1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মত প্রকাশের স্বাধীনতা

ইমরান এইচ সরকার৩ মে ২০১৫

‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা' ও ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা' – এ বিষয়গুলো কেতাবি দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করা যতটা সহজ, বাস্তব অবস্থায় এর মূল্যায়ন হয়ত ততটা সহজ নয়৷ আবার এটাও সত্য যে, আপাত যা কিছু বাস্তব, তারও একটি গড়ন প্রক্রিয়া আছে...

https://p.dw.com/p/1FIBX
Symbolbild zur Pressefreiheit
ছবি: picture-alliance/dpa

...আর সেই গড়ন প্রক্রিয়ার অন্যান্য অনেকগুলো নিয়ামকের সঙ্গে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা' ও ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা'-ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ৷ একটি সমাজ ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র বুঝতে হলে, সেই সমাজে এই দুটি নিয়ামকের হালচাল বিবেচনাও জরুরি হয়ে পড়ে৷

গভীরভাবে বিবেচনা করলে দেখা যাবে, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা' ও ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা' আসলে একে উপরের পরিপূরক৷ দুটোর কোনো একটি নিয়ে সমাজের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, কারণ কালের বিবর্তনে গণমাধ্যম এখন কেবল একটি তথ্যপ্রাপ্তির মাধ্যমই নয়, এটি হয়ে উঠেছে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থারও চালিকা শক্তি৷ এ তুলনায় অবশ্য ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি এখনও তেমন জোরালো ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না৷ দৈনন্দিন ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়, এখনও আমাদের সমাজে (বা পৃথিবীর নানা সমাজেই) ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতাটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না৷ অতএব, দুটো পরিপূরক বিষয়ের মধ্যে একটি দৌড়ে এগিয়ে আছে; এতে লাভ হচ্ছে না লোকসান, এই আলোচনারও এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থা৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমি যে মতামতটুকু এই লেখায় ব্যক্ত করবো, তাতে আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে হয়ত, কিন্তু আদতে দুটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক প্রত্যয়ের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য আসবে কি?

আমি গণযোগাযোগ বিশ্লেষক নই, তাই কোনো তাত্ত্বিক সংজ্ঞায়নে আমি যাব না৷ যেহেতু মানুষের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ, মানুষকে সঙ্গে নিয়েই অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আমি একজন কর্মী, তাই মানুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার স্পষ্টতাই এ লেখার মূল উপজীব্য৷ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লেখার বিষয়বস্তু বিবেচনা করলে অবশ্যই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে আলোচনায় আনতে হবে৷ সাতচল্লিশ-উত্তর সময় থেকেই দর্শনগত প্রশ্নে বাংলার মানুষ উপেক্ষিত হয়েছে৷ দ্বিজাতিতত্ত্ব নিশ্চিতভাবেই ছিল গুটি কয়েক রাজনৈতিক দলের মতামত; তাঁদের বাইরে সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ তখনও দেশভাগ চায়নি৷ পাকিস্তান সৃষ্টির ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, তাতে লাভবান হয়েছিল ইস্পাহানী ও আদমজী পরিবার৷ সাধারণ মানুষের কাছে পাকিস্তান সৃষ্টি একটি ভেলকি ছাড়া আর কিছুই না৷ আর সেই ভেলকির হিংস্রতা সাতচল্লিশের অব্যবহিত পরেই বাংলার মানুষ বুঝতে পেরেছিল৷ গুটি কয়েক হিন্দু-মুসলমান শিল্পপতি ও ধর্ণাঢ্য পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক কূটকৌশলের যোগে এই দেশভাগ হলো, তাতে আসলে কেবল মানচিত্রই ভাগ হয়নি, ভাগ হয়েছিল মানুষও৷ যে মানুষ একসঙ্গে থেকেছে ঈদ-পূজা-পার্বনে, আনন্দ বেদনা ভাগাভাগি করেছে উৎসবে আমেজে৷

