1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঋণের ভার কমানোই ইউরো সংকট সমাধানের চাবিকাঠি

২৫ অক্টোবর ২০১১

গ্রিসকে ঘিরে ইউরো এলাকার সংকটের সমাধানের চেষ্টা চলছে৷ কিন্তু আসল সংকটের মূলে আঘাত করার সদিচ্ছা বা দৃঢ়তা এখনো দেখা যাচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/12xzl
অর্থনৈতিক সঙ্কটে ইউরোছবি: picture-alliance/dpa

ইউরো সংকট আসলে আদৌ রাষ্ট্রীয় ঋণের কোনো সংকট নয়৷ অর্থাৎ আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিতে যে পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হতে হবে বাজেট ঘাটতি কমানো এবং সবার শেষে ঋণের ভার কমানো৷ এখনো পর্যন্ত শুধু আগুন লাগলে তবেই তা নেভানোর চেষ্টা চলে আসছে৷ কিন্তু বেশিদিন এমনটা চলতে পারে না৷ আর্থিক বাজার কোনো দয়ামায়া না দেখিয়ে ঋণের ভারে জর্জরিত দেশগুলির দুর্বলতা বার বার তুলে ধরছে৷ একারণে আর্থিক বাজারের উপর আরও নিয়ন্ত্রণ চাপানো উচিত ঠিকই, কিন্তু এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে সেই বাজারই কিন্তু কোনো দেশের লাগামহীন আচরণ দমিয়ে রাখতে পারে৷ ফলে এমন এক অস্ত্রও অপরিহার্য৷ তাদের হাত থেকে সেই ক্ষমতা কেড়ে নিলে আসল সমস্যা কমার বদলে উল্টে আরও কঠিন হয়ে উঠবে৷ ২০০৮ সালে ব্যাংকিং সংকট সামাল দিতে একাধিক রাষ্ট্রকে আর্থিক সাহায্য দিতে হয়েছে৷ সেইসঙ্গে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেও বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়েছে৷ ফলে এক ধাক্কায় তাদের ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে৷ সেদিন সেই প্রাথমিক সংকট না দেখা দিলেও কিন্তু আজকের আর্থিক সংকট এড়ানো যেত না৷ কয়েক বছর পর সংকট ঠিকই দোড়গড়ায় এসে হাজির হতো৷

NO FLASH EU Gipfel Brüssel
ব্রাসেল্সে নেতাদের বৈঠকছবি: picture alliance/dpa

ঋণভারে গ্রিসের পর ইটালি

আসলে কঠিন বাস্তব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা আজও চলছে৷ গ্রিসকে সাহায্য করতে প্রথম যে আন্তর্জাতিক আর্থিক তহবিল গঠন করা হচ্ছিল, সেখান থেকে আরও এক কিস্তি এথেন্সে পাঠানো হচ্ছে৷ অথচ সেদেশের আর্থিক সংকটের যে হিসেবের ভিত্তিতে সেই সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা আজ একেবারেই মিলছে না৷ এমনকি সেসময়ে জোর গলায় দাবি করা হয়েছিল, যে সেই হিসেব না মিললে নতুন করে আর কোনো অর্থ দেওয়া হবে না৷ ফ্রান্স এই অবস্থায় সব দায় ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাঁধে তুলে দিতে চায়৷ যেন ইউরোর বাড়তি নোট ছাপালেই সমস্যা মিটে যাবে৷ এমন আপাত সহজ পথে এগোলে তার পরিণাম কী হতে পারে, তা ব্রিটেনের মতো ইউরো এলাকার বাইরের দেশের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে৷ সেদেশে মূল্যস্ফীতির মাত্রা আজ ৫ শতাংশেরও বেশি৷ আরও দশ বছর ধরে এমনটা চলতে থাকলে ব্রিটেনের সরকার হয়তো ঋণের ভার কমাতে সক্ষম থাকবে৷ কিন্তু সেদেশের মানুষের সঞ্চয়ের অর্থের মূল্য অর্ধেকের বেশি কমে যাবে৷ অন্যদিকে ইটালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও ব্যার্লুস্কোনি আজও নিজের দেশের ভয়ানক পরিস্থিতির মাত্রা বুঝে উঠতে পারেন নি৷ ইউরো এলাকায় ঋণভারের বিচারে গ্রিসের পরেই ইটালির স্থান৷ সেদেশের অর্থনীতিও অনেক কাল প্রবৃদ্ধির মুখ দেখে নি৷ এমন এক দেশের প্রতি সংহতি দেখানো আজকের পরিস্থিতিতে বেশ কঠিন হবে৷

