1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান সাংসদদের জীবনযাত্রা সহজ নয়

২০ সেপ্টেম্বর ২০১২

জার্মানিতে সংসদ সদস্যদের জীবনযাত্রা মোটেই সহজ নয়৷ সংসদ বর্জনের কোনো রীতিও এ দেশে চালু নেই৷ এক সাংসদের লেখা বই সংসদের অন্দরমহলের অনেক সমস্যা প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে৷

https://p.dw.com/p/16BlK
ছবি: picture-alliance/dpa

রাজনীতির বেড়াজাল

রাজনীতির জগতে একবার পা দিলে আর রক্ষা নেই৷ সমালোচনার ভয় পেলে চলবে না৷ চারিদিক থেকে চাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখতে হবে৷ মোটকথা সবাইকে সন্তুষ্ট করা বা রাখা একেবারেই অসম্ভব বলা চলে৷ জার্মানির সংসদের নিম্ন কক্ষ ‘বুন্ডেসটাগ'এর কথাই ধরা যাক৷ সেখানে ব্যস্ততার শেষ নেই৷ সংসদ বর্জনের কোনো রীতি এ দেশে চালু নেই৷ তাই যখনই অধিবেশন বসবে, তার একটা বড় সময় ধরে উপস্থিতি চাই৷ প্রায় পনেরো মিনিট পর পর নতুন কাজ৷ সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও আলোচনায় অংশ নিতে হয়৷ গুরুত্বপূর্ণ ভোটাভুটির সময় হাজির থাকতেই হয়৷ বিভিন্ন বিষয়ে নথিপত্র জমে আছে, অন্তত চোখ বুলিয়ে নিতেই হবে৷ আছে নিজের সংসদীয় কেন্দ্রের মানুষের ই-মেল, নানা অনুরোধ উপরোধ৷

এক সাংসদের কাহিনি

সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের সাংসদ মার্কো ব্যুলো গত প্রায় ১০ বছর ধরে সংসদ সদস্য৷ তিনি জানালেন, দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়৷ তাঁর মতে, যত দিন যাচ্ছে, সংসদের কাজকর্মের গতি ততই বাড়ছে৷ দ্রুত নতুন নতুন আইন অনুমোদন করা হচ্ছে, রাজনৈতিক কৌশল স্থির করা হচ্ছে৷ ফলে ধীরে সুস্থে কোনো আইনের খসড়া নিয়ে বেশি ভাবনা-চিন্তার অবকাশ নেই৷

কথাটা ভুল নয়৷ বুন্ডেসটাগ'এর আনুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী বিগত সংসদের আমলে প্রায় ১,০০০ আইন অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এবং প্রায় ১৪,০০০ নথিপত্র প্রকাশ করা হয়েছিল৷ মার্কো ব্যুলো বিষয়টি স্পষ্ট করে বললেন, ‘‘আমি সব বুঝতে পারছি, সবকিছু আমার নিয়ন্ত্রণেই আছে – কোনো সাংসদ এমন দাবি করলে বুঝবেন, ডাহা মিথ্যা কথা৷ এবং কাজ বেড়েই চলেছে৷ গত ১০ বছর ধরে আমি সংসদে রয়েছি৷ এর মধ্যে কাগজপত্রের স্তূপ বেড়েই চলেছে৷''

সাংসদ হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আস্ত একটা বই লিখে ফেলেছেন ব্যুলো৷ খোলামেলা ভাষায় তিনি এমন সব কথা লিখেছেন, যা কোনো সাংসদ সহজে স্বীকার করবেন বলে মনে হয় না৷ তাঁর মতে, বর্তমান ব্যবস্থায় এত কাজের চাপ সামলানো মুশকিল৷ এমনকি এর ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়, ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিপদ বেড়ে যায়৷

Merkel Bundestag nach ESM Entscheidung
ছবি: Reuters

সংসদের নেপথ্য বাস্তব

রীতি অনুযায়ী কোনো আইন সরাসরি সংসদের মূল অধিবেশনে পেশ করা হয় না৷ বিভিন্ন কমিটি প্রথমে খসড়া প্রস্তুতির কাজ করে৷ কমিটিতে এমন সাংসদদের পাঠানো হয়, যাঁর সেই বিশেষ বিষয়ে পারদর্শী৷ কিন্তু সেখানেও একই সমস্যা৷ আইনের খসড়া খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদেরও যে সময়ের প্রয়োজন, বেশিরভাগ সময়ে তাও তারা পান না৷ তখন বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ এনে তাদের মতামত শোনা হয়৷

