1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বর্ষবরণ

সমীর কুমার দে, ঢাকা১৪ এপ্রিল ২০১৪

জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নতুন দিনের প্রত্যয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতেছে আজ সবাই৷ ১৪২১ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে ভোরের আলো ফুটেছে শুভকামনায়৷ সারাদিন ধরে নানা আনন্দ আয়োজনে অংশ নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়েছেন অগণিত মানুষ৷

https://p.dw.com/p/1Bhbz
ছবি: DW/M. Mamun

প্রকৃতির নিয়মে আসে বৈশাখ৷ কিন্তু পহেলা বৈশাখ জাতির জীবনে আসে দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে৷ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রত্যয়ে৷ সোমবার ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়ে যায়৷ রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সমস্ত গ্লানি ধুয়ে-মুছে অগ্নিস্নানে শুদ্ধ করার বার্তা যেন নিয়ে এসেছে বৈশাখ৷ গানে, কবিতায়, নৃত্যে, শোভাযাত্রায় সবার জন্য মঙ্গল প্রত্যাশা করেছেন দেশের মানুষ৷ চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় এমনটিই ফুটে উঠেছিল৷ এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম ছিল ‘উদ্ধত কর, জাগ্রত কর, নির্ভয়ও কর হে...'৷

Bangladesch Neujahr Fest (Bildergalerie)
ছবি: DW/M. Mamun

বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা আনোয়ার হেসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, পহেলা বৈশাখ সর্বজনীন৷ তাই অশুভ শক্তির রক্তচক্ষু, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা বেড়াজাল ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি উত্‍সবমুখর বাঙালিকে৷ সবাই এসেছেন দলে দলে৷ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো মানুষের স্রোত আছড়ে পড়ে রমনা বটমূলের ছায়ানটের অনুষ্ঠানে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা যে সার্বজনীন উত্‍সব তা বোঝা যায় শাহবাগ, রমনা, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, বনানী, গুলশান, উত্তরা, মিরপুরসহ আশেপাশের অনুষ্ঠান স্থলগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখে৷'' চড়া রোদ উপেক্ষা করেও পায়ে হেঁটে লাখ লাখ মানুষ মিলেছে এই প্রাণের উত্‍সবে৷ সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে – মানুষের স্রোত কেবলই বেড়েছে৷ সবার চোখে ছিল বাংলা মায়ের প্রতি ভালোবাসার ছবি, কণ্ঠে ছিল অশুভ শক্তি বিনাশী গান আর কবিতা৷

Bangladesch Neujahr Fest (Bildergalerie)
ছবি: DW/M. Mamun

নববর্ষকে স্বাগত জানাতে ঢাকার রাজপথে বসেছিল প্রাণের মেলা৷ প্রত্যুষে বৈশাখী উত্‍সব ও বর্ষবরণকে উপলক্ষ্য করে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে লাখো নর-নারী-শিশু৷ সোনারগাঁও হোটেল থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে চানখাঁরপুল, সায়েন্স ল্যাব থেকে মত্‍স্য ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পথে পথে, রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যান ভেসে গিয়েছিল বাঙালির প্রাণের জোয়ারে৷ বেইলি রোড এলাকা, বারিধারা, গুলশান, উত্তরাতেও ছিল খণ্ড খণ্ড অনুষ্ঠান ও মেলার আয়োজন৷ এ সব মেলায় চলেছে কেনাকাটা ও পান্তা খাওয়ার ধুম৷

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কর্মকর্তা সুজাতা রুদ্র ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন, ‘‘চিরকালের বাঙালি এখন শহরবাসী হয়েও ভুলে যায়নি তাদের ঐতিহ্য৷ তাই তো মেয়েরা এসেছে খোঁপায় ফুল আর ঐতিহ্যবাহী লাল-পেড়ে সাদা শাড়ি পরে৷ ছেলেরাও কিন্তু পাঞ্জাবি, ফতুয়া আর টি-শার্ট পরে বৈশাখী আমেজে সেজেছে৷ শিশুরাও কম যায়নি৷ টুকটুকে ঠোঁটে, পায়ে আলতা মেখে শাড়ি পরে বা পাঞ্জাবিতে মেতে ওঠেছে বৈশাখী আনন্দে৷''

তিনি বলেন, আজকের এই দিনে মনের রংয়ের সঙ্গে শরীরকে রাঙিয়ে তুলতে দারুণ তত্‍পর ছিল চারুকলার শিক্ষার্থীরা৷ রং-তুলির আলতো পরশে তারা গালে এঁকে দিয়েছে আলপনা৷ আসলে এটা দারুণ একটি দিন সবার জন্য৷

ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় রমনার বটমূলে যথারীতি ছিল ছায়ানটের প্রভাতী অনুষ্ঠান৷ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সুরমূর্ছনায় শুরু হয় আয়োজন৷ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানসহ রাজধানীর বিভিন্ন পার্কে ছিল বৈশাখের প্রভাতী অনুষ্ঠানের অসংখ্য আয়োজন৷ বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছিলেন বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি অতিথিরাও৷ এবারের শোভাযাত্রায় ছিল সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ছিল হাঁস, মাছের ঝাঁক, মা ও শিশু, লক্ষ্মীপেঁচা ও বেড়ালের মুখে চিংড়ি৷ আর ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে ছিল বাঘের মুখোশ ও শখেড় হাড়ি৷ পবিত্রতার প্রতীক ছিল শিশু হরিণ৷ সময়ের কাণ্ডারির প্রতীক ছিল হাতির দাত আর বাঘ৷ বাদ যায়নি সৌন্দর্য্যের প্রতীক ময়ূর আর তুহিন৷ ছায়ানটের অনুষ্ঠানের পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা৷ এতে কারো হাতে বাঘের মুখোশ, কারো হাতে হাতপাখা, কেউবা নিয়েছেন একতারা-দোতারা৷ বাঙালির ঐতিহ্যকে ধারণ করে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা ঢাক-ঢোল আর বাঁশি বাজিয়ে এগিয়ে চলে রাজপথ ধরে৷

মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্যতম সংগঠন আদিত্য বসু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বাঙালির ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই৷ তার জন্যই এই আয়োজন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য