1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বার্লিনের আকাশ সেতু

মারি টডেসকিনো / আরবি২৬ জুলাই ২০১৩

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ‘লুফ্ট ব্র্যুকে’ বা আকাশ সেতু ছিল বড় সাফল্য৷ বিজয়ী ও বিজিত – অ্যামেরিকান ও জার্মানদের কাছাকাছি এনে দিয়েছিল এই প্রয়াস৷ পাইলট হ্যালভরসেনের কথায়, ‘‘এক সময়ের শত্রু পরিণত হয়েছিল বন্ধুতে৷’’

https://p.dw.com/p/19EBA
ছবি: DW/M. Todeskino

বার্লিন, ১৯৪৮ সালের গ্রীষ্মকাল৷ ২৭ বছর বয়সি তরুণ অ্যামেরিকান পাইলট গেইল এস হ্যালভরসেন তৎকালীন পশ্চিম বার্লিনের বিমানবন্দর টেম্পেলহোফের রানওয়ের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন৷ কাঁটা তারের বেড়ার পেছনে ৩০টি বাচ্চা দাঁড়িয়ে অনুরোধ করছিলো ‘গিমে চকলেট'৷ পাইলট গেইল হ্যালভরসেনের মনে এখনও ভেসে ওঠে সেই দৃশ্য৷ কিন্তু তাঁর পকেটে তো মাত্র দুটি ‘চুয়িং গাম'৷ ৩০ জন বাচ্চাকে কীভাবে দেওয়া যায়? টুকরাগুলিকে চার ভাগ করে কয়েকজনের মধ্যে ভাগ করে দিলেন৷ বাচ্চারা কিন্তু কাড়াকাড়ি করল না৷ ভাগাভাগি করে নিল ওগুলি৷ ‘‘এমনকি কেউ কেউ চকলেটের মোড়কের গন্ধ শুঁকতে লাগলো৷ আর তখনই আমার মনে হলো, আমার আরো কিছু করা উচিত'', বলেন আজকের ৯২ বছরের পাইলট গেইল হ্যালভরসেন৷

Bildergalerie 65. Jahrestag Luftbrücke Berlin
বার্লিন অবরোধ উঠিয়ে নেওয়া পর্যন্ত ২২ টন টফি, চকলেটও নানা রকমের মিষ্টি নিক্ষেপ করা হয় বার্লিনের পশ্চিমাংশেছবি: picture-alliance/dpa

বিভক্ত বার্লিনের অবস্থা ছিল সঙ্গিন

সেই সময় বিভক্ত বার্লিনের অবস্থা ছিল সঙ্গিন৷ তদানীন্তন পশ্চিম বার্লিনেও ‘ডি মার্ক', মানে ডয়চে মার্ক প্রবর্তন করায় পশ্চিমা মিত্রশক্তির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ বার্লিনের পশ্চিমাংশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে মূল ভূখণ্ড থেকে৷ সেখান থেকে কোনো ট্রাক, ট্রেন বা জাহাজকে পশ্চিম বার্লিনে ঢুকতে হবে না, এই ছিল নির্দেশ৷ পশ্চিম বার্লিন পরিণত হয় অবরুদ্ধ এক নগরীতে৷ শহরটির ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে জীবনধারনের মৌলিক চাহিদা, খাদ্য, পানীয়, কয়লা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত করে রাখার পরিকল্পনা করা হয়৷

কিন্তু পশ্চিমা মিত্রশক্তি বার্লিনবাসীদের অসহায় অবস্থায় ফেলে রাখতে চায়নি৷ অবরোধের দু'দিন পর থেকেই শুরু হয় সেই সময়ের পশ্চিম জার্মান ভূখণ্ড থেকে আকাশ পথে সাহায্য পাঠানো৷ গড়ে তোলা হয় এক ধরনের ‘লুফ্ট ব্র্যুকে' বা আকাশ-সেতু৷ প্রতিদিন শয়ে শয়ে ব্রিটিশ ও অ্যামেরিকান বিমান ও হেলিকপ্টার বার্লিনের আকাশে উড়তে থাকে৷ সরবরাহ করতে থাকে খাদ্য, পানীয়, ওষুধ-পত্র, কয়লা ইত্যাদি জরুরি সামগ্রী৷ ওপর থেকেও ফেলতে থাকে৷ বার্লিনবাসীরা যাকে ভালোবেসে নাম দিয়েছিল কিসমিস-বোমা৷ ইতিহাসেও এই নামে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে এই ধরনের সাহায্য অভিযান৷

