1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক ঝলকে কোকো শ্যানেল

মার্ক ফন ল্যুপকে/আরবি১৭ মার্চ ২০১৪

আজকের ফ্যাশন জগত কোকো শ্যানেল ছাড়া কিরকম হতো, তা ভাবাই যায় না৷ অসংখ্য ‘ছোট্ট কালো’ ডিজাইন করেছেন তিনি৷ বিশ্বখ্যাত অনেক ব্যক্তি তাঁর কস্টিউম পরেছেন৷ হামবুর্গের একটি প্রদর্শনীতে এ ব্যাপারে খানিকটা ধারণা পাওয়া যাবে৷

https://p.dw.com/p/1BQGq
ছবি: Museum für Kunst und Gewerbe Hamburg (Ausschnitt)

আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল না কোকো শ্যানেলের৷ ‘‘এই পোশাক রুচিশীল সব মেয়ের জন্য এক ধরনের ইউনিফর্ম হবে৷'' সেই ১৯২৬ সালে ফ্রেঞ্চ ফ্যাশান স্রষ্টা কোকো শ্যানেল মার্কিন ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ভোগ'-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন৷ তাঁর বিখ্যাত ‘ছোট্ট কালো' পোশাকটি সম্পর্কে এই মন্তব্য করেন তিনি৷ আজও মেয়েদের কাপড়ের আলমারিতে নানা ডিজাইনে দেখা যায় এই পোশাক৷

নিজে উদ্ভাবন করেননি

এই ‘ছোট্ট কালোকে' কোকো নিজে উদ্ভাবন না করলেও এটিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন৷ খোলামেলা কাটছাঁটের কালো রঙের এই পোশাকটি সমাজের এক ট্যাবু ভেঙেছে৷ তার আগে মেয়েরা রেখে ঢেকেই পোশাক পরতেন আর কালো পরিচারকদের রং বলেই পরিচিত ছিল৷

Ausstellung Mythos Chanel Alex Katz
‘ছোট্ট কালো' পোশাকছবি: VG Bildkunst & bpk/Bayerische Staatsgemäldesammlung

ভোগ ম্যাগাজিনও কোকোর সুরে সুর মিলিয়ে লিখেছে, ‘‘এই পোশাক একদিন সারা বিশ্বই পরবে৷''

বাস্তবিকই বিশ্বের নানা দেশের মেয়েরা শ্যানেলের পোশাক পরা শুরু করেন৷ কোকোর ডিজাইন করা কস্টিউম, হাতব্যাগ, অলঙ্কার ইত্যাদিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ আর এসবে তৃপ্ত না হলে শ্যানেলের বিখ্যাত পারফিউম শ্যানেল ৫-এর দিকে হাত বাড়ান অনেকে৷ কোকো শ্যানেলের সৃষ্টিকর্ম আজও জনপ্রিয়তা হারায়নি৷

Ausstellung Mythos Chanel Man Ray
এই হলেন কোকো শ্যানেলছবি: VG Bildkunst & Man Ray Trust (Ausschnitt)

শ্যানেলের মিথ

‘শ্যানেলের মিথ' নিয়ে হামবুর্গের চারু ও কারু শিল্পের মিউজিয়ামে একটি প্রদর্শনী ‘এক বিন্দু শ্যানেল' শুরু হয়েছে এই বছরের ২৮শে ফেব্রুয়ারি৷ চলবে ১৮ই মে পর্যন্ত৷

কোকো শ্যানেলের ৭০টি সামগ্রী স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে৷ এছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকজন ফ্যাশনশিল্পীর শিল্পসামগ্রীও৷ যাঁরা শ্যানেলের সৃষ্টিতে অনুপ্রাণিত হয়ে ডিজাইন করেছেন৷

