়া, মেডিকেল, মোবিলাইজেশন, ডলার রেট সবকিছু মিলিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। মধ্যপ্রচ্যে যেতে আগে যে ৪-৫ লাখ টাকা লাগতো, এখন সেই পর্যায়ে আর নেই।

নতুন বাজার খোঁজার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেটার এখন কী অবস্থা?

আমাদের ইতালি, গ্রিস, স্পেনের সঙ্গে এমওইউ হয়েছে। ইউএই মার্কেটটা আবার খোলার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। কাতারের আমীর আসছেন। সেখানে নিশ্চয় আমাদের আলোচনায় এটা অগ্রাধিকার পাবে। কাতার খুললেও একটা বড় মার্কেট হবে। প্রচলিত মার্কেটের বাইরেও আমাদের বিকল্প মার্কেট খুঁজতে হবে। আমরা যদি ইউরোপ মার্কেটটা ধরতে চাই, তাহলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের সরবরাহ লাইনটা ঠিক করতে হবে। দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে। আমরা বায়রার পক্ষ থেকে সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।

মধ্যপ্রাচ্যে যে যুদ্ধ চলছে, এটির বহুমাত্রিকতা রয়েছে। সাধারণত বাংলাদেশিরা যে সব দেশে যান, সেগুলোতেও যুদ্ধের নানা প্রভাব দেখা যাচ্ছে। আমাদের শ্রমবাজারে এর কতটুকু প্রভাব পড়তে পারে?

যে মার্কেটগুলোতে আমাদের লোক আছে বা যাচ্ছে, সেই দেশগুলো এখনো যুদ্ধে জড়ায়নি। যেসব দেশে আমাদের শ্রমিকরা যাচ্ছে, সেই দেশগুলো যদি বৃহৎ পরিসরে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তো ক্ষতির আশঙ্কা আছে। যদিও আমরা সেটা মনে করি না। তারপরও সেই প্রভাব শুধু আমাদের না, যেসব দেশ শ্রমিক পাঠায়, তাদের সবার উপরেই পড়বে। বিশেষ করে এশিয়ার ১৩টি দেশের উপরই এর প্রভাব পড়বে এবং তারা সবাই বিপর্যয়ে পড়বেন।

সাধারণত দেখা যায় নিয়োগকর্তা যে বেতনের কথা বলেন বা যে চাকুরির কথা বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওই দেশে গিয়ে তার মিল পাওয়া যায় না। অনেক কোম্পানি বছরের পর বছর বেতনও পরিশোধ করে না। পরিস্থিতি এমন যে, ৫ বছর চাকুরি করেও অনেকে অভিবাসন ব্যয় তুলতে পারে না। এক্ষেত্রে আসলে দায় কার?

দায় তো কাউকে না কাউকে নিতে হবে। হয় আমাদের নিতে হবে, না হয় সরকারকে নিতে হবে, না হয় যিনি যাচ্ছেন তাকে নিতে হবে। এখানে প্রথম স্টেক হোল্ডার যিনি যাচ্ছেন, তিনি। যারা ফ্রি ভিসায় যাচ্ছেন, অর্থাৎ পরিবার ও স্বজনের যে ভিসা, সেটা নিয়ে যারা যাচ্ছেন, তাদের সরকারি প্রক্রিয়াগুলো আমরা হয়ত রেডি করে দিচ্ছি। কিন্তু তার চাকরির বিষয়ে তো আমাদের কোনো হাত নেই। এখন সৌদি আরবের যে অবস্থা, সেখানে ফ্রি ভিসায় গিয়ে চাকরি করা অনেক কঠিন। সৌদি আরবে ওরা কিন্তু বেশ সংগঠিত। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি কাউকে নিলে মেডিকেলের পর ব্যাংক কার্ড দিয়ে তারপর আকামা দিয়ে কাজে পাঠায়। কিন্তু দুর্বল কোম্পানির মাধ্যমে যারা যাচ্ছেন, তারা অনেক ক্ষেত্রে প্রতারিত হচ্ছেন। আগে একজন শ্রমিকের রেসিডেন্স পারমিট করতে লাগতো ৩০০ রিয়াল। এখন লাগে ১০ থেকে ১২ হাজার রিয়াল। ফলে অনেকে আকামা না করে কাজে দিয়ে দিচ্ছে। এটা নিয়ে আমরা গত মঙ্গলবারও মন্ত্রণালয়ে সম্মিলিতভাবে মিটিং করেছি। কর্মীরা যাতে বিদেশে গিয়ে বিপদে না পড়ে, সেজন্য আমরা যৌথভাবে কাজ করছি।

