1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইইউ’র রাজনৈতিক চরিত্রও কি বদলে যাচ্ছে?

৩০ অক্টোবর ২০১১

ইউরো মুদ্রাকে ঘিরে সংকটের ক্ষেত্রে শুধু চুলচেরা হিসেবের কথা শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু এর ফলে কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনৈতিক চরিত্রও বদলে যাচ্ছে?

https://p.dw.com/p/131q3
প্রতীকী ছবিছবি: dapd

২৭টি দেশ, একটি রাষ্ট্রজোট৷ শুধু খোলা বাজার নয়, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যরও আরও অনেক বিষয় একই সূত্রে বেঁধে রেখেছে এই দেশগুলিকে৷ তবে কথায় বলে, ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না৷' কয়েক'শো বছর ধরে যুদ্ধবিগ্রহের পর ইউরোপে স্থায়ী শান্তির গ্যারেন্টি দিয়ে চলেছে যে রাষ্ট্রজোট, তার উপকারিতা সম্পর্কে মানুষ আজ বড়ই উদাসীন৷ অভূতপূর্ব এই পরীক্ষা নিরীক্ষার অর্জন সম্পর্কে সন্তুষ্ট না হয়ে পদে পদে খুঁত ধরতেই ব্যস্ত বেশিরভাগ মানুষ৷ এরই মধ্যে চলছে অভিন্ন মুদ্রা ইউরোকে ঘিরে সংকট৷ যে ১৭টি দেশে ইউরো চালু আছে তাদের সরকার তো বটেই, বাকিরাও আশঙ্কায় ভুগছে এই সংকটের কারণে৷ পারস্পরিক নির্ভরতা আজ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যে সংকটের এই দুর্দিনে মাথা গরম করে ফেলছেন সদস্য দেশগুলির নেতারা৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের চালিকা শক্তি বলে পরিচিত দেশ জার্মানি ও ফ্রান্স৷ এই দুই দেশের শীর্ষ নেতারাই রাষ্ট্রজোটের চালকের আসনে বসে আছেন৷ বাকিরা কমবেশি তাদের অনুসরণ করছে৷ ইউরো এলাকার ১৭টি দেশ আবার আরও নিবিড়ভাবে পরস্পরের সঙ্গে জড়িত৷ বাকি ১০টি দেশের দুশ্চিন্তা মূলত নিজেদের অর্থনীতি নিয়ে৷ ফলে স্বার্থের সংঘাত অনিবার্য৷ তাই অনেকের মনেই আশঙ্কা জাগছে, যে বর্তমান আর্থিক সংকটের রাজনৈতিক পরিণাম কি ইইউ'র জন্য ক্ষতিকর হতে চলেছে?

জার্মানি ও ফ্রান্স'এর শক্তিশালী অবস্থান ও তাদের নেতৃত্বের দাবি সম্পর্কে খোলাখুলি বিরোধিতা না দেখা গেলেও অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলির অসন্তোষ কোনো গোপন বিষয় নয়৷ চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও প্রেসিডেন্ট সার্কোজি যখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ইইউ'র হয়ে কোনো ঘোষণা করেন, সবার পক্ষে তা হজম করা সহজ হয় না৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রুডলফ হ্রবেক এপ্রসঙ্গে বললেন, এর ফলে অবশ্যই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়৷ একে ঠিক সন্দেহ বা সংশয় বলা চলে না, তবে এটা ঠিক যে ছোট দেশগুলিতে এর ফলে মোটেই উৎসাহ দেখা যায় না৷ তাদের ভয় হয়, যে তাদের যেন নাবালক মনে করে বড়রা তাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছে৷ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তাদের ঘাড়ে সেগুলি শুধু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷

EU-Gipfel Angela Merkel Nicolas Sarkozy FLASH-GALERIE
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজিছবি: picture alliance/dpa

অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী এই দুই রাষ্ট্রের মতামত যে বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন আরেক অধ্যাপক, এমানুয়েল রিশটার৷ তাঁর যুক্তি হলো, শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছোট-বড় সব দেশেরই মতামতেরই দাম আছে৷ তিনি বললেন, ইউরোপের দেশগুলি চিরকালই নিজেদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে এসেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নিজেদের সুবিধা বজায় রাখতে ও নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে তারা সবসময়ে সচেষ্ট৷ আসলে এখনো পর্যন্ত স্বার্থের তেমন কোনো বড় সংঘাত দেখা যায় নি বলে এই বিষয়টি তেমন স্পষ্ট হয়ে ওঠে নি৷

এটাও মনে রাখতে হবে যে অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশগুলি শুধু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় খবরদারি করে না৷ সংকট দেখা দিলে তাদেরই আর্থিক বোঝার সিংহভাগ বহন করতে হয়৷ সেকারণেই তাদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়৷ সেকারণেই আজ ম্যার্কেল ও সার্কোজি মিলে ইটালির প্রধানমন্ত্রী ব্যার্লুস্কোনি'কে প্রকাশ্যে সাবধান করে দিতে পেরেছেন৷ ইটালিও যাতে গ্রিসের মতো চরম বেকায়দায় না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণের ডাক দিয়েছেন তাঁরা৷ সার্কোজি তো স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, যে নিজস্ব উদ্যোগ না দেখালে সহযোগী দেশের সংহতির আশা ত্যাগ করতে হবে৷ তবে বর্তমান সংকটকে ঘিরে জার্মানি ও ফ্রান্স যে বিশাল চাপের মুখে পড়েছে, তার ফলে সৌজন্যের সীমা প্রায়ই মানা হচ্ছে না৷ আজকাল এমনকি বাকিদের সঙ্গে একেবারে কোনো আলোচনা না করেই ম্যার্কেল ও সার্কোজি রাজনৈতিক দিশা স্থির করে ফেলছেন৷ আসলে সংকটের ফলে ইইউ পার্লামেন্ট বা জাতীয় সংসদগুলি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ কারণ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে কোনো বিষয়ে ভোটাভুটির সুযোগ তাদের দেওয়া হচ্ছে না৷ ক্ষমতা বেড়ে গেছে মন্ত্রী পরিষদের৷ মোটকথা ‘জোর যার, মুলুক তার' নীতিই প্রাধান্য পাচ্ছে৷ এর ফলে লিসবন চুক্তিও কার্যত লঙ্ঘন করা হচ্ছে৷ বর্তমানে সত্যিই দৃঢ়, স্পষ্ট ও সাহসী পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাঠামোর জন্য এমন অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিণাম কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে৷

প্রতিবেদন: মারলিস শাউম / সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য