1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানের সোয়াৎ উপত্যকায় শরিয়া আইন চালু নিয়ে বিতর্ক

২৩ এপ্রিল ২০০৯

সোমবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি রক্ষণশীল দলগুলোর চাপের মুখে সোয়াৎ উপত্যকায় শরিয়া আইন চালুর প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন৷ বিশেষজ্ঞদের মতে তালেবানদের উগ্র কর্মকান্ড ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট জারদারি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/HckO
পাকিস্তানের সোয়াৎ উপত্যকা এলাকা (হলুদ অংশ চিহ্নিত)ছবি: GFDL / Pahari Sahib

বলা প্রয়োজন সোয়াত উপত্যকায় শরিয়া আইন চালু করা হবে তা নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই চলছিল জল্পনা-কল্পনা, সন্দেহে দুলছিল পাকিস্তান৷ শেষ পর্যন্ত সব সন্দেহ এবং জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শরিয়া আইনকে বাস্তবে রূপ দেয়া হয়েছে৷ প্রশ্ন পাকিস্তানের জন্য বা পাকিস্তানের নারী সমাজের জন্য এই শরিয়া আইন কতটা অর্থবহ হবে বা হতে পারবে?

তবে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন উঠেছে আইনে কি রয়েছে তা এখনো পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে না৷ সম্পূর্ণ আইনটি পুরোপুরি বিশ্লেষণ করে এবং তার খুঁটিনাটি জেনে তা বাস্তবায়নে হয়তো আরো কয়েক মাস লাগবে৷ এই আইন চালুর পর সরকার মনে করছে তালেবানের ‘শরিয়া আইন' নিয়ে যে দাবী ছিল তা মেটানো গেছে৷ এখন হয়তো তালেবান জঙ্গিরা অস্ত্র সমর্পণ করবে৷ অন্যদিকে তালেবান জঙ্গিরা মনে করছে, সরকারকে শান্তিপূর্ণ এক পথে আনা গেছে৷ সমঝোতা সম্ভব হয়েছে৷ সম্ভব হয়েছে সরকারকে ‘সঠিক পথে' নিয়ে আসার৷ বলা প্রয়োজন তালেবান এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে ‘শরিয়া আইন' বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিলেন মাওলানা সুফী মোহাম্মদ৷

শরিয়া আদালত গঠন নিয়ে জটিলতা

পাকিস্তানের ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রী হামিদ সাইদ কাজমী গত মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান সবগুলো শরিয়া আদালতে বিচারপতি এখনো নিয়োগ করা হয়নি৷ কে বিচারক হবে, তাঁর যোগ্যতা কি হবে - তা নিয়ে এখনো আমরা আলোচনা করছি৷ এ বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি৷ মাত্র ৭ জনকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ প্রশ্ন উঠেছে সোয়াৎ উপত্যকায় পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কেমন হবে সে বিষয়ে৷ স্থানীয় সরকারই বা কোন ধরনের ভূমিকা পালন করবে – তা-ও অনেকেই জানতে আগ্রহী৷

Gewalt in Pakistan Zerstörte Mädchenschule
তালেবানরা গুড়িয়ে দিয়েছে একটি বালিকা বিদ্যালয়ছবি: AP

এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ইসলামিক শরিয়া আদালতে একজন বিচারকের নিয়োগ নিশ্চিত করা গেছে৷ তিনি মাওলানা রহমান৷ নিয়োগ পাওয়ার পরপরই সোয়াৎ উপত্যকার প্রধান শহর মিঙ্গোরার অন্তত এক ডজন মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বক্তব্য রাখেন যারা সে সময় আদালতে উপস্থিত ছিল৷ মাওলানা রহমান সোয়াৎ উপত্যকায় তালেবানদের কমান্ডার ছিলেন৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁর কর্মকান্ডে তিনি ছিলেন বেশ সক্রিয়৷

সোয়াৎ উপত্যকায় শরিয়া আইন চালু করায় গোটা পাকিস্তান তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিবাদে ফেঠে পড়ে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো হুমকি দিয়ে বলে অমানবিক শাস্তি এবং বিচারকার্য আমাদের দেখতে হবে৷ যেমন হাত পা কেটে ফেলা, চাবুক মারা বা বেত্রাঘাত করা অথবা পাথড় ছুড়ে মারা৷ এছাড়া আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও আপত্তি লক্ষ্য করা গেছে৷ তারা জানায় একই দেশে দু ধরনের আইন প্রবর্তন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে৷

তবে অবাক হলেও সত্যি যে, সোয়াত উপত্যকার বাসিন্দারা এই শরিয়া আইনকে বেশ সহজভাবেই মেনে নিয়েছে, অথবা বলা যেতে শরিয়া আদালত প্রতিষ্ঠা হওয়ায় তারা খুশীই হয়েছে৷ সোয়াৎ উপত্যকার স্থানীয় বাসিন্দা উমর হায়াত জানায়, আমরা বিশ্বাস করি এবং এখন আমরা আশা করছি অতি দ্রুত বিচারকার্য শেষ হবে৷ একই সঙ্গে ন্যায়-বিচার আমরা পাবো৷ উমর হায়াতের মতে, অতীতে দেখা গেছে কোন বিচার কার্য শেষ হতে বছরের পর বছর লেগে যাচ্ছে কিন্তু এখন কয়েকদিনের মধ্যেই বিচারকার্য শেষ হচ্ছে৷ রায় দেয়া হয় দ্রুত৷ সবচেয়ে বড় কথা আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান৷

