1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইন্টারনেটে ট্রমা নিরাময়

নাওমি কনরাড/আরবি১৬ আগস্ট ২০১৪

আতঙ্ক, নির্যাতন, মৃত্যু: যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের কুড়েকুড়ে খায় এ সব৷ বার্লিনের কয়েকজন থেরাপিস্ট সিরিয়া ও গাজার ভেঙে পড়া মানুষদের ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাহায্য করে থাকেন৷

https://p.dw.com/p/1Cukn
Palästinenser Israel Gaza Frau nach Luftangriff in Gaza City
ছবি: picture-alliance/dpa

তাঁদের দুঃখ কষ্টের অংশীদার হন নিজেরাও৷ বার্লিনের একটি চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে নির্যাতনের শিকার মানুষদের সাহায্য করা হয়ে থাকে৷ থেরাপিস্ট জিয়াদ মুসা ই-মেলের মাধ্যমে তাঁদের যন্ত্রণা লাঘবের চেষ্টা করেন৷ পাশের ঘরে বাচ্চাদের কলকাকলি শোনা যায়৷ এই কেন্দ্রে সেইসব শরণার্থীদেরও চিকিত্সা দেওয়া হয়, যাঁরা ট্রমা বা প্রচণ্ড মানসিক আঘাত নিয়ে জার্মানিতে এসেছেন৷

আরো চারজন আরব সহকর্মীর সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৮০ জন মানুষের চিকিত্সা করে থাকেন থেরাপিস্ট জিয়াদ মুসা৷ সিরিয়া, গাজা, ইরাক, জর্ডান কিংবা তুরস্ক থেকে ভুক্তভোগীরা ই-মেলের মাধ্যমে তাঁদের ব্যথা বেদনার কথা জানান৷ মুসাও মেল করে তাঁদের যন্ত্রণা উপশম করার চেষ্টা করেন৷

Pirko Selmo EINSCHRÄNKUNG
থেরাপিস্ট জিয়াদ মুসাছবি: privat

রোগীরা অপরিচিত

রোগীদের নাম ধাম জানেন না তিনি৷ এ সব তাঁর কাছে অপ্রাসঙ্গিক৷ ‘‘আসাদ সরকার কিংবা হামাসের সমর্থক, তিনি যেই হোন না কেন, আমরা তা নিয়ে মাথা ঘামাই না'', জানান মুসা৷

মাস কয়েকের মধ্যে গাজা থেকে বহু রোগী তাঁদের ইন্টারনেট পোর্টালে তালিকাবদ্ধ হবেন বলে মনে করেন মুসা৷ জার্মান সরকার ও গির্জার সাহায্য সংস্থা ‘মেসেরেয়র'-এর আর্থিক সহায়তায় চলছে ইন্টারনেট প্রকল্পটি৷ তিন মাস, ছয় মাস কিংবা তারও অনেক পরে ভুক্তভোগীরা লক্ষ্য করেন, ট্রমার লক্ষণগুলি যেমন, ভীতি ও অনিদ্রা দূর হচ্ছে না৷ রকেট বিস্ফোরণ বা গুলি বর্ষণ না হলেও ঘুমাতে পারেন না তাঁরা৷ ঘিরে থাকে আতঙ্ক৷

এই রকম অনেক রোগী মুসা ও সহকর্মীদের শরণাপন্ন হন৷ প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন সুদূর বার্লিনে অবস্থানরত থেরাপিস্টের সাহায্যের আশা করেন রোগীরা? যাঁকে তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না, শুধু ই-মেলের মাধ্যমেই যোগাযোগ করতে হয়? মুসা বলেন ‘ই-মেল থেরাপি' ব্যক্তিগত পরামর্শের মতোই কার্যকর৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি সফল৷ অনেকে হয়ত কখনও থেরাপিস্টের কাছে যেতেন না৷ বিশেষ করে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার মানুষদের কাছে সংকোচটা অনেক বড়৷ এজন্য ইন্টারনেট পোর্টাল তাঁদের নাম ধাম গোপন রাখে, বলেন মনস্তত্ত্ববিদ মুসা৷ এটা অবশ্য তাঁর আসল নাম নয়৷ তাঁর রোগীরা লেখেন, ‘‘আপনার সামনে বসলে এ সব কথা বলতে পারতাম না৷ এখন আমি যা লিখছি৷''

অনেকের উপায় নেই

অনেকে অবশ্য উপায়ন্তর না দেখেই মুসা ও তাঁর সহকর্মীদের শরণাপন্ন হন৷ সিরিয়ায় যুদ্ধের কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে৷ জানান সিরিয়ার মনস্তত্ত্ববিদ সোভ৷ জার্মানিতে বসবাস করছেন তিনি৷ কয়েক মাস আগেও ট্রমায় আক্রান্ত বাচ্চাদের কিছুটা সহায়তা দেওয়ার জন্য সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অঞ্চলে যাতায়াত করতেন তিনি৷ কিন্তু এখন অঞ্চলটি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে৷ অনেক অ্যাকটিভিস্ট নিখোঁজ হয়েছেন৷ নিহত হয়েছেন অনেকে৷ মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত বাচ্চাদের থেরাপি না দেওয়া হলে আতঙ্ক, আক্রমণাত্মক মনোভাব, মনোযোগের অভাব ইত্যাদি মানসিক সমস্যা গেড়ে বসতে পারে৷

Gaza Bombardierung Israel Raketen
যুদ্ধের কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছেছবি: picture alliance/dpa

খালিদ নামে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত একটি সাত বছরের ছেলের কথা ভুলবেন না সোভ৷ এক সময় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবী গানে জোরেসোরে অংশ নিয়েছে সে৷ কিন্তু বোমা ও রকেটের হামলায় ভাষা হারিয়ে ফেলে খালিদ৷ ‘‘আজ কোনো শব্দই বলতে পারে না সে'', বলেন সোভ৷

মানসিক দিক দিয়ে সম্পৃক্ত

প্রতিদিন এতো দুঃখ কষ্ট কী ভাবে সহ্য করেন? এই প্রশ্নের উত্তরে জিয়াদ মুসা জানান, ‘‘এটা আমার নিজের কাজেরও অংশ৷'' মানসিক সম্পৃক্তি না থাকলে কোনো থেরাপি দেওয়া সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে৷ মুসা এসেছেন সিরিয়া থেকে৷ তাঁর পরিবার সেখানে বসবাস করেন৷ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক বন্ধু-বান্ধব নিখোঁজ হয়েছেন৷ মুসা খুব ভালোভাবেই জানেন তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটে থাকতে পারে৷ সেই ভয়াবহতা ও আতঙ্ক তাঁর অজানা নয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য