প্রকৃত নাম গাব্রিয়েলে শ্যানেল৷ জন্ম ১৮৮৩ সালে৷ তবে সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম হয়নি তাঁর৷ ১৮৯৫ সালে মায়ের মৃত্যুর পর অনাথ আশ্রমে জায়গা হয় কোকোর৷ সেখানে তিনি সেই দক্ষতা আয়ত্ত করেন, যা তাঁকে বিশ্বখ্যাতি এনে দিয়েছে, আর তা হলো সেলাই৷ এক ক্যাফেতে গায়িকা হিসাবে উপস্থিত হওয়ার পর তাঁর নামের সঙ্গে কোকো যুক্ত হয়৷ তবে সংগীতের চেয়ে ফ্যাশনের প্রতিই তাঁর অনুরাগ বাড়তে থাকে৷

প্রথম বড় পদক্ষেপ

ফ্যাশন জগতে প্রথম বড় পদক্ষেপটি রাখেন তিনি ১৯১০ সালে৷ প্যারিসে একটি হ্যাটের দোকান খোলেন কোকো৷ ১৯১৩ সালে খোলেন একটি বুটিকের দোকান৷ এর দুই বছর পর স্থাপন করেন গোটা একটি ফ্যাশন হাউস৷ ১৯২০-এর দশকে ফ্যাশন অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম৷ কোকোর ‘ছোট্ট কালোর' জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে৷ আর এনে দেয় ফ্যাশন স্রষ্টা এই নারীর জন্য আর্থিক নিরাপত্তাও৷

Ausstellung Mythos Chanel Kostüm
শ্যানেলের ডিজাইন করা ষাটের দশকের একটি পোশাকছবি: Maria Thrun

প্রশ্ন জাগতে পারে, শ্যানেলের সৃষ্টিকর্ম খদ্দেরদের কাছে এত আদৃত হলো কেন? উত্তরটি উঠে আসে শ্যানেলের এক মন্তব্য থেকেই: ‘‘আমি নারীদেহকে আবার মুক্তি দিয়েছি৷''

১৯২০-এর দশকে মেয়েরা পোশাকে আশাকে খোলামেলা হতে শুরু করেন৷ ছড়িয়ে দেন আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি৷ কাঁচুলি ও কটিবন্ধকে অতীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷

যুগের আস্বাদ

শ্যানেল মেয়েদের আকাঙ্খা ও যুগের আস্বাদটা ধরতে পেরেছিলেন৷ সহজ ও চমৎকার, আরামদায়ক ও রুচিশীল ছিল তাঁর ডিজাইন৷

‘পোশাকই মানুষ তৈরি করে' – এই প্রবাদবাক্যের প্রতিফলন দেখা যায় ১৯২০ সালের ‘নতুন নারীর' নতুন ডিজাইনের ভূষণে৷ আর এতে শ্যানেলের যে একটা বড় ভূমিকা ছিল তা বলাই বাহুল্য৷ যুদ্ধ পুর্ববর্তী সমাজের চিত্র অনেকটাই বদলে দেন সেসময়ের নারীরা৷ স্কার্টের ঝুল গোড়ালি থেকে উঠে আসে হাঁটুর সামান্য নীচে৷ অবশ্য কোকো শ্যানেল নিজে ট্রাউজার্স পরতেই পছন্দ করতেন৷

Bildergalerie Karl Lagerfeld 80 19.11.2008 in Paris
জার্মান ফ্যাশন ডিজাইনার কার্ল লাগারফেল্ডছবি: Francois Guillot/AFP/Getty Images

মৃত্যুর পরও মুছে যায়নি

১৯৭১ সালে ফ্যাশন জগতের আইকন কোকো শ্যানেলের মৃত্যুর পরও তাঁর মিথ মুছে যায়নি৷ প্রথম দিকে কিছুটা হোঁচট খেলেও আবার ঘুরে দাঁড়ায় শ্যানেলের ফ্যাশন হাউস৷ ১৯৮৩ সালে জার্মান ফ্যাশন ডিজাইনার কার্ল লাগারফেল্ড পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে ভবনটি৷ লাগারফেল্ড তাঁর ডিজাইনে প্রতিষ্ঠাতার আইডিয়া থেকেও সংযোজন করতে থাকেন৷ বিশেষ করে ফ্যাশন ডিজাইনার কোকো শ্যানেলের সেই কথাটি হৃদয়ঙ্গম করেছেন তিনি: ভালো কাটছাঁটের একটি পোশাক সব মেয়েকেই মানাবে৷''