গত কয়েক বছরে এই বহিরাগতদের মধ্যে বিভিন্ন ‘লবি গ্রুপ'এর প্রতিনিধি বেড়ে গেছে, যারা কোনো না কোনো শিল্প বা বাণিজ্য শাখার স্বার্থ তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷ সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই৷ এই সব বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য পরীক্ষা করার জন্যও চাই কিছুটা সময়৷ মার্কো ব্যুলো'র অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত লবি গ্রুপের প্রতিনিধিদের কথাই শেষ কথা হিসেবে মেনে নেওয়া ছাড়া অনেক সময় সাংসদদের সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকে না৷

দায়বদ্ধতার ফাঁস

জার্মানির সাংসদরা যে নিজের মনে কাজ সামলে যাবেন, তারও উপায় নেই৷ সাধারণ সংবাদ মাধ্যমে সব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে তেমন আগ্রহ না থাকলেও রয়েছে বিশেষ একটি ওয়েবসাইট৷ সেখানে প্রত্যেক সাংসদের কার্যকলাপের উপর নিয়মিত কড়া নজর রাখা হয়৷ ওয়েবসাইটের মুখপাত্র গ্রেগর হাকমান'এর বক্তব্যের মধ্যেও মার্কো ব্যুলো'র অভিজ্ঞতার প্রতিফলন শোনা যায়৷ তিনিও সাংসদদের সময়ের অভাব ও বহিরাগতদের উপর নির্ভরশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ বিশেষ করে বিভিন্ন সংসদীয় দলের কাছে নানা বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য এক শ্রেণির কর্মী রয়েছেন৷ তাদের তালে তাল মিলিয়েই বেশিরভাগ সাংসদ সিদ্ধান্ত নেন বলে হাকমান মনে করেন৷

প্রক্রিয়াগত সমাধানসূত্র

এত কাজের বোঝা লাঘব করতে আজকাল অনেক সিদ্ধান্ত সামান্য কয়েকজন সাংসদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে৷ এইভাবে কাজ ভাগ করে নেওয়া হচ্ছে৷ সবাইকে সব বিষয়ে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে না৷ ফলে সংসদের মোট ৬২০ জন সদস্যদের বদলে অনেক ক্ষেত্রে মাত্র ২৫ জন কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যাদের মধ্যে সব দলের প্রতিনিধিই থাকেন৷ শর্ত হলো, সংসদে দলের শক্তির অনুপাতেই তাদের ক্ষমতা সীমিত থাকবে৷ ‘পেয়ারিং' নামের এই রীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ তেমন সচেতন নয়৷ তবে এভাবে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে তখন সবার টনক নড়ে৷

যুগ যে বদলে গেছে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন রক্ষণশীল সিডিইউ দলের সাংসদ পেটার গ্যোৎস৷ বিগত ২০ বছর ধরে সংসদ সদস্য তিনি৷ ইন্টারনেটের যুগে নাগরিকরা তাদের জনপ্রতিনিধির কাছে ক্রমাগত ই-মেল পাঠিয়ে চলেছেন৷ তাদের ধৈর্যও কম৷ পারলে এক দিনেই সমস্যার সমাধান চান অনেকে৷ তাদের আগেভাগে সহায়তা করতে গেলে অন্য কাজ পড়ে থাকে৷ মার্কো ব্যুলো অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার পর ‘না' বলতে শিখেছেন৷ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় না হলে তিনি কাউকে সময় দিচ্ছেন না৷ তবে জার্মান সাংসদরা বিলক্ষণ জানেন, ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বে এত দ্রুত নানা ঘটনা ঘটে চলেছে, যে ধীরে সুস্থে সিদ্ধান্ত নেবার যুগ আর কোনোদিন ফিরে আসবে না৷

প্রতিবেদন: ভল্ফগাং ডিক / এসবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য