প্রশ্ন হলো, তাহলে তারা কেনো সাতচল্লিশের দেশভাগকে মেনে নিল? কেন তারা নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে কাজে লাগালো না? এর প্রধান কারণ হলো, সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতি মানুষকে দ্বিধাবিভক্ত করেছিলো দাঙ্গার অপকৌশলে, অর্থাৎ যে মত তাদের প্রকাশ করার কথা স্বাধীনভাবে, তার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হলো দাঙ্গার হিংস্রতা দিয়ে৷ পাকিস্তান আমলে বাংলার মানুষ আবার তাদের মতামত প্রকাশ করেছে দৃঢ়ভাবে৷ কিন্তু সেও মেনে নেয়নি তৎকালীন বর্বর পাকিস্তান সরকার৷ মাতৃভাষার প্রশ্নে মত প্রকাশের জন্য গুলি, শিক্ষার অধিকারের প্রশ্নে মত প্রকাশের জন্য হত্যা, বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়দফার বিরুদ্ধে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক নষ্টামি এবং সবশেষে সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ মত প্রকাশের পর ত্রিশ লক্ষাধিক শহিদের রক্ত আর দুই লক্ষাধিক নারীর বর্বর করুণ নির্যাতনের পথ ধরে হেঁটে পাওয়া স্বাধীনতা৷ মুক্তিযুদ্ধের আগেও পাকিস্তান সরকার বারবার বাঙালির মুক্তির প্রশ্নে অটল থাকা গণমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, সম্পাদক ও লেখকদের গ্রেপ্তার করেছে৷ নিষিদ্ধ করেছে অনেক গ্রন্থও৷ সুতরাং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া স্বাধীনতা, স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে ব্যক্তির মত প্রকাশেরও স্বাধীনতা, স্বাধীন রাষ্ট্রের মৌল কাঠামোতে থাকা গণমাধ্যমেরও স্বাধীনতা৷ কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে এই ৪৪ বছরে সেই স্বাধীনতা কতটুকু রক্ষিত হয়েছে?

Imran H Sarker Blogger aus Bangladesch
ইমরান এইচ সরকারছবি: privat

এই প্রশ্নের উত্তরে যাবার আগে আরেকটু আলোচনা করবো ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা' ও ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা' – এ দুটো প্রত্যয় নিয়ে৷ বলাই বাহুল্য, দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় গণমাধ্যমের ধারণায় এখন আমূল পরিবর্তন এসেছে৷ সাংবাদিকতা এখন বৃত্তি থেকে শিল্পে পরিণত হয়েছে৷ সমাজের একটি বড়ো অংশ, কার্যত গোটা সমাজব্যবস্থাই এখন গণমাধ্যম দ্বারা প্রভাবিত৷ কিন্তু অনেক শক্তিশালী এই গণমাধ্যম কতটুকু স্বাধীন? তার চেয়েও বড়ো কথা, এই গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ কতটুকু স্বাধীন হবার মানসিকতা রাখেন? ঠিক এই জায়গাটিতে এসে আমরা আরেকবার তাকাবো ‘ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা' প্রত্যয়টির দিকে৷ যে সমাজে ব্যক্তি স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে না, বা সেই চর্চাটি তার মাঝে নেই, সেই সমাজে গণমাধ্যমও কার্যকর স্বাধীনতা লাভ করতে পারে না – কথাটি ব্যাখ্যা করা দরকার৷

বাংলাদেশের প্রসঙ্গই যদি ধরি, এখানে প্রতিটি গণমাধ্যমেরই একটি পরিচালনা পর্ষদ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা থাকেন৷ পৃথিবীর অন্যান্য গণমাধ্যমেও তাই৷ কিন্তু এই ব্যক্তিবর্গের বাইরে একটি গণমাধ্যমের যে মূল চালিকাশক্তি, অর্থাৎ গণমাধ্যমকর্মী, তাঁরা স্বাধীন সাংবাদিকতার যে ধারা তা চাইলেও অব্যাহত রাখতে পারেন না৷ এর মূল কারণ বলে আমার কাছে যেটি মনে হয়, তা হলো, বাংলাদেশের প্রায় সব গণমাধ্যমেরই নিয়ন্ত্রক ব্যক্তিরা হন ব্যবসায়ী বা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা৷ যিনি ব্যবসায়ী, তিনি এটিকে গ্রহণ করেন তাঁর অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মতোই; তাঁর কাছে লভ্যাংশটাই আসল; আর যিনি রাজনৈতিক দলের নেতা, তিনি এটিকে পার্টি মেশিন হিসেবেই ব্যবহার করেন৷ দু'ক্ষেত্রেই সাংবাদিকতার মূল আদর্শ বা লক্ষ্য নির্বাসিত৷ বাকি রইলেন গণমাধ্যমকর্মবৃন্দ, তাঁদের হাত-পা অনেকক্ষেত্রেই বাধা, কেননা তাঁদেরকেও মেনে নিতে হয়, প্রতিটি গণমাধ্যমে ‘মালিক পক্ষ' বলে একটি বিষয় আছে৷ তিনি এখানে ‘সাংবাদিক' নামের ‘কর্মচারী' বা ক্ষেত্রবিশেষে ‘কর্মকর্তা' মাত্র৷

তার মানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলে যে গালভরা কথা আমরা শুনি, তা আসলে ওই শিল্পপতি মালিক বা রাজনৈতিক দলের নেতার স্বাধীনতা, অর্থাৎ পার্টি বা পুঁজির স্বাধীনতা৷ অন্যদিকে গণমাধ্যম যেহেতু একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়, এর একটি বড়ো টিম ওয়ার্ক রয়েছে৷ সুতরাং গোষ্ঠী বা দলচর্চা এখানেও অব্যাহত৷ এটি অবশ্য পৃথিবীর অনেক দেশের গণমাধ্যমেরই একটি সাধারণ চিত্র৷ এই ‘টিম ওয়ার্ক'-টি যদি ইতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হতো, তবে কোনো কথাই ছিল না, কিন্তু প্রায় সবক্ষেত্রেই এটি ব্যবহৃত হয় নেতিবাচক পদ্ধতিতে৷ অর্থাৎ সার্বিক পরিস্থিতি তথৈবচ!

Blogger Avijit Roy ###ACHTUNG SCHLECHTER QUALITÄT###
মৌলবাদীর চাপাতির আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন অভিজিৎ রায়ছবি: Privat

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চেয়ে বড়ো বিষয় তথা প্রশ্ন হলো, আদৌ কি গণমাধ্যম চায় স্বাধীন হতে? আমরা প্রায়শই লক্ষ্য করি, যে দলই রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে, তারাই বলে, গণমাধ্যম স্বাধীনতা ‘ভোগ' করছে৷ ক্ষমতার বাইরে থাকলে একই রাজনৈতিক দল উল্টো কথা বলে থাকেন৷ এটি একটি লক্ষ্য করার মতো বিষয় যে, সরকার সবসময়ই ভাবেন, এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরাও ভাবেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাটি ‘ভোগ'-এর বিষয়৷ ব্যাপারটি কি আসলে তাই? গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার মানে হলো, সমাজের প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে বৃহৎ সমাজের কাছে৷ অর্থাৎ সমাজের নানা সঙ্গতি-অসঙ্গতিগুলো উঠে আসবে মানুষের সামনে৷ এটিই তো গণমাধ্যমের কাজ৷ তাকে এই কাজের পরিবেশ দেয়াটা সরকারের দায়িত্ব৷ সরকার এখানে দয়া করে কিছু দিচ্ছে না যে এটাকে ‘ভোগ' বলে চালিয়ে দেবেন৷ অন্যদিকে গণমাধ্যমের মালিকরাও এটিকে ভোগ হিসেবেই দেখছেন, কারণ তাঁরাও হয়ত জানেন, সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে আনলে ইঞ্চি কলামের মাপে নিজেদের ‘পোর্টফোলিও'-টাও ছাপা হয়ে যেতে পারে৷ কে আর সত্য বলে ভোগ বঞ্চিত হতে ভালোবাসে!

এবার একটু চলচ্চিত্রের মতো ফ্ল্যাশব্যাকে যাবার চেষ্টা করি৷ একজন গণমাধ্যমের মালিকের উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করি আমরা৷ আমরা ফিরে যাই তাঁর শিশুকালে, যখন তিনি দুলে দুলে ছড়া মুখস্থ করতেন৷ তারপর তাঁর শৈশব, ছাত্রজীবন, তারুণ্য, কর্মজীবন ইত্যাদি৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি যে শিক্ষা লাভ করেছেন, তা ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে খুব একটা কার্যকর নয়৷ পরিবারে তিনি হয়ত দেখেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মায়ের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত, ভাই-বোনের তুলনায় বোনের মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রায় অকার্যকর, ছাত্রজীবনে হয়ত তিনি উপলব্ধি করেছেন কোনো ছাত্রসংগঠনের নেতা না হলে মত প্রকাশ কেবলই লবডঙ্কা, কর্মজীবনে তিনি দেখেছেন পুঁজির কাছে মত প্রকাশ নিছকই বাজারের সওদা৷ সুতরাং, তিনিও বুঝতে পেরেছেন, বিষয়টি অগুরুত্বপূর্ণ এবং তা না হলেও সবকিছু চলতে কোনো বাধা নেই৷ এই মানসিকতা যেমন তাঁর মাঝে ক্রিয়াশীল, তেমনি একজন গণমাধ্যমকর্মীর মাঝেও ক্রিয়াশীল৷

Reporter ohne Grenzen Protest vor der russischen Botschaft in Berlin 04.02.2014
ছবি: Getty Images

এর বাইরে আমরা যাঁরা সাধারণ মানুষ, যেহেতু তাঁরাও এই একই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে বড়ো হই, সুতরাং আমাদের মাঝেও ক্রিয়াশীল৷ তাহলে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে, ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটি কীবাবে কার্যকর হতে পারে, তার কোনো শিক্ষা আমাদের নেই৷ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাই আমাদের শিখিয়েছে, তুমি ভালো ফলাফল করবে নিজের মত প্রকাশ করে দেশ ও সমাজের উন্নয়নের জন্য নয়, একটি ভালো চাকরি করার জন্য৷ সুতরাং ব্যক্তির মত প্রকাশের ক্ষমতাটি চলে গেছে কিছু নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীর হাতে৷ সেই গোষ্ঠীর মতই ব্যক্তি নিজের মত বলে চালিয়ে দিচ্ছেন; তাও যদি বিষয়টি সত্য হতো৷

বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এই যে, আমাদের প্রচলিত শিক্ষা-সমাজ-রাজনীতি-সমাজনীতি কোনোটিই আমাদের শিক্ষা দেয় না, নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কতটুকু জরুরি৷ তাই আমরা অন্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য আদাজল খেয়ে নামি৷ এই আমরাই শিশু বয়স থেকে বড়ো হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাজ শুরু করি, রাষ্ট্র ও সমাজের নিয়ন্ত্রণকর্তা হই এবং নিজের মত প্রকাশের হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা লাভ করি বিভিন্ন গোষ্ঠী বা দলীয়চর্চার মাধ্যমে৷ এই আমাদের মধ্যেই কেউ যখন গণমাধ্যমের মালিকপক্ষ হয়ে যান, তখন তিনি নিজের গায়ের মাপে জামা বানিয়ে নেন, সেই নানা রঙের জামার সঙ্গে রঙ মিলিয়ে গণমাধ্যম-কর্মচারি ও গণমাধ্যম-কর্মকর্তা নিয়ে শুরু করি গণমাধ্যম শিল্প লক্ষ্য লভ্যাংশ৷

এর বাইরের দৃশ্যপট যে নেই, তা কিন্তু নয়৷ তবে তা একই সঙ্গে বেদনাবিধুরও৷ আমরা দেখেছি নিজস্ব মত প্রকাশ করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কী নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন সাংবাদিকরা, মৌলবাদীর চাপাতির আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন অভিজিৎ রায়রা, বর্বরতম আক্রমণের শিকার হয়েছেন হুমায়ূন আজাদরা৷ অর্থাৎ মগজের অন্ধকার যতোই প্রকট হোক, আলো হাতে তবুও কিছু আঁধারের যাত্রী হেঁটেছেন, হাঁটছেন এখনও৷ ব্যক্তির মত প্রকাশের একটি বড়ো মাধ্যম হয়ে উঠেছে অনলাইন মাধ্যমগুলো৷ ফেসবুক, টুইটার, ব্লগগুলোতে মুক্তমনের মানুষেরা নিজেদের মত প্রকাশ করছেন বলিষ্ঠ ও যৌক্তিকভাবে৷

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ‘বলিষ্ঠতা' ও ‘যৌক্তিকতা'-ই কি একমাত্র মাপকাঠি? আমার মনে হয় না৷ ‘প্রকাশভঙ্গি' ও ‘সচেতনতা'ও একটি বড়ো বিষয়৷ যেহেতু মতামতটি ব্যক্তিগত হলেও প্রকাশের পর আর তা ব্যক্তিগত থাকছে না, বরং মুহূর্তের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ছে কোটি কোটি মানুষের মাঝে, তাই তা প্রকাশের বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতেই হবে৷ ব্যক্তিগত উঠোন থেকে কোটি মানুষের নাছদুয়ারে যে মতামত পৌঁছে যাচ্ছে, তার প্রকাশভঙ্গিটাও তো হতে হবে যথাযথ৷ এখন এই ‘যথাযথ'-টুকু কে ঠিক করবেন? উত্তর হচ্ছে, ব্যক্তি নিজেই৷ সেক্ষেত্রে যে ভিন্নতাটুকু আসবে, তাকে বৈষম্য থেকে বৈচিত্র্যে, তর্ক থেকে বিতর্কে তুলে আনার শিক্ষাটাও থাকতে হবে৷ সুতরাং শিক্ষার বিকল্প নেই৷ ঋদ্ধ মানসিকতা নিয়ে কেউই জন্মায় না, একটি শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে জন্ম নেয় বোধ আর চিন্তার ঋদ্ধতা৷ সেই শিক্ষাটা যেমন হবে প্রাতিষ্ঠানিক, তেমনি হবে পারিবারিক ও সামাজিক৷ এর সমন্বয় না ঘটলে, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা' ও ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা' – দুটো বিষয়ই কেবল কলাম লেখার বিষয় হয়ে থেকে যাবে৷ ছাপার অক্ষরের বাইরে তার আর কোনো প্রাণ থাকবে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য