গ্লেন ক্লাইন: গ্রাউন্ড জিরোর হিরো
১ আগস্ট ২০১১অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী গ্লেন ক্লাইন আজ বিগত দশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলতে রাজি৷ কিন্তু তাঁর স্ত্রী ক্যারল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চান না৷ গ্লেনই শোনালেন তার কারণ: দশ বছর আগে ক্যারল যখন তাঁর কিডনি দান করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন মিডিয়া থেকে টেলিফোনের পর টেলিফোন এসেছিল৷ ক্যারল বলেছিলেন, তিনি যা করছেন, তা পাবলিসিটির জন্য করছেন না৷
কিন্তু সাংবাদিকদের আগ্রহ ছিল বিপুল৷ কেননা ক্যারল যাকে একটি কিডনি দান করছিলেন, তিনি ছিলেন গ্লেনের এক বন্ধু এবং সহকর্মী, যিনি ঐ গ্রাউন্ড জিরোয় কাজ করতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ গ্লেন আর তাঁর ঐ সহকর্মী, দুজনেই ছিলেন নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ইএসইউ নামধারী একটি বিশেষ গোষ্ঠীর সদস্য৷ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দ্বিতীয় টাওয়ারটি ধসে পড়ার ঠিক আগে দু'জনে সেখানে গিয়ে পৌঁছন৷
বিষাক্ত ধুলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে বুকে ঢুকেছে
পরের ন'মাস ধরে গ্লেন গ্রাউন্ড জিরোতে কাজ করেছেন, যতোদিন না সেই দূষিত ধ্বংসস্তূপ অপসারিত হয়৷ প্রথম দিন থেকে শেষ দিন অবধি৷ বিশেষ পুলিশ গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে নাইন-ইলেভেন'এও তাঁর কাছে গ্যাস-মাস্ক ছিল৷ পরে বাতাস পরিশোধনের মুখোশ পরেই কাজ করেছেন৷ তবুও তাদের ফিল্টার গ্লেনের ফুসফুসগুলোকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম বিযাক্ত কণিকাগুলোর হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি৷
গ্লেন অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ বিশেষ করে পাকস্থলীর সমস্যা, যা আজও তাঁর সঙ্গী৷ গ্লেন বলেন, তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা যেখানে কাজ করেছেন, সেখানে নিঃশ্বাসের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু ঢোকার বিপদ নেই বলেই তাদের বলা হয়েছিল৷ কিন্তু বাস্তবে সরকারের তরফ থেকে মিছে কথা বলা হয়েছিল বলে আজ তাঁর ধারণা৷ সরকার যতো তাড়াতাড়ি গ্রাউন্ড জিরোকে আবার কাজে লাগাতে চেয়েছিল, স্টক এক্সচেঞ্জ ইত্যাদির কারণে - এই হল গ্লেনের ব্যাখ্যা৷
বন্ধুরা কোথায়?
১১ সেপ্টেম্বর গ্লেনের ডিউটি ছিল না৷ কিন্তু বিপর্যয়ের কথা শুনে নিজেই গিয়ে হাজিরা দিয়েছেন৷ পুলিশ ওয়্যারলেসে শুনেছেন, অন্য পুলিশকর্মীরা চিৎকার করছেন, ‘‘বাড়িটা থেকে দূরে থাকো! ওপর থেকে লোকে ঝাঁপ দিচ্ছে!'' গ্লেন যখন গ্রাউন্ড জিরোয় পৌঁছলেন, তখন দ্বিতীয় টাওয়ারটি ভেঙে পড়ছে৷ শুনলেন, তাঁর ১৪ জন সহকর্মী সেখানে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন৷ গ্লেন ও তাঁর সতীর্থরা হারানো সহকর্মীদের খুঁজতে শুরু করেন৷ শুধু দু'জনের মৃতদেহ খুঁজে পান৷
আর শক্তি নেই
বিশ বছর পুলিশ বিভাগে কাজ করার পর ২০০৩ সালে অবসর নেন গ্লেন ক্লাইন৷ ভালো কারাটে লড়তেন, দূরপাল্লার দৌড়বীর ছিলেন৷ কিন্তু শেষমেষ তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েন৷ কোনো কাজে আগ্রহ নেই, সেই সঙ্গে হাঁপানি৷ বাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে কলহ, নয়তো মদ্যপান৷ মনোরোগ বিশেষজ্ঞর নির্ণয়: গ্লেন পিটিএসডি, অর্থাৎ পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজর্ডার বা দুর্ঘটনার পর মানসিক চাপে ভুগছেন৷ ‘‘কিন্তু আমি তো সারা জীবন ধরে ত্রাণের কাজই করছি, মৃত্যু আর ধ্বংসলীলা দেখেছি৷ আমার স্ট্রেস হতে যাবে কেন?'' গ্লেন ডাক্তারকে বলেছিলেন৷ ‘‘এটা ছিল ব্যক্তিগত,'' ডাক্তার বললেন৷ ‘‘আপনার ১৪ জন বন্ধু মারা গেছেন৷ এ' যেন কেউ আপনার বাড়িতে ঢুকে আপনার পরিবারের ১৪ জনকে মেরে ফেলেছে৷''
প্রতিবেদন: ক্রিস্টিনা বের্গমান/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