1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ইসলামও জার্মানির অংশ’

৩ অক্টোবর ২০১০

জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের দুই দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ তাঁর ভাষণে বলেন, একমাত্র সেই রাষ্ট্রেরই কোনো ভবিষ্যৎ রয়েছে, যা অন্যান্য সংস্কৃতি সম্পর্কে সহিষ্ণুতা দেখায়৷

https://p.dw.com/p/PTP4
জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ: একমাত্র সেই রাষ্ট্রেরই কোনো ভবিষ্যৎ রয়েছে, যা অন্যান্য সংস্কৃতি সম্পর্কে সহিষ্ণুতা দেখায়ছবি: picture alliance/dpa

সমাজে বিদেশিদের দায়-দায়িত্ব

ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ তাঁর কথা রেখেছেন৷ ৩০ মিনিটের ভাষণে জার্মানির ঐক্যের চেয়ে অনেক বেশি সময় তিনি ব্যয় করেছেন অভিবাসন এবং সমাজে বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরতে৷ এমন এক বিশেষ দিনে এমন এক বিষয় নিয়ে আলোচনা মোটেই সহজ ছিল না৷ কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জার্মানিতে যে বিতর্ক চলছে, তার প্রেক্ষাপটে এমনটা না করেও উপায় ছিল না৷ যে সব বিদেশি বা বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ এদেশে থেকেও সমাজের মূল স্রোতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে প্রস্তুত নয়, তাদের প্রতি কেমন মনোভাব দেখানো উচিত? এই নিয়ে বিভিন্ন শিবিরে জ্বালাময়ী বক্তব্য শোনা যাচ্ছে৷ বিদেশিরা জার্মানিতে থেকেও জার্মান ভাষা শিখতে চায় না, দেশের সংবিধানের মূলমন্ত্র মানে না, শুধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে সামাজিক ভাতা আদায় করতেই ব্যস্ত – এমন সব অভিযোগ শোনা যাচ্ছে৷ প্রেসিডেন্ট ভুল্ফ'এর ভাষণে এই সব সমস্যার কথা উঠে এসেছে বটে, কিন্তু এর মূলে যে দীর্ঘকালের ত্রুটিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নীতি রয়েছে, তা নিয়ে তিনি কিছু বলেন নি৷

Mevlana Moschee in Berlin
বার্লিনের একটি মসজিদছবি: AP

ইসলাম ধর্ম

ইসলাম প্রসঙ্গে অবশ্য তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, তাকে সুদূরপ্রসারী বলা চলে৷ ভুল্ফ বলেন, খ্রীস্টধর্ম ও ইহুদি ধর্ম জার্মানির ইতিহাস ও বর্তমান যুগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু ইতিমধ্যে ইসলাম ধর্মও জার্মান সমাজের অংশ হয়ে পড়েছে৷ এর আগে দেশের রাজনৈতিক মহলের শীর্ষ স্তরে অন্য কেউ এত স্পষ্ট ভাষায় এই বাস্তব স্বীকার করেন নি৷

Türkisches Mädchen in München
অভিবাসিদের জার্মান ভাষা শিখতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট ভুল্ফছবি: AP

সমন্বয়ের মডেল

অন্য বেশ কিছু ত্রুটির কথাও খোদ প্রেসিডেন্টের ভাষণে উঠে এসেছে, যা প্রচলিত ধারণা হিসেবে চালু থাকলেও একজন শীর্ষ প্রতিনিধির কণ্ঠে কখনো শোনা যায় নি৷ বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ সমাজে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা না করে যে যার মতো শান্তিতে পরস্পরের পাশাপাশি বসবাস করবে – এমন স্বপ্নময় ধারণার কড়া সমালোচনা করেন ভুল্ফ৷ বিশেষ করে বামপন্থী দলের জন্য এই আক্রমণ মোটেই সুখকর নয়৷ অন্যদিকে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জার্মানিকে অভিবাসনের গন্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন, যা তাঁর নিজের রক্ষণশীল শিবিরের একাংশ আজও মেনে নিতে পারে নি৷

প্রেসিডেন্টের ভাষণ থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি জগত কি তাঁর প্রস্তাবগুলি কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু করবে? যেমন গোটা পরিবারের জন্য জার্মান ভাষা শেখার পাঠক্রমের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন ভুল্ফ৷ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আলী সকালে স্কুলে গিয়ে জার্মান ভাষা বলে তারপর বাড়ি ফিরে শুধু তুর্কি ভাষায় কথা বললে লাভ হয় কি? কারণ আলীর মা তো জার্মান জানেন না৷ ভুল্ফ স্কুলে ইসলাম ধর্মের পাঠক্রমের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন৷ তবে সেটা হতে হবে জার্মান ভাষায়, শেখাবেন জার্মান শিক্ষকরা৷

Schweigeminute in den deutschen Schulen
জার্মান স্কুলগুলোতে ইসলাম ধর্ম পাঠক্রমের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্টছবি: AP

জাতিগত পরিচয় – আজকের প্রেক্ষাপট

২০ বছর আগে দুই জার্মানির মানুষ সোচ্চার হয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা এক জাতি৷' প্রেসিডেন্ট ভুল্ফ সেই একই বার্তা আজকের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরেছেন৷ তাঁর মতে, জার্মানিতে যারা বসবাস করেন, তাঁদের সবার ক্ষেত্রেই এই বাণী প্রযোজ্য হওয়া উচিত৷

জার্মানির সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত৷ তবে তাঁর বক্তব্যের ওজন রয়েছে বৈকি৷ এই পদের অস্তিত্বের ভিত্তিই হলো দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের উপর প্রভাব বিস্তার করা৷ জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশি সংক্রান্ত চলমান বিতর্ককে প্রভাবিত করলেন৷ তিনি হয়তো রাজনীতি জগতের জন্য নতুন এক দিশাও খুলে দিলেন৷

প্রতিবেদন: ফল্কার ভাগেনার

অনুবাদ: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: জাহিদুল হক