1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতিসংঘের সংস্থার সদস্যপদ দায়িত্ব বাড়িয়ে দিল

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২২ অক্টোবর ২০১৪

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচআরসি-র সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ৷ সরকার বলছে, এতে বাংলাদেশের প্রতি বহির্বিশ্বের আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে৷ আর মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এর ফলে বাংলাদেশের দায়িত্ব বেড়ে গেল৷

https://p.dw.com/p/1DZlN
Afghanistan Frauen Moral Gefängnis
(প্রতীকী ছবি)ছবি: picture-alliance/AP Photo

মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বাংলাদেশ ১৪৯ ভোট পেয়ে আগামী ২০১৫-১৭ সাল মেয়াদে মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য পদে দায়িত্ব পেয়েছে৷ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ সদস্য নির্বাচিত হলো৷ নির্বাচনে এই অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট চারটি আসনের বিপরীতে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও কাতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে৷

তবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং দেশের ব্যাপারে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে৷ বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, খুন, গুম, অপহরণ, বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ সমালোচিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই৷

এই পরিস্থতিতে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট একটি যৌথ প্রস্তাব পাস করে৷ প্রস্তাবে র‌্যাব ও অন্যান্য নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর অব্যাহত মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি গুরুত্ব পায়৷ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে৷ নারায়ণগঞ্জে বহুল আলোচিত সাত খুনের মামলার বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট৷ আর মিডিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিয়ে তার প্রতি সম্মান দেখাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে নতুন সম্প্রচার নীতিমালা বাতিলের আহ্বানও জানানো হয়৷

Logo Amnesty International
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো অনেকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে

বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও৷ আর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ধারাবাহিকভাবে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে৷

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সেপ্টেম্বর মাসে এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশে অপহরণ, মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা ও নির্যাতন বন্ধ হয়নি৷ সংস্থাটির দাবি, তারা ২০টি অপহরণ ঘটনার সন্ধান পেয়েছে যেখানে সরাসরি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জড়িত৷ এদের মধ্যে ৬ জন দু'মাস পরে ফিরে এসেছে, ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি ৫ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি৷

বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাব ‘ডেথ স্কোয়াড' হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত জুলাইয়ে৷ তারা র‌্যাব ভেঙে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠিও দেয়৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলেন, ‘‘স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে প্রায় ৮০০ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব দায়ী৷''

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক ও মানবাধিকার নেতা নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছে, এটা সুখবর৷ তবে এটা বাংলাদেশের দায়িত্বও বাড়িয়ে দিল৷ কারণ বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দেশ হিসেবে পরিচিত৷ তাই এখন বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার রক্ষায় কী ভূমিকা নেয় তা-ই দেখার বিষয়৷''

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে শুধু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে কন্ট্রাকট কিলিং-এর অভিযোগও আছে৷ র‌্যাবের হাতে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা তার বড় প্রমাণ৷ সাতজনকে অর্থের বিনিময়ে হত্যা করা হয়েছে৷''

নূর খান বলেন, ‘‘র‌্যাব গঠন হওয়ার পর প্রায় ১,০০০ জন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন৷ কয়েকশ মানুষ অপহরণ ও গুমের শিকার হয়েছেন৷ এসব ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ আছে৷ রাজনৈতিক নেতারাও অপহরণ ও গুমের শিকার হচ্ছেন৷''

তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘এখন বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে৷ সরকার বিরোধী সমালোচনার জন্য হয়রানির শিকার হতে হয়৷ বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের ওপর রয়েছে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা৷''

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারকে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ সেটা না পারলে মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য পদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না বাংলাদেশ৷'' তবে তিনি আশা করেন, ‘‘এবার বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় হয়ত পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য