1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পেঁচোয় পাওয়া এয়ারপোর্ট

শীর্ষ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা২৪ নভেম্বর ২০১৪

কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হালৎ, মানে অবস্থা বেজায় খারাপ! বহু সাধাসাধি করেও বিদেশি বিমানসংস্থাগুলোকে ফেরানো যাচ্ছে না৷ অথচ ভারতের বাকি বিমানবন্দরগুলোর অবস্থা কিন্তু এরকম খারাপ নয়৷

https://p.dw.com/p/1DraS
Indien Air India Streik Kalkutta Flughafen Flugzeuge
ফাইল ফটোছবি: Reuters

প্রশাসনিক রাজধানী নতুন দিল্লি তো বটেই, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বই, তথ্য-প্রযুক্তি রাজধানী বেঙ্গালুরু অথবা হায়দরাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়ান এবং যাত্রীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে৷ একমাত্র পিছিয়ে পড়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর৷ ২০০৯ সালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এই শহর থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পর থেকেই এই পড়ন্ত দশা৷ জার্মান বিমান সংস্থা লুফৎহানসা-ও ছেড়ে গিয়েছে বন্দর এবং বহু অনুরোধেও ফিরতে রাজি হয়নি৷

লুফৎহানসা যখন কলকাতা থেকে উড়ান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, অন্য কোনো কারণে নয়, কলকাতা থেকে যথেষ্ট সংখ্যক বিজনেস ক্লাস বা এক্সিকিউটিভ ক্লাস প্যাসেঞ্জার লুফৎহানসা পাচ্ছে না৷ অথচ যে কোনো দূর পাল্লার উড়ানে যা খরচ হয়, তার অনেকটাই ওঠে ওই দুই উচ্চ শ্রেণির বেশি দামের টিকিট বিক্রি করে৷ তা যদি না হয়, তা হলে ইকনমি ক্লাসের সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গেলেও বিমানসংস্থার লাভ হয় না৷

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজও ঠিক সেই কারণেই কলকাতা সেক্টরকে অনাদায়ী ক্ষেত্র হিসেবে দেখেছে এবং ব্যবসা চালাতে না পেরে সরে গিয়েছে৷ ফলে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে হাতে গোনা কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থার দূরপাল্লার উড়ান এখন চালু আছে৷ এর পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ বা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সহযোগী বিমানসংস্থা সিল্ক এয়ার কলকাতা থেকে বিমান চালাচ্ছে বটে, কিন্তু সেগুলো একটিও দূর পাল্লার, কারিগরি ভাষায় যাকে লং হল ফ্লাইট বলা হয়, তা নয়৷

ফলে দিল্লি বা মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঘণ্টায় যেখানে ৫০ থেকে ৬০টি বিমান ওঠানামা করে, কলকাতায় সেই সংখ্যাটা ঘণ্টায় মাত্র ১৩টি৷ অবশ্য কলকাতা বিমানবন্দরের যা পরিকাঠামো, তাতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০টি বিমানের ওঠানামা তারা সামলাতে পারে৷ কিন্তু সেই ক্ষমতারও সদ্ব্যবহার করা যাচ্ছে না৷

অবশ্য কলকাতা পরিকাঠামোর দিক দিয়েও বাকি দেশের থেকে পিছিয়ে৷ একটা সময় যখন ভারতে একের পর এক বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়েছে, তখন একমাত্র এগিয়ে আসতে পারেনি কলকাতা৷ বিভিন্ন কর্মী-শ্রমিক ইউনিয়নের চাপের মুখে কলকাতা বিমানবন্দর ক্রমাগত বেসরকারি উদ্যোগে আধুনিকীকরণের বিরোধিতা করে গেছে৷ তার পর যদিও বা ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চের ছেলে এসে সামনের দিকে বসল, তার ভালো রেজাল্ট করার সুযোগ ফসকেছে৷

যদিও চেষ্টার কসুর হচ্ছে না৷ সম্প্রতি অ্যামেরিকার শিকাগোয় একটা প্রেজেন্টেশন, বা বাণিজ্যিক উপস্থাপনা করে এসেছেন কলকাতা বিমানবন্দরের কর্তাব্যক্তিরা৷ তার আগে জার্মানিতে গিয়েও একই উপস্থাপনা করে এসেছেন তাঁরা, চেষ্টা করেছেন ফের যদি লুফৎহানসা কলকাতা থেকে উড়ান শুরু করে৷ দক্ষিণ কোরিয়া এবং আরও কিছু দেশে একইভাবে তদ্বির করা হয়েছে৷ কিন্তু কোথাওই উদ্যোগের সুফল মেলেনি৷

একমাত্র জাপান এয়ারলাইন্স এবং টার্কিশ এয়ার কিছুটা উৎসাহ দেখিয়েছে, কিন্তু তাদের আবার ভারত থেকে উড়ানের লাইসেন্স পেতে সময় লাগবে৷ সেক্ষেত্রে নতুন বিদেশি সংস্থা বলতে একমাত্র এতিহাদ এয়ার কলকাতায় ব্যবসা শুরু করবে৷ যদিও এতিহাদ কাতার এয়ারলাইন্সের মতোই প্রথমে ছোট আকারের বিমান চালিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবে বলে শোনা যাচ্ছে৷

কিন্তু কলকাতা বিমানবন্দরের এমন পেঁচোয় পাওয়া রুগ্ন দশা কেন! একটাই কারণ, কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের অধোগতি৷ সাধারণ পর্যটকেরা নন, প্লেনের বিজনেস বা এক্সিকিউটিভ ক্লাসে সফর করেন শিল্পপতিরা বা শিল্পসংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তারা৷ সেই শিল্প-পরিবেশ কলকাতায় কোথায়! ফলে দিল্লি, মুম্বই বা বেঙ্গালুরুতে যেখানে বিজনেস ক্লাসের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ টিকিটই বিক্রি হয়ে যায়, কলকাতায় সেখানে ২০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করতে বিমানসংস্থাগুলোকে হিমসিম খেতে হয়! কাজেই তাদেরকেও দোষ দেওয়া যায় না৷

কিন্তু কলকাতাসহ গোটা রাজ্যের এই বেহাল দশার জন্য ঠিক কাদের দোষ দেওয়া যেতে পারে, সেটাও অজানা৷ তা ছাড়া তর্কপ্রিয় বাঙালি সে নিয়ে খালি চায়ের পেয়ালায় তুফান তুলবে, কোনো সমাধানের রাস্তায় তো হাঁটবে না!