1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চট্টগ্রামকে ঘিরে জেএমবির নতুন তত্‍পরতা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৩ মার্চ ২০১৫

নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র একজন আঞ্চলিক কমান্ডারকে চট্টগ্রামে আটকের পর জানা গেছে, জেএমবি নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে৷ তার কাছ থেকে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/1EvZ2
Symbolbild islamistischer Kämpfer
ছবি: Fotolia/Oleg Zabielin

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির আটক সদস্য এরশাদ হোসেন মামুন চট্টগ্রামের জেলা কমান্ডার৷ তাকে চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার নিউ মনসুরাবাদ বাগানবাড়ি আবাসিক এলাকার এনআর গেইটের একটি বাসা থেকে সোমবার সকাল ৮ টার দিকে আটক করা হয়৷ ওই বাসা থেকে গ্রেনেড ও বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম, গান পাউডার, জেল ও বিস্ফোরকও উদ্ধার করা হয়েছে৷ পাওয়া গেছে বেশ কিছু জিহাদি বই ও একটি সাইকেল৷

এরশাদ হোসেন মামুনের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, জেএমবি নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে৷ শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির পর দ্বিতীয় সারির নেতাদের গ্রেপ্তারেও সংগঠনটির মনোবল ভাঙা যায়নি বলে দাবি এরশাদ হোসেন মামুনের আর নতুন করে সংগঠিত হওয়ার জন্য প্রধানত চট্টগ্রামসহ দেশের আরো কিছু অঞ্চলকে বেছে নেয়া হয়েছে বলে্ও সে জানিয়েছে৷

আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুদীপ কুমার দাস ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আটক হওয়ার পর মামুন জানিয়েছে, চট্টগ্রামে জেএমবির সদস্যরা একশ'টিরও বেশি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে৷ এসবের মধ্যে রয়েছে ফাস্ট ফুড, স্টেশনারি, কসমেটিকস, ফটোস্ট্যাট, ফ্যাশন হাউজ, সেলুন ও ফুটপাতের দোকান৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ এড়াতে তারা এই কৌশল বেছে নিয়েছে৷ সে জানিয়েছে, চট্টগ্রামে জেএমবির দায়িত্বে আছেন ১৫-২০ জন, এহছার সদস্য ১০০-১৫০ জন, গায়েরি এহছার সদস্য ৫০০ জন এবং অনেক আনসার সদস্য৷''

আটক মামুন নিজেও চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার কর্নেলহাট এলাকায় নিউ মনসুরাবাদ স্টেশনারি, ফটোস্ট্যাট অ্যান্ড কসমেটিকস নামের একটি দোকানে চাকরির আড়ালে জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে কাজ করতেন৷

মামুন আটক হওয়ার পর সাংবাদিকদের জানান, ২০১১ সালে দিনাজপুরের বালান্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি এসএসসি পাশ করেন৷ তখন তিনি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ ওই বছর বগুড়ায় সাংগঠনিক একটি কর্মসূচিতে পরিচয় হয় গাইবান্ধা জেলা শিবিরের নেতা আল ফুয়াদ রকি ওরফে আপেলের সঙ্গে৷ আপেল পরবর্তীতে বগুড়া জেলা জেএমবিতে যোগদান করে চট্টগাম বিভাগের দায়িত্ব নেন৷

আপেলের হাত ধরে জেএমবিতে যোগদান করেন মামুন ৷ প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পর ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে চট্টগ্রামের দায়িত্ব দেয়া হয়৷ মামুনের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বালান্দর গ্রামে৷

চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এর আগেও জেএমবির কয়েকজন কর্মীকে চট্টগ্রাম থেকে আটক করা হয়েছে৷ এবার শীর্ষ কোনো নেতাকে আটক করা হলো৷ প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে চট্টগ্রামে তারা বড় কোনো নাশকতার পরিকল্পনা করছিল৷ তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো তথ্য বেরিয়ে আসবে৷''

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, ‘‘চট্টগ্রামে জেএমবি বড় ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজ করছিল৷ তারা এই অঞ্চলকে ঘিরে ‘ইসলামিক স্টেট' গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছিল৷ তাদের সঙ্গে ভারত, মিয়ানমার ও পাকিস্তানি জঙ্গিদের যোগাযোগ আছে৷ তাদের কর্মীদের একাংশ দেশের বাইরে প্রশিক্ষণও নিয়েছে৷''

২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসে জেএমবি৷ এরপর তারা একাধিক আদালতে হামলা চালায়, বিচারকও হত্যা করে৷ বিচারক হত্যার ঘটনায় জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়ক আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইসহ পাঁচ জঙ্গির ফাঁসি হয়৷ তারপর জেএমবিতে নতুন নেতৃত্ব এলে তাদেরও পর্যায়ক্রমে আটক করা হয়৷ দেশের বিভিন্ন কারাগারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তসহ প্রায় দুই হাজার জঙ্গি সদস্য আটক আছেন বলে কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে৷

ঢাকায় মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান, যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জেএমবির শীর্ষ নেতাসহ অনেককেই আটকের পর এখন হয়তো তারা আঞ্চলিকভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে৷ আর এইসময়ে আইএস-এর উত্থান জেএমবিকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করছে৷''

প্রসঙ্গত, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জেএমবির সদস্যরা ময়মনসিংহে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুইজনসহ তিন জেএমবি সদস্যকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য