1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফের গ্রেপ্তার শর্মিলা চানু

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২৪ আগস্ট ২০১৪

মনিপুরের তেজস্বী মানবাধিকার কর্মী ইরম শর্মিলা চানু ১৪ বছর ধরে অনশন করছেন সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন রদ করার দাবিতে৷ মুক্তি পাওয়ার পর পরই তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়৷ আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে তিনি আটক ছিলেন৷

https://p.dw.com/p/1Czc6
শর্মিলা চানু জানিয়েছেন লড়াই চলবেছবি: picture-alliance/dpa

বছর চল্লিশের লড়াকু মনিপুরি নারীর নাম ইরম শর্মিলা চানু৷ নাকে নল৷ আগোছাল মাথার চুল৷ ক্লান্ত মুখে দুর্জয় দৃঢ় প্রতিজ্ঞার ছাপ৷ মানবাধিকার কর্মী শর্মিলার এই পরিচিত ছবিটাই ফুটে ওঠে৷ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুরে সেনাবাহিনীর অমানবিক বিশেষ ক্ষমতা আইন ‘আফস্পা' রদ কার দাবিতে গত ১৪ বছর ধরে অহিংস পথে অনশন করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এই বিরল চরিত্রের নারী শর্মিলা৷

শর্মিলার আন্দোলনের মুখ বন্ধ করতে তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার চেষ্টা করার অভিযোগ এনে ২০০৭ সালের মার্চে তাঁকে জেল হেফাজতে নেয় সরকার৷ ইম্ফল জেল-হাসপাতালে আটকে রেখে জোর করে তাঁর নাকে ১৬ ইঞ্চির একটি টিউব ঢুকিয়ে তরল খাদ্য খাওয়ানো হয়৷ এরপর গত বুধবার জেল হেফাজত থেকে ছাড়া পাবার পর শুক্রবার, আবারো তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেল হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়৷

Indische Soldaten in Kaschmir Archivbild 2010
সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন রদ করার দাবিতে অনশন করছেন শর্মিলাছবি: Tauseef Mustafa/AFP/Getty Images

তবে মনিপুরের উপ-মুখ্যমন্ত্রী এটাকে গ্রপ্তার বলে মনে করেন না৷ বলেন, শর্মিলার প্রাণ বাঁচাতে তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন, তাই জেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ শর্মিলা চানুর এই অনশন আন্দোলনে নৈতিক সমর্থনে সামিল হয়েছে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলি৷ তবে মানবাধিকার সংগঠন এবং শর্মিলার ‘আফস্পা' আইন তুলে নেবার আর্জি দেশের সার্বিক নিরাপত্তার তাগিদে মোদী সরকারের কাছে মঞ্জুর হবে কিনা, তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ আছে৷ তবে হোক বা না হোক মানবাধিকার আন্দোলনে শর্মিলা যে দুঃসহ কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগ করে চলেছেন, তাতে তিনি ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছেন এক প্রতীক চরিত্র৷

গত সাত বছর ধরে জেল-হাসপাতালে থাকাকালীন তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ গিয়েছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন৷ মনিপুরের দায়রা আদালত শর্মিলার বিরুদ্ধে আত্মহত্যা করার চেষ্টার কোনো প্রমাণ না পেয়ে তাঁকে মুক্তির আদেশ দিয়েছিল৷ তখনই অনেকের মনে হয়েছিল আবার হয়ত তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে এবং দু'দিনের মধ্যে সেটাই হলো৷ তবুও তাঁর আন্দোলন চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শর্মিলা৷

জেল থেকে বেরিয়েই তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত অনুগামীদের তৈরি আন্দোলন মঞ্চে কোনোরকমে দুর্বল শরীরটাকে টেনে তুলে জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আমি জিতিনি৷ আমি জিতবো সেইদিন যেদিন রাজ্য থেকে নৃশংস ‘আফস্পা‘ আইন প্রত্যাহার করা হবে৷ এই আইনের বলে বহু পরিবার অনাথ হয়েছে, বহু নারী বিধবা হয়েছেন৷ এই মঞ্চ থেকেই আমি আন্দোলন চালিয়ে যাব৷ বাড়ি ফিরবো না৷ মায়ের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করবো না৷ আমি আর কিছু চাই না, শুধু চাই মানুষের সমর্থন৷''

