1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদা জিয়া নিরাপত্তা নিতে চাননি

সমীর কুমার দে, ঢাকা২১ এপ্রিল ২০১৫

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় প্রধান দুই দলের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে৷ এদিকে, খালেদা জিয়া নিরাপত্তা নিতে চাননি বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া৷

https://p.dw.com/p/1FBpA
Bangladesch Khaleda Zia vor dem Gericht in Dhaka
ছবি: M. Uz Zaman/AFP/Getty Images

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি মামলাও করা হয়েছে৷ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কূটনীতিকরা৷ মঙ্গলবার বিকেলে খালেদা জিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি দেখতে বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে যান৷ সেখানে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকও করেন তাঁরা৷ তবে বৈঠক শেষে কেউ কিছু বলেননি৷

এদিকে বাংলাদেশস্থ মার্কিন দূতাবাস ও ব্রিটিশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দেয়া পৃথক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, নির্বাচনি প্রচারের সময় সহিংস ঘটনা সত্যিই নিন্দনীয়৷ ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেদিকে সজাক দৃষ্টি রাখতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছে তারা৷

মঙ্গলবার বিকেলে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে যান বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা৷ তাদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কাতার, পাকিস্তান, জাপান, ফ্রান্স, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে৷ গুলশান কার্যালয়ের সামনে হামলার শিকার একটি গাড়ি ও কার্যালয়ের ভেতরের প্রাঙ্গণে আরও তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি রাখা হয়, যা কূটনীতিকরা দেখেন৷

পুলিশ কর্মকর্তারা যা বললেন

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি৷ তাঁর নিরাপত্তার জন্য দুই দফা চিঠি দেয়া হয়েছিল৷ তিনি নিরাপত্তা নিতে চাননি৷ তাই এই বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গত ৬ এপ্রিল গুলশান থানায় একটি জিডি করা হয়েছে৷ গত ৫ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপার্সন বকশীবাজারে বিশেষ আদালতে মামলার হাজিরা দিয়ে গুলশানে তাঁর বাড়িতে ফেরেন৷ এরপর ডিএমপি'র প্রটেকশন শাখা থেকে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী সিএসএফের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়৷ চিঠিতে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে চলাফেরার জন্য পুলিশী নিরাপত্তা নেয়ার অনুরোধ করা হয়৷ চিঠি পেয়ে সিএসএফের (চেয়ারপার্সন সিকিউরিটি ফোর্স) প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর জানিয়ে দেন, খালেদা জিয়ার চলাফেরায় কোন পুলিশী নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই৷ এরপরই বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ জিডি করে৷ সেই থেকে তাঁর চলাফেরার বিষয়টি পুলিশ অবহিত নয়৷''

Bangladesh Sheikh Hasina Regierungschefin
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা খালেদা জিয়ার সাজানো নাটক৷ছবি: Oli Scarff/Getty Images

উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারওয়ান বাজারে যাবেন এটা পুলিশ জানত না৷ খালেদা জিয়ার আসার বিষয়টি না জানার কারণে নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে সেখানে চারজন পুলিশ সদস্য ছিলেন৷ ঘটনার সময় তাঁরা তাঁদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে খালেদা জিয়াকে নিরাপদে বের করে দিয়েছেন৷'' এই ঘটনায় মামলা দু'টির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলা দু'টিতে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজেরও সহায়তা নেয়া হচ্ছে৷

হামলা শতভাগ সত্যি নয়: স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ‘দোষ' দেখছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল৷ খালেদার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীরা ক্ষুব্ধ ‘জনতার' ওপর চড়াও হওয়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি৷

মঙ্গলবার সকালে সদরঘাটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হওয়ার ঘটনাটি শতভাগ সত্যি নয়৷ ৯২ দিন অবরোধ-হরতালে ওই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির ছিল৷ তাই খালেদা জিয়া ওই এলাকায় গেলে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের তাড়া করে৷ এ সময় তার নিরাপত্তা কর্মীরা জনতার ওপর চড়াও হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়ে বিশৃঙ্খলা ঘটে৷'' এই ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি৷

খালেদাকে হত্যাই ছিল উদ্দেশ্য: এমাজউদ্দীন

সরকার প্রধান ও মন্ত্রীদের ‘উসকানিমূলক' বক্তব্যের কারণে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে' খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে গঠিত ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের' আহবায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমেদ৷ মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা করা হয়েছে৷ গাড়ির যে অংশে তিনি বসা ছিলেন, সেদিকেই তাঁকে উদ্দেশ্য করে গুলি করা হয়েছে৷ কিন্তু গাড়িটি বুলেটপ্রুফ হওয়ায় তিনি বেঁচে গেছেন৷''

পাল্টাপাল্টি মামলা

এই হামলার ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা৷ ঢাকা মহানগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হক সোমবার রাতেই এ মামলা দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার৷ তিনি বলেন, মামলায় কারো নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি৷ তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বিএনপি নেতাকর্মী মিলিয়ে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে জনতাকে হত্যার চেষ্টা ও বেআইনি জনসভাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে৷

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করে একটি মামলা করেছে বিএনপি৷ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন এবং ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়া মঙ্গলবার এই এজাহার নিয়ে তেজগাঁও থানায় যান৷ বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর স্বাক্ষরিত ওই লিখিত অভিযোগ দুপুরে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয় বলে জানান উপ-কমিশনার বিপ্লব সরকার৷ মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি৷ তবে আওয়ামী লীগ সমর্থক শতাধিক ব্যক্তি ওই হামলা চালায় বলে অভিযোগ তাদের৷

হামলাকারীরা উৎসাহিত হবে

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা খালেদা জিয়ার সাজানো নাটক৷ আর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, হামলার ঘটনা শতভাগ ঠিক নয়৷ এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এই ধরনের বক্তব্যে হামলাকারীরা উৎসাহিত হবেন৷ সঠিক তদন্তও বাধাগ্রস্ত হবে৷ সাধারণ মানুষও খালেদা জিয়ার মতো একাধিকবারের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে হামলার ঘটনার বিচায় চায়৷ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এই ঘটনার আর তদন্ত হবে না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য