1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হিন্দু-রাষ্ট্র’ গঠনের স্বপ্ন

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২ সেপ্টেম্বর ২০১৪

একসময় যাঁরা হিন্দু থেকে খ্রিষ্টান হয়েছিলেন, তাঁদের আবারো হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনার অভিযান শুরু করছে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা৷ হিন্দু সংগঠন আরএসএস-এর ধর্মীয় জাগরণ বিভাগের নাম হয়েছে ‘ঘরে ফেরা’ বা স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন৷

https://p.dw.com/p/1D4su
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস এর একটি সম্মেলনছবি: picture-alliance/dpa

সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের মিরাটে এক হিন্দু তরুণীকে প্রেমের টোপ দেখিয়ে এক মুসলিম যুবক বিয়ে করার পর, তাঁকে জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়৷ তথাকথিত এই ‘লাভ জিহাদের' জেরে সাম্প্রদায়িক গণ্ডগোলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল৷ এরপর জনৈক মুসলিম যুবক রকিবুল হাসান নাম ভাড়িয়ে রনজিৎ কোহলি হয়ে বিয়ে করেন হিন্দু মেয়ে জাতীয় শুটার বা বন্দুকবাজ তারা শাহদেওকে৷ বিয়ের পর তারাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করার জন্য নির্যাতন চালায় এমনটাই অভিযোগ তারা শাহদেও-এর৷

এটাই অবশ্য ধর্মান্তরিত করার শেষ ঘটনা নয়, যা সামনে এসেছে৷ রাজ্যে ধর্মান্তরিত করার অন্য ঘটনাও আছে৷ অতি সম্প্রতি কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস-এর ধর্মীয় জাগরণ বিভাগ উত্তর প্রদেশে শুরু করতে চলেছে ধর্মীয় মেরুকরণের আর এক অভিযান, যার নাম ‘ঘরে ফেরা' বা স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন৷

ধর্মীয় জাগরণ বিভাগের অঙ্গীকার, যেসব দলিত এক সময় হিন্দু ছিলেন তাঁদের আবার নিজ ধর্মে, অর্থাৎ হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা৷ এ জন্য উত্তর প্রদেশের আলিগড় থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে একটি শহরের চার্চকে রাতারাতি শিবমন্দিরে পরিণত করে ৭২ জন দলিত বাল্মীকি সম্প্রদায়ের লোককে ‘শুদ্ধিকরণ' অনুষ্ঠানের দ্বারা আবার হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে আনা হয়৷ চার্চ থেকে পবিত্র ক্রশ চিহ্ন খুলে নেয়া হয়৷ প্রতিষ্ঠা করা হয় শিব মন্দির৷

ধর্মীয় জাগরণ বিভাগের প্রধান খেম চন্দ্র সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এটা ঘরে ফেরা ধর্মান্তর অনুষ্ঠান নয়৷ হিন্দু সমাজকে আমরা ছিন্নভিন্ন হতে দিতে পারি না৷ শক্ত করে আগলে রাখতে চাই৷ এই নিয়েও উত্তেজনা ছড়ায়৷ তথাকথিত ‘শুদ্ধিকরণ' অনুষ্ঠানে জড়ো হওয়া একজন দলিত বাল্মীকি সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন, বাস্তবিকই তাঁরা আগে ছিলেন দলিত হিন্দু৷ কিন্তু হিন্দু সমাজে জাত-পাতের লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে তাঁরা খ্রিষ্টান হয়েছিল নিজেদের ভাগ্যোন্নতির আশায়৷ সেটা না হওয়ায় আবার তাঁরা হিন্দুত্বে ফিরে এসেছে৷

আলিগড়ে খ্রিষ্টান সমাজ এতে রীতিমত ক্ষুব্ধ বিশেষ করে চার্চ থেকে পবিত্র ক্রশচিহ্ন নামিয়ে চার্চে হিন্দু বিগ্রহ স্থাপনে৷ জনৈক খ্রিষ্টান আইনজীবীর মতে, ‘লাভ জিহাদের' পাশাপাশি ‘ঘরে ফেরার' নামে শুদ্ধিকরণ অভিযান শুরু হয়েছে৷ এটা কি হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের ইঙ্গিত?

আসলে উত্তর প্রদেশে ডজন খানেক বিধানসভা আসনে উপ-নির্বাচন আসন্ন৷ ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচন৷ রাজ্যে হিন্দু ভোট ধরে রাখতে ধর্মীয় মেরুকরণই বিজেপির স্ট্যাটিজি৷ ধর্মীয় জাগরণ বিভাগের প্রতিনিধি জানান, পশ্চিম উত্তর প্রদেশে যেখানে দলিত সংখ্যা বেশি যেমন আলিগড়, আগ্রা, মিরাট ও মুজফ্ফরনগরে তাঁরা বেশি সক্রিয়৷ দলিত জনগোষ্ঠীতে পড়ে চামার, বাল্মীকি, মেথর ও অন্যান্য নীচু জনজাতি৷ এদেরকে বিজেপির ছাতার নীচে আনতে পারলে দলিত ভোট বিজেপির ঝুলিতে আনা সম্ভব হবে৷ এতে এক ঢিলে দুই পাখি মরবে৷ মুলায়েম সিং-এর সমাজবাদী পার্টি এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি৷ মায়াবতীর দলিত পার্টি বহুজন সমাজ পার্টি হালের সাধারণ নির্বাচনে হালে পানি পায়নি৷ রাজ্যে বহুজন সমাজ পার্টি কার্যত ধুয়ে মুছে গেছে৷ দলিত ভোটব্যাংকে যাতে বিজেপি ভাগ বসাতে না পারে তার জন্য গৈরিক ব্রিগেডকে আটকাতে মায়বতী নিজের দলীয় নেতাদের সতর্ক থাকতে বলেছেন৷ বলেছেন, দলিত ভোটকে কখনই ভাগ হতে দেয়া হবে না৷ আলিগড় শহরের মেয়র শকুন্তলা ভারতী মনে কেন, কত হিন্দু তরুণীকে যে মুসলিম করা হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই৷ এটা রুখতে গিয়ে তাঁর প্রাণ সংশয় হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য