মধ্যপ্রচ্যের অনেক দেশের সঙ্গে আমরা জি-টু-জি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, তাদের নানা সুবিধাও দিচ্ছি। ইতিমধ্যে সৌদি আরবকে চট্টগ্রাম বন্দরের একটা অংশ দেওয়া হয়েছে। দুবাইকে আরেকটি অংশ দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই দেশগুলো বাংলাদেশিদের চাইতে অন্য দেশকে প্রাধান্য দেয়। তাহলে আমরা তাদের এত সুবিধা দিচ্ছি কেন?

এগুলো তো দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। সরকারি কর্মকর্তারাই এর সঠিক জবাব দিতে পারবেন। সৌদি আরবে আমরা শুধু কর্মী পাঠাই না, আমাদের অনেক সম্পর্ক আছে। সেখান থেকে আমাদের বিপুল রেমিট্যান্স আসে। তারা আমাদের উন্নয়নের অংশীদার। সরকার নিশ্চয়ই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছে।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সরকার প্রণোদনাসহ নানা সুবিধা দিয়েছে। তারপরও অনেকে হুন্ডি বা অবৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। রেমিট্যান্সকে একটি অফিসিয়াল চ্যানেলে আনার জন্য সরকারের কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ?

আমরা বায়রার পক্ষ থেকে সব সময় যেটা বলি, খোলা বাজারে ডলারের দামটা অনেক বেশি। যারা হোয়াইট কালার চাকরি করেন, তারা কতটা রেমিট্যান্স পাঠান সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। কিন্তু আমাদের যারা সাধারণ কর্মী আছেন, তারাই মূলত রেমিট্যান্সটা পাঠান। তারা যদি খোলা বাজারে ডলারের দাম ৫ থেকে ৮ টাকা বেশি পায়, তারা তো সেদিকেই ঝুঁকবে। এখন প্রণোদনা সেটা কাভার করে না। দ্বিতীয় বিষয় হলো, ইউরোপ থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রচুর অবৈধ শ্রমিক রয়েছেন। মালদ্বীপে ৬০ ভাগ অবৈধ শ্রমিক। এই অবৈধ শ্রমিকদের পক্ষে তো বৈধ পথে টাকা পাঠানো সম্ভব না। কারণ ওই সব দেশে ব্যাংকে টাকা পাঠাতে গেলেই তো আইডি চাইবে। সেটা তো তাদের নেই। ফলে আমরা যেটা মনে করি, বৈধ চ্যানেলে সেবাটা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। হুন্ডি ওয়ালারা তো বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকাটা পৌঁছে দিয়ে আসছে। কিন্তু ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে গেলে একজন শ্রমিকের একটা দিন নষ্ট হয়ে যায়। এখন সরকার যদি এমন কোনো অ্যাপ তৈরি করতে পারে, সেটা দিয়ে শ্রমিক ঘরে বসেই টাকা পাঠাতে পারবে, তাহলে কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

বিমানবন্দরে শ্রমিকরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। মালপত্র খোয়া যায়। তাদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ অগ্রাধিকার সেবা চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। এ ব্যাপারে আপনাদের কোনো প্রস্তাবনা আছে ?

আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি। সুশীল সমাজের পক্ষ থেকেও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। তবে আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এই ধরনের হয়রানি অনেক কমেছে। আমি বলবো, ৭০ থেকে ৮০ ভাগ হয়রানি কমে গেছে। এখন অনেক বেশি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। হেল্পডেস্ক খোলা হয়েছে। একটা অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আর নতুন টার্মিনাল চালু হলে ব্যাগেজ হয়রানি থেকে শুরু করে অভিযোগ জিরো পর্যায়ে চলে আসবে।

সমীর কুমার দে (ঢাকা)।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান