1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খাদ্য সংকট

১২ জুলাই ২০১৩

শিল্পোন্নত দেশে অপচয়ের শেষ নেই৷ তবে তার অনেকটাই ঘটে লোকচক্ষুর অন্তরালে৷ এক জার্মান নারী তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাতে আসরে নেমেছেন৷ তাঁর মতে, ফেলে দেওয়া খাদ্য মানেই অস্বাস্থ্যকর নয়৷

https://p.dw.com/p/193mr
ছবি: picture-alliance/dpa

আবর্জনা ঘাঁটেন স্টেফি ক্লৎস, খাবারের জন্য৷ বড় বড় সুপারমার্কেটের সামনে৷ তবে টাকা বাঁচানোর জন্য ফেলে দেওয়া খাবার কুড়ান না স্টেফি৷ শিল্পোন্নত বিশ্বের ফেলে দেওয়ার মনোবৃত্তির বিরুদ্ধে এটা হল তাঁর প্রতিবাদ৷ ময়লা ফেলার কন্টেনারে তিনি যা পান, তা নির্দ্বিধায় খাওয়া চলে৷ অপচয় আজ পশ্চিমি জীবনধারার অঙ্গ৷ স্টেফি বলেন, ‘‘প্রণালীটা কীভাবে কাজ করে ভাবলে আমার গা জ্বলে যায়৷ পুঁজিবাদের আদর্শে এই সব জিনিস তৈরি করা হয় – প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি৷ তারপর সেগুলো ফেলে দেওয়া হয়৷ অন্যদিকে রয়েছে সেই সব দেশ, যেখানে খাদ্যের অভাব৷ আর এখানে সেই খাদ্য জঞ্জালে এসে পড়ে৷''

ময়লার গাদায় স্টেফি ক্লৎস শুধু শাকসবজি বা ফলমূলই খুঁজে পান না, সেই সঙ্গে নুডল বা দই বা সিরিয়াল্স৷ যেমন একটি বড় রুটির বেকারির কন্টেনারে পাঁউরুটি ভরা রয়েছে৷ তার মধ্যে অনেক রুটিই এখনও খাওয়া চলে, তবুও সেগুলো আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়েছে৷ এই আবর্জনা ঘাঁটা কিন্তু পুরোপুরি আইনি নয়৷ স্টেফি বলেন, ‘‘সেভাবে দেখতে গেলে, এটা আসলে চুরি৷ আমি ওদের আবর্জনা চুরি করছি৷''

Berliner Tafel
‘বার্লিনার টাফেল' দুঃস্থদের জন্য খাবার বিলি করেছবি: Dietmar Gust

গড়ে ইউরোপের প্রত্যেক বাসিন্দা বছরে ৮০ কিলোগ্রাম খাবার-দাবার ফেলে দেয় – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমনকি ১১৫ কিলো৷ অথচ সমৃদ্ধির দুনিয়ার বাইরে, যেমন আফ্রিকার দক্ষিণে খাদ্যের অপচয় প্রায় নেই বললেই চলে৷

বার্লিনের অধ্যাপক হারাল্ড ফন ভিৎসকে খাদ্যের অপচয় নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি বলেন, বিশ্বের এভাবে অপচয় করার সামর্থ্য নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘চাষের জমি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলার ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমন এমনভাবে বেড়েছে যে, তা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য কলকারখানা ও যানবাহনের চেয়েও বেশি দায়ী৷''

সারা বিশ্ব থেকে আসা পণ্য৷ তার অপচয়টাও আগে থেকেই ধরে নেওয়া হয়, আর দামেও ধরা থাকে৷ আমাদের সেই অপচয়ের দামটাও দিতে হয়, নয়তো হিসেব মিলত না৷ খাদ্যপণ্যের খুচরো বিক্রেতা সমিতির ক্রিস্টিয়ান ব্যোটশার বলেন, ‘‘গ্রাহকরা দোকানে তাকভর্তি পণ্য দেখতে চায়৷ কাজেই বিক্রেতারাও সেইভাবেই তাদের পণ্য সাজিয়ে বিক্রি করে৷ এইভাবে গ্রাহকদের ইচ্ছা পূরণ করে বিক্রেতারা৷''

গ্রাহকের পেট ভরানো, খিদে মেটানোর সঙ্গে আর এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ তার চাহিদা বাড়িয়ে তোলাই হলো আসল উদ্দেশ্য – যাতে যা চাই, তার থেকে একটু বেশিই কিনে ফেলে সে৷

কাজেই ফেলে দেওয়া খাবারদাবারের চারভাগের তিনভাগই যে আসে গৃহস্থের বাসা থেকে, সেটা আশ্চর্য নয়৷ খাদ্যপণ্য যারা উৎপাদন করে কিংবা বিক্রি করে, তাদের অপচয়ের অনুপাত কম৷ অর্থাৎ গ্রাহকরাই খাদ্যপণ্যের এই অপচয়ের জন্য মূলত দায়ী৷

‘বার্লিনার টাফেল' বা ‘খাবার টেবিল' হল একটি ত্রাণসংস্থা, যারা দুঃস্থদের জন্য খাবারের প্যাকেট বিলি করে – ফেলে দেওয়া খাবারদাবার থেকে৷ ‘টাফেল' প্রতিবছর প্রায় সাত হাজার টন খাবারদাবার পায় বিভিন্ন সুপারমার্কেট আর হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে৷ তারপর দেখা হয়, তার কতোটা এখনও ব্যবহারযোগ্য৷ ‘বার্লিনার টাফেল'এর সাবিনে ভেয়ার্ট বলেন, ‘‘শুধু বার্লিনেই আমরা এক লাখ পঁচিশ হাজার মানুষকে খাবার দিই৷ কখনো-সখনো মনে হয়, খাবারের এই পাহাড় নিয়ে কী করব! তার পরের মুহূর্তেই বিতরণ শুরু করি৷ আবার সব ঠিক হয়ে যায়৷''

সুপারমার্কেটগুলো যা আলাদা করে কিংবা ফেলে দেয়, তার মোটামুটি এক তৃতীয়াংশ যায় এই ধরনের ‘টাফেলে'৷ বাকিটা যায় আবর্জনার স্তূপে৷

সেখানে তা পচে নষ্ট হয় – নয়তো স্টেফির মতো আবর্জনা ঘাঁটা মানুষরা তা সযত্নে কুড়িয়ে নেন৷ স্টেফি এই দৈনন্দিন অপচয় মেনে নিতে রাজি নন৷ তিনি আগের মতোই জঞ্জাল ঘাঁটবেন আর এই সমৃদ্ধির সমাজের বিলাসী অপচয় থেকে নিজের খাদ্য বেছে নেবেন৷

এসি / এসবি