1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাছি থেকে সংক্রমণ

২১ জুলাই ২০১২

আফ্রিকায় এক ধরনের রক্তচোষা মাছির উত্পাতে মানুষ ও পশুর জীবন অতীষ্ঠ হয়ে উঠছে৷ এগুলি মারাত্মক জীবাণুর বাহক, যা থেকে মানুষ ও জীবজন্তু কেউ নিস্তার পায় না৷ বিজ্ঞানীরা এই ভয়ংকর প্রাণীটির হাত থেকে উদ্ধারের উপায় খুঁজছেন৷

https://p.dw.com/p/15cgX
Die Aufnahme zeigt eine Gruppe Fliegen aus der Familie Drosophilidae melanogaster, auch bekannt als Obst- oder Essigfliegen. Undatiert.
ছবি: picture-alliance/dpa

পূর্ব আফ্রিকার পর্যটকদের এক বড় আকর্ষণ মাসাই গোত্রের বেদুইনরা৷ গরুর পাল চরিয়ে বেড়ান তারা৷ তাদের খাদ্য ও আয়ের প্রধান উত্সই গবাদিপশু৷ কিন্তু শুধু খরা নয়, ক্ষুদ্র এক প্রকার মাছিও গরুগুলির জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

নাইরোবির পতঙ্গ গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী নুইয়া মানিয়ানিয়া জানান, ‘‘পতঙ্গরাও মানুষের মতো ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও ভাইরাস বহন করে ৷ কিন্তু সব জীবাণু মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়৷''

ক্ষুদ্র প্রাণীর মারাত্মক প্রভাব

বিশেষ করে একটি পতঙ্গ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তাঁর৷ যার নাম টেটসে মাছি৷ এই মাছি নাগানা রোগের বাহক৷ এই অসুখে বহু জীবজন্তু মারা যাচ্ছে৷ আফ্রিকায় প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ৩০ লাখ গরু৷ এই রোগ হলে দেখা দেয় রক্তাল্পতা, জ্বরজ্বর ভাব, দুর্বলতা, ল্যাথার্জি, ওজন হ্রাস ইত্যাদি৷ সংক্রমিত গরুরা শুধু দ্রুতই যে, মারা যায় তাই নয়, জীবাণু বহনকালে অল্প সংখ্যায় বাছুরের জন্ম দেয়, দুধও হয় কম৷ এ ছাড়া মাংসও তেমন পাওয়া যায় না অসুস্থ প্রাণীগুলি থেকে৷

কেনিয়াতে টেটসে মাছি দূর করতে নানা রকম উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু এখনও গ্রামাঞ্চলে ও জাতীয় পার্কে গবাদি পশুর অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ সেখানে সর্বত্র জীবাণুনাশক রাসায়নিক দ্রব্য ছিটানো সম্ভব নয়৷ নানা অসুখের কারণে যেমন প্রতিবছর বহু গবাদিপশু মারা যাচ্ছে, তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে দারিদ্র্যের হারও৷

সমাধানের আশা

সম্প্রতি নাইরোবিস্থ আন্তর্জাতিক পতঙ্গ গবেষণা ইন্সটিটিউট আইসিআইপিই এই সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে পেয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ আবিষ্কার করেছেন, যা ওয়াটারবাকের মতো গন্ধ ছড়ায়৷ ওয়াটারবাক আফ্রিকার এক জাতীয় অ্যান্টিলোপ, যে প্রাণীগুলি পানির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে৷ গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, গরুদের এই গন্ধের সংস্পর্শে আনলে টেটসে মাছি তাদের কামড়াতে আসে না৷ অন্তত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে কমে যায় তাদের আক্রমণ৷ নাইরোবির গবেষণা কেন্দ্রের পশুস্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের প্রধান রাজিন্দর কুমার সাইনি ৩০ বছর ধরে টেটসে মাছি নিয়ে গবেষণা করছেন৷ প্রথম দিকে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা ওয়াটারবাকগুলিকে পর্যবেক্ষণ করেন৷ তাদের চোখে পড়ে যে, নাগানা রোগবাহক মাছিরা এইপ্রাণীগুলিকে হুল ফোটাতে তেমন আগ্রহী হয় না৷ গবেষক সাইনির টিম এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ তৈরি করেছেন, যা ওয়াটারবাকের মত গন্ধ ছড়ায়৷

মাছি প্রতিরোধী গন্ধ

এই গন্ধ মেশানো চেন গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয় গরুগুলির৷ এর ফলে সংক্রমিত মাছিগুলি পশুগুলির কাছে ঘেঁষতে চায় না৷ ড. সাইনি বলেন, ‘‘গবাদি পশুর চারণভূমিতেও এই গন্ধ ছড়িয়ে দেয়া যায়৷ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, পশুপালকরা এই পদ্ধতিকে সাদরে গ্রহণ করেছেন৷ লক্ষ্য করা গেছে, এর ফলে গরুর মৃত্যুর হার কমেছে৷ সংরক্ষিত ও অরক্ষিত এলাকার গরুর পালের মধ্যে স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে একটা বড় পার্থক্যও চোখে পড়ছে৷''

প্রথম দিকে আইসিআইপিই এই দ্রব্যটি নিজেরাই প্রস্তুত করতো৷ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় আর্থিক সহায়তাকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগে ২০০৯ সালে প্রতিরোধক দ্রব্যটির জন্য এক বাণিজ্যিক সহযোগী খুঁজে পাওয়া গেছে৷ তখন থেকে কেনিয়ার এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জীবাণুবাহক টেটসে মাছি বিতাড়ক পদার্থ তৈরির ব্যাপারটি হাতে নিয়েছে৷ এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডের একটি কোম্পানি গবেষণা করে দেখতে চায়, এই পদার্থ অন্যান্য মাছি দূর করতে কাজে লাগানো যায় কীনা৷

উল্লেখ্য, টেটসে মাছির মাধ্যমে স্লিপিং সিকনেস বা নিদ্রারোগের জীবাণু মানুষের মধ্যে বিস্তৃত হয়৷ নিদ্রা রোগটিও আফ্রিকা বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় দেখা যায়৷ মাছি থেকে জীবাণু মানুষের শরীরে ঢুকে স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে, চলে যেতে পারে মস্তিষ্কেও৷ অনেকটা ম্যালেরিয়ার মতো লক্ষণ হলেও রোগটি শনাক্ত করা বেশ কঠিন৷ এতে মানসিক বৈকল্যও ঘটতে পারে৷ বিশেষ করে মধ্য আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে এই অসুখ বিস্তৃত৷ যথা সময়ে ধরা না পড়লে ও চিকিত্সা করাতে না পারলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রোগীরা৷

প্রতিবেদন: আসুমটা লাটুস / আরবি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য