ক্যামেরনের বক্তব্যে ইউরোপে ক্ষোভ
২৪ জানুয়ারি ২০১৩‘ব্রিটেন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে চায় আমরা সেই অপেক্ষায় লাল গালিচা বের করে রাখবো না' – ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফাবিয়াসের এ বক্তব্য নিঃসন্দেহে ক্যামেরনের প্রত্যাশার বিপরীত৷ গত সপ্তাহেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকা, থাকলে সে সম্পর্কে নিজের দেশের স্বার্থ কিভাবে রক্ষার চেষ্টা করবেন সে বিষয়গুলো পরিষ্কার করে বক্তব্য রাখার কথা ছিল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর৷ ক্যামেরন সেই বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার করেছেন অনেকগুলো ‘যদি' এবং ‘কিন্তু'র আড়াল দিয়ে৷ ভাষণে একটা কথাই স্পষ্ট, ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত তিনি নিজের কাছে রাখছেন না, সেই দায়িত্ব তিনি ছেড়ে দেবেন ব্রিটেনের জনগণের কাছে৷ ২০১৫ সালে নির্বাচনে তাঁর রক্ষনশীল দল যদি জয়ী হয়, যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে গণভোট হবে৷ আর সেই গণভোটে অংশ নিয়ে ব্রিটেনের জনগণ জানাবে তাঁদের দেশকে তাঁরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেখতে চান কিনা৷
ক্যামেরনের এই বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে ব্রিটেনে৷ তাঁর রক্ষণশীল দলের বড় একটা অংশ মনে করে, তিনি যা বলেছেন তা ইতিবাচক এবং অবিস্মরণীয়৷ লন্ডনের মেয়র বোরিস জনসন ক্যামেরনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘তাঁর এ ভাষণের ফলে আমারা ইউরোপের বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রে নতুনভাবে জায়গা করে নেয়ার সুযোগ তৈরি করতে পারবো৷''
জনসনের মতো রক্ষণশীল দলের আরেক নেতা মার্ক প্রিচার্ডের মুখেও শোনা গেছে ক্যামেরনের প্রশংসা, বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘‘প্রায় চার দশকের মধ্যে ক্যামেরনই ব্রিটেনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি দেশের জনগণকে গণভোটে অংশ নেয়ার আহ্বান জানালেন, এটা আসলেই ভালো খবর৷''
কিন্তু ইউরোপে তো দূরের কথা ব্রিটেনেও সবার কাছ থেকে এমন সাড়া পাননি ডেভিড ক্যামেরন৷ ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, লেবার পার্টির টনি ব্লেয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত৷ সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ভাষণ দেয়ার সময় তিনি বলেন, ব্রিটেনে যাঁরা চান তাঁদের দেশ একুশ শতকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভালো ভূমিকা রাখুক, বিশ্ব বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় বাজারে প্রবেশ করুক, তাঁদের পেছনে দুশ্চিন্তার ছুরি মেরেছেন ক্যামেরন৷
ক্যামেরনের ভাষণের মূল কথা, ব্রিটেন চায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা৷ কিন্তু সেই ভূমিকাতেও ব্রিটেন থাকবে কিনা – সেটা জানা যাবে ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর আয়োজন করা গণভোটে৷ একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ তাঁর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, ‘‘জার্মানি এবং ব্যক্তিগতভাবে আমিও চাই ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও সক্রিয় সদস্য হিসেবে থাকুক৷ ব্রিটেনের প্রত্যাশাগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা প্রস্তুত৷ তবে অন্যান্য দেশেরও যে প্রত্যাশা রয়েছে, সেটাও মনে রাখতে হবে৷''
এসিবি/ডিজি (রয়টার্স)