1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সাঈদী বা নিজামীকে দিয়ে জানাজা পড়ানোর ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই'

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৪ অক্টোবর ২০১৪

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম আযম বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন৷ ৯২ বছর বয়সি এই জামায়াত নেতার আরও ৮৯ বছর কারাভোগ বাকি ছিল৷

https://p.dw.com/p/1Dbja
Ghulam Azam sent to jail
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযম বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতৃত্ব দেন৷ বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমইউ) হাসপাতালে তাঁর মৃত্যুর পর জানাজা পড়ানো নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়৷ গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আযমী দাবি করেন, ‘‘আমার বাবা মৃত্যুর আগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে দিয়ে জানাজা পড়ানোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন৷'' জামায়াতের এই দুই নেতাই বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন৷ এদের মধ্যে মাওলানা সাঈদীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়েছে৷

জানাজা প্রসঙ্গে ইসলামী ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাওলানা নিজামী বা মাওলানা সাঈদীকে দিয়ে গোলাম আযমের জানাজা পড়ানোর ধর্মীয় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ গোলাম আযমের ছেলে যে দাবি করেছেন, তা সরকার ইচ্ছে করলে রাখতে পারে, না রাখলেও কোনো ক্ষতি নেই৷ যিনি মারা যান জানাজা পড়ানো তাঁর সন্তানদের অধিকার৷ এখানে অন্য কারো জানাজা পড়ানো জরুরি বিষয় না৷ এমনকি জানাজা না পড়ালেও মৃতের কোনো ক্ষতি হবে না৷ তার সন্তানদের জন্য এটা ফরজ৷ কোনো সন্তান যদি জানাজার সময় উপস্থিত থাকতে না পারেন, তাহলে পরে কবরে গিয়েও তিনি জানাজা পড়তে পারেন৷ হ্যাঁ, মাওলানা সাঈদী বা মাওলানা নিজামীর সঙ্গে যদি গোলাম আযমের রক্তের সম্পর্ক থাকত তাহলে একটা সুযোগ ছিল৷ কিন্তু এখানে তেমন কোনো সম্পর্কও নেই৷''

Bangladesch Ghulam Azam Urteil 15.07.2013
গোলাম আযমের মৃত্যুর পর তার জানাজা পড়ানো নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়ছবি: Nashirul Islam/AFP/Getty Images

একই প্রসঙ্গে গোলাম আযমের আইনজীবী তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গোলাম আযমের জানাজা বা দাফন করার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়নি৷ তাঁর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁকে মগবাজার কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে৷ আমরা সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ তবে তাঁর ছেলেদের শুক্রবারের মধ্যে দেশে পৌঁছানোর কথা৷ তাঁরা দেশে এলেই দাফন ও জানাজার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷'' গোলাম আযমের পাঁচ ছেলের মধ্যে চার জনই দেশের বাইরে থাকেন৷

মাওলানা নিজামী ও মাওলানা সাঈদীকে দিয়ে জানাজা পড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অ্যাডভোকেট তাজুল বলেন, ‘‘তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পরিবার যদি তাদের দিয়ে জানাজা পড়াতে চান তাহলে আইনজীবীরা সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন৷ তবে পরিবার থেকে এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷''

গোলাম আযমের জানাজায় ইমামতির জন্য কারাবন্দি মতিউর রহমান নিজামী বা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্যারোলে মুক্তি চাওয়ার কোনো ‘যৌক্তিকতা' নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম৷ তবে এ বিষয়ে আবেদন করা হলে আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেবে বলে মত তাঁর৷ শুক্রবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ১৪ দলের পক্ষ থেকে তিনি এই অভিমত দেন৷ নাসিম বলেন, অতীতেও কারাবন্দি অবস্থায় অনেকে মারা গেছেন৷ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বলতে চাই – জানাজায় ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন থাকার অনুমতি পায় বা প্যারোলে অনুমতি পায়৷ তাঁরা তো সে রকম কেউ না৷ তাই এ দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর শুক্রবার সকালে পরিবারের সদস্যদের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়৷ এরপর থেকে মগবাজারে নিজের বাসার গ্যারেজে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একটি লাশবাহী গাড়িতে তাঁর মরদেহ রাখা হয়েছে৷ ১৯২২ সালের ৭ই নভেম্বর ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নানাবাড়িতে জন্ম নেয়া গোলাম আযমের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরগাঁওয়ে৷ ছাত্রজীবন শেষে ১৯৫০ থেকে পাঁচবছর রংপুর কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন তিনি৷ ওই সময়ই সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদীর ইসলামী ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন গোলাম আযম৷ ধর্মীয় উসকানি দেয়ার জন্য পাকিস্তানের আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল মওদুদীকে, আর তাঁর শিষ্য গোলাম আযমও একই অপরাধ করেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়৷

মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৭১ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানে যান গোলাম আযম৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সেখান থেকে চলে যান যুক্তরাজ্যে৷ ৭ বছর লন্ডনে অবস্থান করার পর ১৯৭৮এ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশে আসেন এই জামায়াত নেতা৷ তা-ও পাকিস্তানি পাসপোর্টে৷

এদিকে গোলাম আযমের লাশ তাঁর পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাতে না নেয়া হয়, সে জন্য বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ৷ নবীনগর উপজেলার প্রধান সড়কে মিছিল শেষে গোলাম আযমের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে উপজেলা প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশ করেন তাঁরা৷ সেখানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধারা অসামান্য অবদান রাখলেও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের নেতার বাড়ি নবীনগরে হওয়ায় এখানকার মানুষকে লজ্জায় পড়তে হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য