Italian Prime Minister Silvio Berlusconi arrives for an EU summit in Brussels on Sunday, Oct. 23, 2011. Big banks find themselves under pressure in Europe's debt crisis with finance chiefs pushing to raise billions of euros in capital and accept huge losses on Greek bonds they hold. (Foto:Geert Vanden Wijngaert/AP/dapd)
ভয়ানক পরিস্থিতির মাত্রা বুঝে উঠতে পারেননি ব্যার্লুস্কোনিছবি: dapd

জার্মানির ভূমিকা প্রসঙ্গে ম্যার্কেল

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তির মধ্যে পরিবর্তনের সময় এসে গেছে৷ কারণ ইউরো এলাকার যেসব দেশ লাগাতার ঋণের উর্দ্ধসীমার নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে, তাদের সেই কার্যকলাপ বন্ধ করতে ব্রাসেলস'এর হাতে সরাসরি হস্তক্ষেপের ক্ষমতা দিতে হবে৷ আজ তাঁর কণ্ঠে এমন কড়া সুর শোনা গেলেও ইউরো স্থিতিশীলতা চুক্তির ক্ষেত্রে জার্মানির নিজস্ব রেকর্ডও কিন্তু মোটেই সুবিধার নয়৷ ইউরো চালু হওয়ার সময় সেদেশ ঋণের উর্দ্ধসীমার নিয়ম সম্পর্কে বেশ উদাসীনতা দেখিয়ে এসেছে৷ তারপর জার্মানিও বেশ কয়েকবার নিয়ম লঙ্ঘন করেছে৷ এমন সুবিধাবাদী অবস্থানের ফলে ভবিষ্যতে ইউরো এলাকার জন্য একজন অর্থমন্ত্রী বা ‘সুপার কমিশনার'এর মতো কোনো পদ সৃষ্টির প্রস্তাবের বিষয়েও তেমন একটা উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না৷

মাত্রাতিরিক্ত ঋণের উপর নির্ভর করে অর্থনীতি চালানোর প্রবণতা থেকে আন্তরিকভাবে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে গোটা ইউরোপেই নতুন এক যুগ শুরু হতে পারে৷ বহু দশক ধরেই সকলে রাষ্ট্রের সাফল্যের নির্দিষ্ট মাত্রা দেখতে প্রস্তুত ছিল, যার মূলে ছিল ঋণ এবং সেই ঋণ পরিশোধের জন্য আরও ঋণের বোঝা৷ উৎসবের সেই দিন এখন শেষ হয়ে গেছে৷ সাধারণ মানুষ তা অনেকদিন ধরেই বুঝতে পারছেন৷ তারা শুধু চায়, এই বোঝা ন্যয্যভাবে বণ্টন করা হোক৷ কিন্তু রাজনীতি জগত এখনো তাদের পুরানো খেলা খেলে চলেছে৷ ভোটারদের মন জয় করতে রাজনীতিকরা এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন, যা পালন করা সম্ভব নয়৷ এবার আর তাতে কাজ হচ্ছে না৷ ফলে চাপের মুখে পড়ছেন নেতারা৷ এখন শুধু আশা করা যায়, যে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে এই চাপ যথেষ্ট হবে৷

প্রতিবেদন: ক্রিস্টফ হাসেলবাখ / সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য