বলা বাহুল্য, কংগ্রেস শাসনে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বহু আবেদন-নিবেদন করেও সাড়া মেলেনি৷ দিল্লিতে ২০০৬ সালে এসে তিনি যনন্তর-মন্তরেও অনশন আন্দোলন চালিয়ে যান৷

কী এই ‘আফস্পা' আইন?

মনিপুরসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এবং জম্মু-কাশ্মীর লাগাতার সন্ত্রাস এবং জঙ্গি তৎপরতার আখড়া হয়ে ওঠে৷ প্রত্যেক দেশই সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বিশেষ আইন প্রণয়ন করে থাকে৷ ভারতেও সন্ত্রাস ও জঙ্গি মোকাবিলায় বিশেষ বিশেষ অঞ্চলকে উপদ্রুত অঞ্চল বলে ঘোষণা করে দেশের সাধারণ আইনে এর মোকাবিলা করা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয় বলে দরকার হয়ে পড়ে সেনা বাহিনীকে আইনগত বিশেষ ক্ষমতা দেবার৷

১৯৫৮ সালের ‘আফস্পা' আইনে সেনাবাহিনীকে সেই বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ এই আইনের বলে নিরাপত্তা বাহিনীর যদি সন্দেহ হয় উপদ্রুত এলাকার কোনো ঘরে বা জায়গায় সন্ত্রাসী বা জঙ্গিরা লুকিয়ে আছে, তাহলে বিনা অনুমতিতে নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে হানা দিতে পারে, তল্লাসি চালাতে পারে, কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে, এমনকি গুলি করে মেরে ফেলতেও পারে৷ আদালতের কাছে এ জন্য জবাবদিহি করতে হয় না৷

Irom Sharmila NESO Indien
শর্মিলার সমর্থনে জমায়েত (ফাইল ছবি)ছবি: picture-alliance/dpa

উল্লেখ্য, ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে মনিপুরের মালোম গ্রামের বাসস্ট্যান্ডে জঙ্গি সন্দেহে ১০ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে নিরাপত্তা বাহিনী৷ তখন থেকেই ‘আফস্পা' প্রত্যাহারের দাবিতে অনশনে শুরু করেন শর্মিলা চানু৷ এরপর ২০০৪ সালের জুলাই মাসে মনিপুরি মহিলা থানজাম মনোরমাকে ধর্ষণ ও খুন করার জন্য সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে৷ মনোরমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত মনিপুরের পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন সক্রিয় সদস্য৷

নাগরিক সমাজ এই বিতর্কিত আইনের ভালো-মন্দ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত৷ অনেকে বলছেন, এই আইন তাঁদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে৷ অন্যরা বলছেন, জঙ্গিরাও কি মানবাধিকারের পরোয়া করে? ২০০০ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে মনিপুরের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির হাতে নিহত হয়েছে ৪৫০ জন নিরীহ ব্যক্তি৷ এই বিশেষ ক্ষমতা আইন না থাকলে সাধারণ আইনে জঙ্গিদের দৌরাত্ম বন্ধ করা যাবে না৷ জোর করে টাকা আদায়, বাড়ি-ঘর জ্বালানো, অপহরণ, নির্যাতন তারাও করে না৷ এছাড়া, জঙ্গিরা পদে পদে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে আদালতে যেতে বাধ্য করবে৷ কাজেই আইনি সুরক্ষা না পেলে নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে৷ ৯০-এর দশকে সন্ত্রাস মোকাবিলায় জম্মু-কাশ্মীরকে উপদ্রুত এলাকা ঘোষণা করে নিরাপত্তা বাহিনীকে দেয়া হয় এই বিশেষ ক্ষমতা৷ তবে উপদ্রুত এলাকা আইন বলবৎ থাকা উচিত সীমিত সময়ের জন্য৷