1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপে ডেঙ্গু

দেবারতি গুহ২৭ নভেম্বর ২০১২

দীর্ঘ ২০ বছর পর আবারো ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী মশার সংক্রমণে ব্যতিব্যস্ত ইউরোপ৷ পর্তুগালে ইতিমধ্যেই অন্তত ১,৩৫৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত৷ আর এবার, ডেঙ্গু মশার খোঁজ নাকি পাওয়া গেছে আমাদের এই বন শহরেও৷

https://p.dw.com/p/16qKY
ছবি: picture-alliance/dpa

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর৷ এই জ্বরের লক্ষণ অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো৷ অনেক সময় এক সপ্তাহের মধ্যেই ভালো হয়ে যায় এই অসুখ৷ কিন্তু কখনও আবার এর পরিণতি হয় মারাত্মক৷ সাদা-কালো, ছিট ছিট – এক কথায় দেখতে সুন্দর ‘এডিস' মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের একমাত্র বাহক৷ এই মশার কামড়েই ডেঙ্গু ছড়ায়৷ তাও আবার সাধারণত দিনের বেলায়, ভোরের দিকে কামড়ায় এই মশা৷

সারা বিশ্বে প্রতি বছর কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ মানুষ মারা যায় ডেঙ্গু জ্বরে৷ যদিও জার্মানির হামবুর্গ শহরের ট্রপিক্যাল মেডিকাল ইন্সটিটিউটের ইওনাস শ্মিড জানান, ‘‘আসল সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি হবে৷''

বলা বাহুল্য, এই জ্বর মানুষের জন্য ভয়ানক৷ বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ডেঙ্গু একটি আতঙ্কের নামই বটে৷ আর এবার এই আতঙ্ক এসে পৌঁছেছে ইউরোপেও৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংগঠন জানিয়েছে এই তথ্য৷

পর্তুগালের মাদেইরা দ্বীপে প্রায় ৬৬৯ জনের রক্তে এই ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে৷ এঁদের সকলেই সেখানে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন৷ অর্থাৎ, সকলেই ছিলেন পর্যটক৷ এঁদের মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন এবং পর্তুগালের মানুষ ছিলেন বলে জানিয়েছে মাদেইরার স্বাস্থ্য দপ্তর৷

Freilassung von genetisch modifizierten Dengue Mosquitos
চলছে ডেঙ্গুর টিকা আবিষ্কারে পরীক্ষাছবি: Imprensa/MOSCAMED

শোনা যাচ্ছে, বিজ্ঞানীরা ইউরোপে ডেঙ্গু সংক্রমণকারী এই মশার নাম দিয়েছেন ‘এশিয়ান বুশ মসকিটো'৷ গত সোমবার জার্মানির ফ্রিডরিশ ল্যোফলার ইন্সটিটিউট জানায় যে ইতিমধ্যেই জার্মানির বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ, রাইনলান্ড প্যালেটিনেট এবং নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ায় এই মশার আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করা গেছে৷ এমনকি বন শহর, তার আশেপাশের এলাকা থেকে শুরু করে কোলন পর্যন্ত বিস্তার করেছে এই ‘বুশ মসকিটো'-রা৷ তাই ধীরে ধীরে হলেও, একটা হাল্কা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ইউরোপে৷ দক্ষিণ এশিয়ায় ডেঙ্গু নতুন কোনো অসুখ নয়, কিন্তু জার্মানিতে এর নাম শুনে অবাক হচ্ছেন অনেকে৷ প্রশ্ন করছেন এর লক্ষণ নিয়ে৷ তার উত্তরে আমাদের ফিরে যেতে হয়েছে সেই দক্ষিণ এশিয়াতেই৷

বাংলাদেশে হরদমই ডেঙ্গু নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছেন ডাক্তার আহমাদ হাবিব৷ তাই তাঁর কাছেই প্রশ্ন রাখি ডেঙ্গুর লক্ষণগুলি নিয়ে৷ তিনি জানান, ‘‘জ্বর হয়৷ একটু দুর্বল করে দেয় শরীর৷ ব্যথাও হয়৷ এছাড়া ‘ডিহাইড্রেশন' হয়৷ এর জন্য পানিটা একটু বেশি খেতে হবে৷ আর যদি হেমোরেজিক টাইপ ডেঙ্গু হয়, তবে সেটা খুব খারাপ৷ এতে ‘ব্লিডিং' হয়৷ রক্তচাপ কমে যায়৷ শকে চলে যায় রোগী৷ এবং মারাও যেতে পারে, যদি না ঠিকমতো চিকিৎসা হয়৷''

শুধু জ্বর আর গায়ে ব্যথাই নয়, তার সঙ্গে বমি বমি ভাব এবং শরীরে হামের মতো দানা বের হওয়ার কথাও বলেন ডা. হাবিব৷ তবে এগুলি হয় চার-পাঁচ দিন পর থেকে৷ আর এমনটা হওয়ার আগেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷ বলেন এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হবে ও রাখতে হবে সম্পূর্ণ বিশ্রামে৷ খাওয়াতে হবে প্রচুর পানি এবং তরল খাবার৷ আর রোগী যদি মারাত্মক হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়, তাহলে তাকে অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷ ডা. হাবিব বলেন, ‘‘আসলে ডেঙ্গু ভাইরাস ‘পজিটিভ' হলেই বার বার রক্ত পরীক্ষা করা প্রয়োজন৷ দিনে দু'বার করে রক্তের ‘প্লেটলেট'-টা নীচে নেমে যাচ্ছে কিনা – সেটার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ এটা সাধারণত দেড় লাখ থেকে তিন লাখ পর্যন্ত থাকে৷ এখন সেটা যদি ৪০ হাজারের নীচে নেমে যায়, তাহলে সেটা মারাত্মক৷ তাই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷''

Flash-Galerie Pakistan Lahore Denguefieber
সারা বিশ্বে প্রতি বছর কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ মানুষ মারা যায় ডেঙ্গু জ্বরেছবি: DW

সম্প্রতি অবশ্য জিন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ডেঙ্গু জ্বর দমন করার চেষ্টা চলছে ব্রাজিলে৷ ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী মশাগুলো যাতে বংশবিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে৷

‘অক্সিটেক' নামে একটি ব্রিটিশ কোম্পানির গবেষকরা জিন পরিবর্তন করে এক ধরণের মশা তৈরি করেছেন৷ এই জাতীয় পুরুষ মশাগুলি বেঁচে থাকার উপযোগী বংশধর সৃষ্টি করতে পারে না৷ ডিম থেকে শূককীট হওয়ার পর পরই তা মরে যায়৷ তাই পরিবেশে এগুলি ছড়িয়ে দিলে সেগুলি এডিস মশাদের বংশবৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম হবে – এমনটা মনে করছেন সাঁও পাউলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানীরা৷

শুধু ব্রাজিলই নয়, ফরাসি ওষুধ তৈরি কোম্পানি সানোফি এসএ-ও অনেক দিন ধরে ডেঙ্গুর টিকা আবিষ্কারের জন্য কাজ করে আসছে৷ সম্প্রতি থাইল্যান্ডে তাদের এই টিকার পরীক্ষা বেশ সফলতা এনেছে৷ গত ২৫ জুলাই তারা জানিয়েছে যে তাদের প্রস্তুত টিকা ডেঙ্গুর চার ধরণের ভাইরাসের মধ্যে তিনটির বিরুদ্ধেই কার্যকর৷

স্বাভাবিকভাবেই, নতুন এই খবরটি রোগী এবং চিকিৎসকদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চার করেছে৷ ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে আরো জোরদার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য