1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদা জিয়ার ছেলে কোকোর মৃত্যু

হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে, ঢাকা২৭ জানুয়ারি ২০১৫

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুকে ঘিরে কিছু ঘটনা এবং অলোচনাবাংলাদেশের চলমানরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে৷

https://p.dw.com/p/1ER6v
Arafat Rahman Coco
(ফাইল ফটো)ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে হলেও আরাফাত রহমান কোকো রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না৷ প্রবাসে তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতির এক অস্থির সময়ে৷ তিনি শনিবার যখন মালয়েশিয়ায় মারা যান তখন বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ চলছিল৷ তার মৃত্যুর খবর আসার কয়েক ঘন্টা আগেই বিএনপি অরোধের মধ্যেই হরতালের ঘোষণা দেয় সারা দেশে৷ শনিবার মৃত্যুর খবরে খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে তাঁর গুলশানের অফিস থেকে বের হয়ে এসে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া সাংবাদিকদের জানান, ‘‘শোকার্ত খালেদা জিয়া আন্দোলন আরো বেগবান করতে বলেছেন৷''

শনিবার বিকেলেই ঘোষণা আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে সমবেদনা জানতে যাবেন৷ সেদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদার গুলশান কার্যালয়ে যান৷ কিন্তু বাড়ির গেট ভিতর থেকে তালা লাগান ছিল৷ কেউ ভেতর থেকে গেট না খোলায় প্রধানমন্ত্রী ১০ মিনিটি গেটে অপেক্ষা করে ফিরে যান৷ এই সময় বিএনপির কোনো নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাননি৷ পরে অবশ্য খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘শোকার্ত খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে৷ তাঁর কক্ষের দরজাও নাকি ভিতর থেকে বন্ধ ছিল৷ আর আমি দৌড়ে বাইরে এসে দেখি প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন৷'' শিমুল বিশ্বাস অবশ্য প্রধানমন্ত্রী যাবেন এই খবর পেয়ে আগেও একবার সংবাদমাধ্যমকে খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখার কথা জানিয়েছিলেন৷

Bangladesch Khaleda Zia vor dem Gericht in Dhaka
দেড় বছর আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ছোট ছেলের শেষ দেখাছবি: M. uz Zaman/AFP/Getty Images

এই ঘটনায় বিএনপি নেতারাই এখন দু'রকম কথা বলছেন৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া অনুচিত হয়েছে৷ তাঁকে সম্মান না দেখনো অগ্রহণযোগ্য৷'' আর রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘‘এটা প্রধানমন্ত্রীর নাটক৷''

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, ‘‘এটা শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ৷''

বাংলাদেশের রাজনীতির পর্যবেৰক এবং প্রবীণ আইনজীবী ব্যরিস্টার রফিকুল হক বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে ফিরিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি৷ একজন মা আরেক শোকার্ত মায়ের কাছে গিয়েছিলেন৷''

ব্যারিস্টার রফিক আরো বলেন, ‘‘বড় একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল৷ প্রধানমন্ত্রী আর খালেদা জিয়ার দেখা হলে চলমান রাজনীতিতে ইতিবাচক কিছু ঘটতে পারত৷ শোকার্ত খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী তাঁকে দেখে আসতে পারতেন৷ কিন্তু সে সুযোগ তাঁকে দেয়া হয়নি৷''

Bangladesh Sheikh Hasina Regierungschefin
‘প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি, একজন মা আরেক শোকার্ত মায়ের কাছে গিয়েছিলেন'ছবি: Oli Scarff/Getty Images

সংলাপের যে দাবি জোরদার হচ্ছে এই ঘটনায় তার কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ বড় একটি সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেল৷''

খালেদা জিয়া ৩রা জানুয়ারি থেকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ' ছিলেন৷ বাইরে থেকে গেটে তালাও মেরে দিয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ ১৮ই জানুযারি রাতে খালেদা জিয়ার গুলশানের অফিস থেকে পুলিশ এবং জলকামান সরিয়ে নেয়া হয়, খুলে দেয়া হয় গেটের তালা৷ তবে খালেদা এখনো গুলশানের কার্যারয়েই অবস্থান করছেন৷

এদিকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় আনা হয়৷ মরদেহ প্রথমে গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে নেয়া হয়৷ খালেদা জিয়া তাঁর সন্তানের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন৷ বিকেলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়৷ কোকোর লাশ বনানি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে৷ আর্মি কবরস্থানে দাফনের কথা থাকলওে অনুমতি মেলেনি৷ অবরোধের মধ্যেই এসব ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়৷

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ১৯৭০ সালে, কুমিল্লা সেনানিবাসে৷

জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর খালেদার সঙ্গে তার ছেলে কোকোকেও সেনানিবাসের বাড়ি থেকে গ্রেৃপ্তার করা হয়৷ পরের বছর ১৭ই জুলাই তখনকার সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে চিকিত্‍সার জন্য থাইল্যান্ডে যান কোকো৷ সেখান থেকে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়৷ স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে কুয়ালালামপুরে একটি ভাড়া বাসায় তিনি থাকছিলেন৷

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর কোকোর সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ এরপর আদালতের ডাকে না ফিরলে তাকে পলাতক দেখিয়েই মুদ্রা পাচারের অভিযোগে দুদকের করা একটি মামলার বিচার শুরু হয়৷ এই মামলাটি সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা হয়েছিল৷

২০১১ সালের ২৩শে জুন মুদ্রা পাচারের মামলার রায়ে কোকোর ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত; সেই সঙ্গে ১৯ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়৷পলাতক থাকায় আপিলের সুযোগ পাননি তিনি৷ তবে বিএনপির দাবি, এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷

২০১৩ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ে খালেদা জিয়া ব্যাংককে যাত্রাবিরতি করে ছোট ছেলেকে দেখতে গিয়েছিলেন৷ সেটাই ছিল মায়ের সঙ্গে কোকোর শেষ সাক্ষাত্‍৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান