1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মঙ্গল অভিযান নিয়ে বিতর্ক

শীর্ষ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪

ভারতের মঙ্গলাভিযান নিয়ে একদিকে যেমন প্রশংসা, অন্যদিকে তেমন সমালোচনা! এর সাক্ষী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন যুক্তরাষ্টে মহাব্যস্ত, তখন ‘মঙ্গলায়ন’-এর কোনো দরকার ছিল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই!

https://p.dw.com/p/1DM16
Bildergalerie Indien Mars Orbiter Mangalyaan
ছবি: Reuters/India's Press Information Bureau

অস্কার পুরস্কার পাওয়া হলিউডি ছবি গ্র্যাভিটি-র বাজেট ছিল ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ সেখানে ভারতের মঙ্গলগ্রহ অভিযানের বাজেট ৭৪ মিলিয়ন ডলার৷ ভারতীয় টাকায় ৪৫১.১৪ কোটি টাকা৷ ইংরেজিতে যাকে ‘শু-স্ট্রিং' বাজেট বলা হয়, এও কতকটা তাইই৷ তার পরেও কথা উঠছে, ভারতের মতো জনবহুল দেশে এখনও যেখানে বহু গ্রামে বিদ্যুৎ বা পরিশ্রুত পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি, এখনও প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি সব শিশুর জন্য, সেখানে এই সাড়ে চারশো কোটি টাকা খরচ করাটাও কি বিলাসিতা নয়? যে কারণে গত বুধবার মঙ্গলায়নের সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে শহরের এর বিশিষ্ট চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেট হিসেব কষতে চাইলেন, এই টাকায় কতগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় বা গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা যেত সারা দেশে!

অবশ্য এর জবাবে যে যুক্তি শোনা যাচ্ছে, সেটাও নেহাত ফেলে দেওয়ার মতো নয়৷ তার আগে বলে রাখা দরকার, সফল মঙ্গল অভিযানের ক্ষেত্রে ভারত হচ্ছে সারা বিশ্বের প্রথম দেশ, যারা একক চেষ্টায় এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে, প্রথমবারেই মঙ্গলের কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠাতে সফল হলো৷ এর আগে একমাত্র ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রথমবারেই এই সাফল্য পেয়েছে, কিন্তু সেটা ছিল একাধিক ইউরোপীয় দেশের সম্মিলিত চেষ্টার ফসল৷ নয়ত মহাকাশ গবেষণায় বাকি সব দেশের থেকে এগিয়ে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়াও প্রথমবারেই সাফল্য পায়নি৷ সারা পৃথিবীজুড়ে মোট ৫১ বার মঙ্গল অভিযানের চেষ্টা হয়েছে, তার মধ্যে সাফল্য এসেছে মাত্র ২১ বার৷ সর্বশেষ ২০১২ সালে চীন প্রয়াসী হয়েছিল মঙ্গলগ্রহ অভিযানে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল৷ সেখানে ভারতই এশিয়ার একমাত্র দেশ, যারা মঙ্গলের কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠাতে সফল হল৷

মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা বলছেন, এখানেই ভারতের ভবিষ্যৎ সাফল্যের বীজ লুকিয়ে আছে৷ প্রথমত, অত্যন্ত কম বাজেট, দ্বিতীয়ত মাত্র ৩০০ দিনের গবেষণায় এমন এক বুদ্ধিমান উপগ্রহ-মস্তিষ্ক ভারত তৈরি করল, যা পৃথিবী থেকে মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত দীর্ঘ যাত্রাপথ নিখুঁতভাবে পার হয়ে মহাকাশের নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে গেল, এই সাফল্য এক নতুন প্রজন্মের স্মার্ট উপগ্রহের সূচনা করছে, যে প্রযুক্তি-সাফল্যের চালকের আসনে থাকবে ভারত৷ ফলে একদিকে যেমন ভারত তার নিজস্ব উপগ্রহ নির্ভর দূরসঞ্চার এবং টেলিসংযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে পারবে এবং আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতির পূর্বাভাস থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রক্ষেপণ, সবেতে এগিয়ে থাকবে তেমনই মহাকাশ গবেষণা ও অভিযানের ক্ষেত্রে স্বনির্ভর এক দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হবে৷ ভারতীয় প্রযুক্তি অন্য দেশের সহায়ক হয়ে ওঠার রাস্তাও প্রশস্ত করল এই সাফল্য৷ অ্যামেরিকা সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া', বা ভারতে তৈরি করার আবেদন করছেন বহির্বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছে, সেই আবেদন আরও জোরদার হলো৷

তবু বক্রোক্তির শেষ নেই! ভারতের এই ‘মার্স অরবিটার মিশন'-কে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ‘এম ও এম', অর্থাৎ ‘মম'৷ এক বিশিষ্ট সাংবাদিক তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ইসরো-র বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন, মম-কে সফলভাবে মহাকাশে পৌঁছে দেওয়ার জন্য৷ তাতে আর এক সাংবাদিক রসিকতা করে মন্তব্য করেছেন, রাহুল গান্ধী ভেবেছে হয়ত ওর মা-কে মহাকাশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে! বলা বাহুল্য, ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস দলের যুবনেতা রাহুল গান্ধীর যে সোনিয়া গান্ধী নির্ভর অস্তিত্ব, তার দিকে কটাক্ষ করে এই বক্রোক্তি৷

অন্যদিকে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত এক ছাত্র তীর্যক মন্তব্য করলেন, উপগ্রহ যখন পৌঁছে গিয়েছে, তখন এই উপাচার্যকেও এবার মঙ্গলগ্রহে পাঠিয়ে দিলে হয়৷ বামপন্থি রাজনীতিকরা কটাক্ষ করছেন, তৃণমূল কংগ্রেস মঙ্গলায়নের এই সাফল্যে আদৌ খুশি নয়৷ কারণ, একে এটা বিজেপি সরকারের সাফল্য, তায় মঙ্গলগ্রহের রং লাল, যে রংটা তৃণমূল নেত্রীর একেবারেই নাপসন্দ!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য