1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ

৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪

আফ্রিকা মহাদেশে ধর্ম এবং ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে মেয়েদের ওপর চলে নানা ধরনের অমানুষিক নির্যাতন৷ যৌনাঙ্গচ্ছেদ তাদের মধ্যে একটি৷ তবে মালিতে সম্প্রতি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন নারী ও ধর্মীয় নেতারা৷

https://p.dw.com/p/1B5Sw
Symbolbild weibliche Genitalverstümmelung Beschneidung
ছবি: picture-alliance/dpa

মেয়েরা যেন সহবাস উপভোগ করতে না পারে বা সতীত্ব রক্ষার নামে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা এফজিএম করা হয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসেব অনুযায়ী, ঐ দুই মহাদেশের ২৯টি দেশের প্রায় ১২০ থেকে ১৪০ মিলিয়ন নারী অমানবিক এই ঘটনার শিকার হয়েছেন৷

ইউনিসেফের মতে, মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে তাদের শরীরে তাত্ক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী নানান সমস্যা দেখা দেয়৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অমানবিক কাজটি করানো হয় অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা৷ এছাড়া, কোনো ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই এ কাজটি করা হয়ে বলে এতে যেমন প্রচুর রক্তপাত হয় তেমন ব্যথাও হয় ভীষণ৷ বাচ্চা প্রসবের সময় এই নারীরা যে যন্ত্রণা ভোগ করেন তা ভাষায় বলে বোঝানো মুশকিল৷ এর ফলে অনেকে মা হবার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেন৷ অনেকে অত্যধিক রক্তক্ষরণে মারাও যায়৷

মালির অধিবাসী ডিকো অনগোয়িবা যখন ছোট ছিলেন, তখন তাঁকেও এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে এবং এ বিষয়ে আলোচনা ছিল নিষিদ্ধ৷ এখন তাঁর বয়স ৪০ বছর৷ অথচ মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর যৌনাঙ্গচ্ছেদ হয়েছে৷ নিজের প্রথম ৬ মেয়ের ক্ষেত্রেও অনগোয়িবা এই কাজ করেছেন৷ কিন্তু এখন তার উপলব্ধি হয়েছে, এর ফলে সন্তান জন্মদানে বেশ কষ্ট হয় তাঁর৷ আর তাই তার ছোট দুই মেয়ের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গচ্ছেদ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত খুব সহজ নয়, কেননা সমাজের দ্বারা প্রত্যাখ্যান হওয়ার ভয় থাকে৷ আর তিনি না করলেও সমাজের লোকজন জোর করে তাদের করে দিতে পারে৷

বৃহস্পতিবার ছিল ‘জিরো টলারেন্স টু জেনিটাল মিউটিলেশন' বা আন্তর্জাতিক যৌনাঙ্গচ্ছেদ বিরোধী দিবস দিবস৷ মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে বেসরকারি সংস্থা টোস্তান সেদিন মালির রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ এই সংগঠনটিতে আফ্রিকার আটটি দেশের ৭ হাজার কর্মী কাজ করেন৷

টোস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মলি মেলচিং জানান, এই আয়োজনের ফলে অনেক মা তাদের সন্তানদের এই অমানুষিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচানোর ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছেন৷ তবে তিনি বলেন, এ জন্য সমাজে নারীর প্রতি সম্মান বাড়ানোটা খুব জরুরি৷ এমন সমাজ গড়ে তুলতে হবে যেখানে অভিভাবকরা তার সন্তানটিকে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে দিবেন না এবং যিনি ঐ নারীকে বিয়ে করবেন তিনিও চাইবেন যে মেয়েটির যৌনাঙ্গচ্ছেদ না করা হোক

এদিন অনগোয়িবা ঐ যোগ দিয়েছিলেন৷ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মালির ৮৯ ভাগ নারী ও মেয়ে শিশুরা যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার৷ ফান্তা করোমা নামে একজন গৃহিণী জানান, ১৯৮২ সাল থেকে তিনি এফজিএম এর বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন৷ কেননা যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে এক মেয়েকে হারিয়েছেন তিনি৷ দ্বিতীয় যে কন্যা সন্তানটি হয়েছে, তারও জীবন সংশয় রয়েছে৷ বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশ্বের অন্তত ৮ কোটি ৬০ লাখ নারী ২০৩০ সালের মধ্যে এই পরিস্থিতির শিকার হবে বলে জানিয়েছে ইউএনএফপিএ৷

অনুষ্ঠানে যোগ দেন মালির বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতারাও৷ ১৪টি সম্প্রদায়ের মুখপাত্র মোসোকোরা সিদিবে অবশ্য জানান, তারা তাদের সম্প্রদায়ে জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন এবং এফজিএম এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন৷

এটিকে ধর্মীয় প্রথা হিসেবে চালালেও বর্তমানে কিছু ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান শরীফে নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের কথা বলা নেই৷ এসব নেতারা টোস্তানের সাথে তিন বছর ধরে কাজ করছেন৷ তাদের উদ্দেশ্যে জনসমক্ষে বিষয়টি তুলে ধরা, যাতে প্রতিটি সম্প্রদায় সমাজ সচেতনে সোচ্চার হয় এবং যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধ করে৷

এপিবি/ এসবি(এপি, এএফপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য