এ বছরের ১৮ই ফেব্রুয়ারী থেকে সোয়াৎ উপত্যকায় শরিয়া আদালত তাদের কাজ শুরু করেছে৷ মাওলানা রহমান ইতিমধ্যেই প্রায় ২০টি বিভিন্ন মামলার বিচারকাজ শেষ করেছেন৷ আরো প্রায় ১০০টি মামলার শুনানী চলছে৷ শরিয়া আইনের ওপর ভিত্তি করেই রায় দেয়া হচ্ছে৷

Präsidentenwahl in Pakistan - Zardari pixel
তালেবানদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঠেকাতে শরিয়া আইন চালুর প্রস্তাবে রাজী হয়েছেন জারদারিছবি: picture-alliance/ dpa


এক রাষ্ট্রের মধ্যে আরেক রাষ্ট্র

সোয়াৎ উপত্যকায় শরিয়া আইনের প্রবর্তন নিয়ে পাকিস্তানের সুশীল সমাজ কি ভাবছে? পাকিস্তানের নারীদের তা কতটুকু সাহায্য করবে? আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি কি আরো ক্ষুন্ন হল? এ প্রসঙ্গে করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপিকা নওশিন ওয়াসির বলেন, এই আইন চালুর পর পাকিস্তানের যে প্রতিচ্ছবি সারা পৃথিবীর সামনে উঠে এসেছে - বুঝতে হবে যে আশংকা সবাই করছে তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ এই আশংকা আমরা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছি না৷ এখন আমাদের দেখতে হবে পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ অবস্থা কেমন৷ ঠিক কোন অবস্থায় এই আইনটি চালু করা হয়েছে৷ সোয়াত উপত্যকার অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তপ্ত৷ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাইলট বিহীন বিমান হামলার পর৷ পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল৷ যার কারণে পাকিস্তান সরকার শুরুতে বলেছে এই আইন খুব বেশী দিন স্থায়ী বা কার্যকর থাকবে না৷ পরে পরিস্থিতি যখন শান্ত হবে তখন আইনে বেশ কিছু অংশে পরিবর্তন আনা হবে৷ এ কথা বলার মূল কারণ হল সোয়াতের স্থানীয় বাসিন্দাদেরও শান্ত রাখা৷ সোয়াতের পরিস্থিতি শান্ত রাখা খুবই জরুরী৷

নওশীন ওয়াসীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সোয়াত উপত্যকার স্থানীয় বাসিন্দারা এই আইনকে পুরোপুরি সমর্থন করছে অর্থাৎ বলা যেতে পারে কি যে এই শরিয়া আইন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে? উত্তরে তিনি বলেন, পাকিস্তানের অনেকেই কিন্তু এই আইনের বিপক্ষে৷ তবে একটি বিষয়ে সবাই একমত আর তা হল ন্যায় বিচার সবার প্রাপ্য৷ এর অংশীদার সবাই৷ তবে প্রশ্ন কিভাবে এই আইন কার্যকর করা হবে৷ কোন কোন ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে, তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ এ কারণে আশংকার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে যে পরিস্থিতি হয়তো আরো নাজুক হবে৷ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হয়তো আগের চেয়ে বাড়বে৷ কারণ উগ্রপন্থীদের মধ্যে শাস্তি দেয়ার যে সব প্রক্রিয়া প্রচলিত তা অত্যন্ত ভয়াবহ এবং অমানবিক৷ এর মধ্যে দিয়ে ন্যায়-বিচার কিভাবে সম্ভব তা এখনো প্রশ্নের সম্মুখীন৷ তা পরিস্কার করে আইনে উল্লেখ করা হয়নি৷ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি উদাহরণ আমরা দেখেছি তা সবসময়ই সোয়াৎ উপত্যকার ঘটনা বলে তুলে ধরা হয়েছে৷

প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই আইনে স্বাক্ষর করেছেন, এর পেছনে সোয়াত উপত্যকার উগ্রপন্থীরা রয়েছে৷ বিশেষ করে সুফী মোহাম্মদ - তিনি জানিয়েছেন শরিয়া আদালতের কোন রায়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কোন আদালতে আপিল করা যাবে না৷ এ ব্যাপারে অধ্যাপিকা নওশিন ওয়াসির বক্তব্য, কথা সত্যি৷ শরিয়া আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কোন আদালতে আপিল করা সম্ভব হবে না৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হচ্ছে যে পাকিস্তানের সংবিধানেই তা পরিস্কার করে উল্লেখ করা হয়েছে৷ যে কোন আদালতের রায় ইসলাম বা শরিয়ার বিরোধী হতে পারবে না৷ এই শরিয়া আদালতের মধ্যে দিয়ে একই দেশে দুই ধরনের আইনী শাসন চালু করা হল৷ শরিয়ার নাম দিয়ে শুরু করা হয়েছে নতুন আইনী ব্যবস্থা৷ এর অর্থ হল একটি রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্র তৈরী করা৷ কোন স্বাভাবিক চিন্তা চেতনা সম্পন্ন মানুষের পক্ষে তা মেনে নেয়া সম্ভব নয়৷

প্রতিবেদক মারিনা জোয়ারদার, সম্পাদনা আবদুস সাত্তার