1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোর মূল্যমান কমছেই

হাফসা হোসাইন৩১ অক্টোবর ২০০৮

অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইউরোর দরপতন হচ্ছে ক্রমশ৷ ডলারের বিপরীতে দিন দিনই এর মূল্যমান কমছে৷ কিন্তু ইউরোর মূল্যহ্রাসের প্রভাব নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত জানাচ্ছেন অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকরা৷

https://p.dw.com/p/FlAQ
ডলারের বিপরীতে দিন দিনই ইউরোর মূল্যমান কমছেছবি: picture-alliance/ dpa

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, গত আড়াই বছরের মধ্যে ডলারের বিপরীতে ইউরোর যে এই মূল্যহ্রাস তার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে না৷ এর ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর রপ্তানি বাণিজ্য আরো গতি পাবে৷ কিন্তু বিশ্লেষকদের আরেক দল বলছেন, ইউরোর মূল্যহ্রাস ইউরো মুদ্রা প্রচলিত ১৫টি দেশ অর্থাত্‌ইউরো অঞ্চলেই গভীর প্রভাব ফেলবে৷

Russland Finanzkrise Börse in Moskau Kurse
বর্তমান সংকটের কারণে জার্মান বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে অনেকছবি: AP

এই সপ্তাহের মাঝামাঝিতে ইউরোপীয় বাজারে ১ দশমিক দুই তিন মার্কিন ডলারে ইউরো বেচাকেনা হয়৷ ২০০৬ সালের এপ্রিলের পর ডলারের বিপরীতে এটিই ইউরোর সর্বনিম্ন দাম৷ জাপানী ইয়েনের বিপরীতে পড়ে গেছে ইউরোর দাম৷ শুধু তাই নয় বিশ্ব বাজারে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ১৬টি মুদ্রার মধ্যে ১৪টির বিপরীতেই কমেছে ইউরোর মূল্য৷

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউরোপীয় অর্থনীতির মন্দাভাব সম্পর্কে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমাতে পারে এমন ধারণার কারণেই ইউরোর এই ব্যাপক দরপতন ঘটেছে৷

জার্মান অর্থনীতিবিদ অগনিয়ান হিশোর মতে, মুদ্রার লেনদেনের মূল্যটা কেবল অর্থনীতির সঙ্গেই জড়িত নয় এখানে রাজনৈতিক কৌশলের বিষয়টিও চলে আসে৷ তিনি বলেছেন, যখন কোন অর্থনৈতিক শক্তিতে মন্দাবস্থা চলতে থাকে, এখন যেমনটা চলছে ইউরো অঞ্চলে, তখন বিকল্প কোন জায়গায় অর্থটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে সবাই৷ স্বাভাবিকভাবেই ইউরোর বিকল্প হিসেবে এখন ডলারের দিকেই সবাই ঝুঁকবে৷

ইউরোর দরপতনের কারণে ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে মনে করেন জার্মান চেম্বার অব কমার্সের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্দ্রা বোয়েনে৷ তাঁর আশংকা, কি করে এই গভীর সংকট থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে তা কেউই জানে না৷

আলেক্সান্দ্রা বলেছেন, গত বছর থেকেই মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা চলায় সেখানকার অর্থনীতিবিদরা সংকট কাটিয়ে উঠার বিষয়টি বুঝতে পারছেন৷ কিন্তু ইউরোপে এই সংকট একেবারেই নতুন৷ মাত্র ক মাস হলো ইউরোপীয়রা সংকটটা সনাক্ত করতে পেরেছে৷ এই মুহুর্তে ইউরোপের বাজার খুবই অনিশ্চিত৷

সম্প্রতি এক রিপোর্টে দেখা গেছে, বর্তমান সংকটের কারণে জার্মান বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে অনেক৷ গত ৫ বছরের মধ্যে বর্তমানে তাদের আস্থার মাত্রা সবচেয়ে কম৷ এ অবস্থায় ইউরোপের চেয়ে মার্কিন বাজারকে বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা৷

তবে বর্তমান এই সংকটেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন কেউ কেউ৷ ইউরোর দাম কমে যাওয়ায় জার্মানির অটোমোবাইল এবং রাসায়নিক পণ্যের রপ্তানি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ৷ কারণ, কম দামে এসব পণ্য কিনতে পারবে অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ৷

কিন্তু এই বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন অর্থনীতিবিদ হিশো৷ তাঁর প্রশ্ন, যেখানে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিরই টালমাটাল অবস্থা তখন জার্মান পণ্য আমদানি করবে কারা?

এদিকে জার্মান ইনসটিটিউট ফর ইকোনোমিক্স রিসার্চ-এর অর্থনীতিবিদ ক্রিস্চিয়ান ড্রেগার অবশ্য বলছেন, ইউরোর দরপতনটা সাময়িক৷ কারণ, ২০০২ সালে যখন ইউরো চালু হয় তখন এর দাম ছিলো ডলারের চেয়ে অনেক কম৷ ইউরোর মূল্যমান হ্রাস পেলেও এখনও ডলারের বিপরীতে এর অবস্থান অনেক শক্ত৷ তবে চলমান মন্দা কাটানোর জন্য চীন এবং ভারতের বাজার ধরতে পারলে ইউরোপীয় অর্থনীতি শিগগিরই চাঙ্গা হবে বলে আশা করছেন তিনি৷

সর্বোপরি মন্দা কাটানোর জন্য মতানৈক্য আর বিভেদ ভুলে ইইউভুক্ত সব দেশের এক হয়ে কাজ করার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা৷