অংশ নেন পাইলট গেইল হ্যালভরসেনও

এতে অংশ নিয়েছিলেন পাইলট গেইল হ্যালভরসেনও৷ ১৯৪৯ সালে মে মাসে বার্লিন অবরোধ তুলে নেওয়া পর্যন্ত কতবার যে তিনি প্লেন চালিয়েছেন তা গুনে বলা যাবে না৷ বার্লিনের বাচ্চাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন গেইল৷ পরদিন গিয়েছিলেন চকলেট নিয়ে৷ এরপর এই কাজটা নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ আগেই বলা ছিল, মাটির কাছাকাছি এলেই প্লেনটা কাঁপাতে থাকবেন তিনি৷ তাই বাচ্চারা তাঁর প্লেন দেখলেই চিনতে পারতো৷ ছোট একটা ফাক দিয়ে চকলেটগুলি নীচে নিক্ষেপ করতেন গেইল৷ বাচ্চারা আনন্দ উল্লাসে ঝাঁপিয়ে পড়তো চকলেটগুলির ওপর৷

Bildergalerie 65. Jahrestag Luftbrücke Berlin
১৯৪৯ সালে মে মাসে বার্লিন অবরোধ তুলে নেওয়া পর্যন্ত কতবার যে হ্যালভরসেন প্লেন চালিয়েছেন তা গুনে বলা যাবে নাছবি: picture-alliance/dpa

কিছুদিন পর মিডিয়া এই খবর পেয়ে গেল৷ এক রিপোর্টার আর্টিকেল ও প্লেনের ছবি তুলে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন গেইলকে৷ কমান্ডার তাঁকে ডেকে পাঠান৷ ভয়ে ভয়ে তাঁর কাছে যান গেইল৷ এক বিস্ময় অপেক্ষা করছিল তাঁর জন্য৷ বস প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘ভালো আইডিয়া'৷ এইপর তাঁর এই তত্পরতার কথা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে৷ অ্যামেরিকার বাচ্চারাও চকলেটের জন্য পয়সা জমাতে শুরু করে৷ অন্যান্য পাইলটরাও যোগ দেন এই কাজে৷ বার্লিন অবরোধ উঠিয়ে নেওয়া পর্যন্ত ২২ টন টফি, চকলেটও নানা রকমের মিষ্টি নিক্ষেপ করা হয় বার্লিনের পশ্চিমাংশে৷

কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করা

ট্রাউটে গ্রিয়েরের বয়স তখন ১৪৷ একটা চকলেটও পাননি তিনি৷ ট্রাউটে জানান, ‘‘গেইল হ্যালভরসেন যখন চকলেট ছুড়তেন, তখন সব বাচ্চারা দৌড়ে যেত৷ আমি একটু পেছনে পড়ে যেতাম৷ ছেলেরা যেভাবে ধাক্কাধাক্কি করত৷ তাদের সঙ্গে পেরে উঠতাম না৷ তবে এজন্য আমার মনে কষ্ট নেই৷ বরং সেই সব পাইলটদের কাছে আমি গভীর কৃতজ্ঞ৷ কত কষ্টই না তাঁরা আমাদের জন্য করেছেন৷''

‘‘প্রথম প্রথম আমরা দিন রাত উড়েছি'', জানান গেইল৷ তবে বলা বাহুল্য, আকাশ সেতু কম বিপজ্জনক ছিল না৷ কমপক্ষে ৭৮ জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন এই অভিযানে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য