1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তুবার শ্রমিকরা আবারও রাস্তায়

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২১ আগস্ট ২০১৪

বাংলাদেশে তুবা গ্রুপের ৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেয়ার পর আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা৷ বুধবার তাঁরা বাড্ডা এলাকায় মিছিল করতে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তা পণ্ড করে দেয়৷ আটক করে শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক মোশরেফা মিশুকে৷

https://p.dw.com/p/1CyDe
Bangladesch Tuba-Arbeiterinnen Protest Unbezahlte Löhne
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

ঈদের আগে বেতন-বোনাস না পেয়ে তুবা গ্রুপের পাঁচটি পোশাক কারখানার ১,৬০০ জন শ্রমিক অনশন শুরু করেন৷ ১১ দিন অনশন করার পর ঈদ পার করে দুই কিসত্মিতে তাঁদের বেতন দেয় বিজিএমইএ৷ তবে তাঁদের বোনাস এবং ‘ওভারটাইম' ভাতা এখনো দেয়া হয়নি৷ ওদিকে এরই মধ্যে মালিক দেলোয়ার হোসেন জামিনে ছাড়া পান৷

কিন্তু পাওনা আদায়ে শ্রমিকরা অবৈধ ধর্মঘট করেছেন, এমন অজুহাত দেখিয়ে তুবা গ্রুপের পাঁচটি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেন৷ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী, কারখানা বন্ধের এই ঘোষণা গত ১১ই জুন থেকে কার্যকর হবে৷ তুবা গ্রুপের শ্রমিকরা কারাখানা বন্ধের এই ঘোষণা পান সোমবার৷ ফলে পাঁচটি পোশাক কারখানার ১,৬০০ জন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন৷

এর প্রতিবাদে তুবা গ্রুপের শ্রমিকরা বুধবার বিকেলে ঢাকার গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে মিছিল-সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়৷ পুলিশের বাধা ও লাঠিপেটার মুখে শ্রমিকরা তাঁদের কর্মসূচি পালন করতে পারেননি৷

বুধবার দুপুরের পর থেকেই গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে তুবার শ্রমিকেরা জড়ো হতে শুরু করেন৷ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মিছিল শুরু করার আগ মুহূর্তে বাড্ডা থানা পুলিশ বাধা দেয়৷ পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে ব্যানার কেড়ে নেয়৷ এক পর্যায়ে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয় এবং পুলিশ শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে৷ এরপর মিছিলে যোগ দিতে আসা তুবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক মোশরেফা মিশুকে আটক করে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ৷

এদিকে আটকের আগে মোশরেফা মিশু সাংবাদিকদের কারখানা বন্ধের আইনি অবস্থা ব্যখ্যা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী কারখানা লে-অফ করলে শ্রমিকদের কয়েক কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ করতে হবে৷ সেই ভয়েই দেলোয়ার হোসেন অবৈধ ‘শ্রমিক ধর্মঘট' দেখিয়ে কারখানা বন্ধ করেছেন৷''

মিশু বলেন, ‘‘তুবার মালিককে আমরা সহজে ছেড়ে দেব না৷ শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ে শ্রম আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে৷ ইতিমধ্যে আইনজীবীর সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয়েছে৷ একই সঙ্গে তুবার শ্রমিকদের নিয়ে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে৷''

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা এখনো পরিশোধ করা হয়নি৷ পাওনা আদায়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম আমরা৷ কিন্তু পুলিশ স্বৈরাচারী কায়দায় আমাদের কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি৷''

মিশু আরও বলেন, ‘‘শ্রমিকরা যখন মজুরি পান না, তখন পুলিশ এগিয়ে আসে না৷ কিন্তু দাবি আদায়ে যখন তাঁরা রাস্তায় নামেন, তখন পুলিশ তাঁদের ওপর চড়াও হয়৷''

তবে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, ‘‘এটি খুবই ব্যস্ততম সড়ক৷ এখানে মিছিল-সমাবেশের পূর্ব অনুমতি না থাকায় তাঁদের বাধা দেওয়া হয়৷'' মোশারেফা মিশুকে আটকের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘‘তিনি আমাদের হেফাজতে আছেন৷''
তিন মাসের মজুরি, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাসের দাবিতে তুবা গ্রুপের পাঁচ কারখানার শ্রমিকরা ঈদের আগের দিন থেকেই শুরু করে টানা ১১ দিন উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সপ্তম তলায় কারখানায় অনশন করেন৷ শেষে বিজিএমইএ-র মধ্যস্থতায় ৬ এবং ৭ই আগস্ট দুই মাস এবং ১০ আগস্ট এক মাসের বকেয়া মজুরি ও ওভারটাইমের টাকা পান শ্রমিকরা৷ বিজিএমইএ-র সভাপতি তখন আশ্বাস দেন, শীঘ্রই শ্রমিকরা ঈদের বোনাস ও ওভারটাইম ভাতা পাবেন৷ কিন্তু তা এখনো দেয়া হয়নি৷ উল্টো দেয়া হয়েছে কারখানা বন্ধের নোটিস৷ সোমবার গ্রুপের তুবা টেক্সটাইল, তায়েব ডিজাইন, মিতা ডিজাইন, বুকশান গার্মেন্টস ও তুবা ফ্যাশনসের কারখানার ফটকে নোটিস লাগিয়ে দেন দেলোয়ারের লোকজন৷
তবে এর আগে বিজিএমইএ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরা আইন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাবেন৷

এদিকে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দেলোয়ারের এই সিদ্ধান্তকে ‘আইনসম্মত' বলে অভিহিত করেছেন৷ বিজিএমইএ-র সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘‘পাওনা আদায়ের জন্য উত্‍পাদন বন্ধ করা উচিত নয়৷ ফলে দেলোয়ার আইনসম্মতভাবেই কারখানা বন্ধ করেছেন৷''
তবে শ্রম বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘শ্রমিকরা বেআইনি ধর্মঘট করেননি৷ ফলে ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী, কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত অবৈধ৷ মালিক এ ক্ষেত্রে লে-অফ বা শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারতেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য