1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জিন প্রযুক্তি

২৫ আগস্ট ২০১২

ব্রাজিলে জিন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ডেঙ্গু জ্বর দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী মশাগুলো যাতে বংশ বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে এখন৷

https://p.dw.com/p/15waY
ছবি: picture-alliance/dpa

ট্রপিক্যাল অঞ্চলের জ্বর, ডেঙ্গু৷ এই জ্বরের লক্ষণ অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো৷ অনেক সময় এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায় এই অসুখ৷ কিন্তু কখনও কখনও এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে৷ সারা বিশ্বে প্রতি বছর পাঁচ লক্ষ মানুষ মারা যায় ডেঙ্গু জ্বরে৷ গত কয়েক দশকে এই রোগটি দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে৷ ইউরোপও নিস্তার পায়নি এই অসুখের হাত থেকে৷ ২০১০ সালে শুধু জার্মানিতেই ৬০০ বেশি সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে৷ রোগীরা বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু জ্বরে সংক্রমিত হয়েছিলেন৷

হামবুর্গ শহরের ট্রপিক্যাল মেডিক্যাল ইন্সটিটিউটের ইওনাস শ্মিড জানান, ‘‘আসল সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি হবে৷ অন্তত ১০ গুণের মতো তো হবেই৷''

সুন্দর হলেও ভয়ংকর

সাদা কালো ছিট ছিট মশাগুলি দেখতে বেশ সুন্দর৷ কিন্তু এই প্রাণীগুলি বহু ধরনের ভাইরাস বহন করে৷ বিশেষ করে ইয়েলো ফিভার বা পীতজ্বরের বাহক এই মশা৷ এই জ্বর মানুষের জন্য ভয়ানক৷ ১৮৯৮ সালে স্পেন ও অ্যামেরিকান যুদ্ধে শত্রুর অস্ত্রের চেয়ে এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বেশি সেনা মারা গেছেন৷ ইতিমধ্যে অবশ্য ইয়েলো ফিভার প্রতিরোধী টিকা বের হয়েছে৷ কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিষেধক কোনো ওষুধ বের হয়নি এখনও৷ কীটনাশক দিয়ে ডেঙ্গুর মশা দমনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে৷ ব্রাজিলে তাই বিশেষ প্রচারণা শুরু হয়েছে৷ জনগণকে বলা হচ্ছে, গাড়ির চাকা এখানে সেখানে ফেলে না রাখতে, যে সব টয়লেট সচরাচর ব্যবহার করা হয় না, সেগুলি ভালো করে ধুতে৷ এছাড়া পানি আদৌ জমিয়ে না রাখতে৷ কেননা এসব জায়গাতেই মারাত্মক মশার ডিমগুলি বেড়ে উঠতে থাকে৷ এক চামচ পানি মশার ডিম পারার জন্য যথেষ্ট৷

অক্সিটেক নামে এক কোম্পানির ব্রিটিশ গবেষকরা জিন পরিবর্তন করে এক ধরনের মশা তৈরি করেছেন৷ এই জাতীয় পুরুষ মশাগুলি বেঁচে থাকার উপযোগী বংশধর সৃষ্টি করতে পারে না৷ ডিম থেকে শূককীট হওয়ার পর পরই তা মরে যায়৷

অক্সিডেক মালয়েশিয়ার এই নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সফল হয়েছে৷ ২০১১ সালে ব্রাজিলের একটি জৈব কারখানা এই প্রকল্পে যোগ দেয়৷ ব্রাজিলের রাজ্য বাহিয়ায় ডেঙ্গুজ্বর এতটাই বিস্তৃত, যা বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না৷

সেন্ট পাউলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী মার্গারেথ কাপুরো এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ব্রাজিলই হলো প্রথম দেশ, যা এত ব্যাপক আকারে জিন পরিবর্তন করা মশা তৈরি করে লাগিয়েছে৷''

Tigermücke
অদূর ভবিষ্যতে জিন পরিবর্তন করা ৪০ লক্ষ মশা ছাড়া হবেছবি: picture-alliance/dpa

এখানে প্রতি সপ্তাহে সাড়ে পাঁচ লক্ষের মতো জিন পরিবর্তন করা মশাকে শহরের দুই বসতিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, যাতে সাফল্য দেখা গেছে৷ ছয় মাস পরে গবেষকরা লক্ষ্য করেন যে, মশার বংশ বিস্তার ৯০ শতাংশ কমে গেছে৷

অভিযান চলবে

অদূর ভবিষ্যতে জিন পরিবর্তন করা ৪০ লক্ষ মশা ছাড়া হবে৷ ব্রাজিলের অন্যান্য স্থানকেও মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ শুরুতে ৮০ হাজার জনঅধ্যুষিত শহর জাকোবিনায় চলবে অভিযান৷ শুধু পুরুষ মশাগুলিকেই ছেড়ে দেয়া হবে৷ এগুলি হুল ফোটাতে পারে না এবং শরীরে বহন করে মারণ জিন, অর্থাৎ বাঁচার মত বংশধর সৃষ্টি করতে পারে না৷

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ শ্মিড কানাসিট অবশ্য এই উদ্যোগটির ব্যাপারে সন্দিহান৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী মশা ব্রাজিলে কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান এবং ইতিমধ্যে এটি সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ নিয়েছে৷ এছাড়া জিন প্রযুক্তির প্রভাবটা প্রকৃতিতে যে কীরকম হবে, তাও বলা যায় না৷''

এই ভাইরাসবিদ, বিশেষ করে ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি কতটা সাফল্য বয়ে আনবে, সে ব্যাপারেও সংশয় প্রকাশ করেন৷ তাঁর মতে, ‘‘ভাইরাসটি অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এবং অন্যান্য মশাতেও আস্তানা গাড়তে পারে৷''

জীববিজ্ঞানী মার্গারেথ কাপুরো অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন৷ তাঁর মতে, ‘‘এই ভাইরাস পরিবর্তিত হবে বা ব্যাপকভাবে অন্য মশায় বাসা বাধবে, সে সম্ভাবনা প্রায় শূন্য বললেই চলে৷''

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ শ্মিট কানাসিট জিন পরিবর্তন করা প্রাণী প্রকৃতিতে ছাড়ার ব্যাপারে কিছুটা সন্দিহান হলেও এই পদ্ধতির ফলাফলটা জানতে আগ্রহী৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এই প্রকল্প সফল হলে অন্যান্য দেশে ম্যালেরিয়ার মতো অসুখ বিসুখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রয়োগ করা যাবে এটি৷''

প্রতিবেদন: লুইজা ফ্রাই ইয়ান ডি ভাল্টার / আরবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য