এ শহরের প্রেমে পড়তেই হয়
বন্দর নগরীর এমনিতেই একটু বাড়তি আকর্ষণ থাকে৷ তার ওপর নগরটি যদি হয় হামবুর্গ, তাহলে তো কোনো কোনো পর্যটকের প্রেমে না পড়ে ফেরাই মুশকিল৷ কেন? জেনে নিন আজকের ছবিঘরে৷
স্রোতের সঙ্গী হয়ে...
এলবে নদীতে নৌকা চলে সারাদিনমান৷ সিন্ধু ঈগলের ডাক আর স্রোতের কুলু কুলু শব্দে ঘুম ভাঙে সকালে৷ সাগর থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে হামবুর্গ বন্দর৷ বড় বড় জাহাজ যাতে অনায়াসে বন্দরে নোঙর ফেলতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে নদীকে প্রশস্ত করার পরিকল্পনা হয়েছিল৷ পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মুখে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি৷
অনাগত দিনের গান
সংগীত পিপাসুদের জন্য সুরের বিশাল এক রাজ্য গড়ে উঠছে হামবুর্গে৷ এলবে ফিলহারমনিক হল৷ লাল ইটের তৈরি পুরোনো এক ওয়াটার হাউসের ওপর গড়ে উঠেছে সুউচ্চ এক মনোরম কাচঘর৷ ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে আসবেন বিখ্যাত শিল্পীরা৷ ২০১৭ সালে উদ্বোধন হবার কথা এই কনসার্ট হলের৷
পাতালভ্রমণ
হামবুর্গেই রয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে পুরোনো পাতাল-সুড়ঙ্গ ‘এলবে টানেল’৷ ১৯১১ সালে তৈরি করা হয়েছিল এই টানেল৷ অসংখ্য পথচারী, সাইকেল আরোহী এবং গাড়িকে প্রতিদিন লিফটে নামিয়ে দেয়া হয় পানির নীচের এই টানেলে৷ ৪২৬ মিটার দীর্ঘ এই টানেল হওয়ায় শহর থেকে এলবে নদী পার হয়ে শিপইয়ার্ড অঞ্চলে যেতে অনেক কম সময় লাগে৷ পথচারীদের এই টানেল ব্যবহারের জন্য কোনো টাকা দিতে হয়না৷
হাফেন সিটি
এলবে নদীর তীরেই গড়ে উঠছে ছোট্ট এক আধুনিক নগর৷ পুরোনো অফিস, আদালত, রাস্তা-ঘাট সব ঢেলে সাজিয়ে দেয়া হচ্ছে নতুন রূপ৷ ২০২৫ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা৷ কাজ শেষ হলে অন্তত ১০ হাজার মানুষের বসতি হবে হাফেন সিটিতে৷
সেরা যোগাযোগ ব্যবস্থা
আড়াই হাজারের মতো ব্রিজ আছে হামবুর্গে৷ ভেনিস, আমস্টারডাম বা লন্ডনের মতো শহরেও এত ব্রিজ নেই৷ কিন্তু ব্রিজ বেশি হলে কী হবে, হামবুর্গের মানুষ কখনো ব্রিজের সংখ্যা নিয়ে মাথা ঘামায়না৷ ১৮৪২ সালে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে শহরের অনেক কাঠের ব্রিজ পুড়ে গিয়েছিল৷ তাই তারপর যত ব্রিজ হয়েছে তার সবই হয় স্টিলের, নয়তো লোহার৷ সব ব্রিজই এখন দ্রুত যোগাযোগে নগরবাসীর সহায়ক৷
গুদাম ঘরের শহর
১৮৮৮ সালে স্পাইশারশ্টাট, অর্থাৎ ‘গুদামের শহর’এর উদ্বোধন করেন সম্রাট দ্বিতীয় ভিলহেল্ম৷ ব্যবসায়ীরা বিনা খরচে এখানে পণ্য মজুদ করতে পারতো বলে হামবুর্গ অবশ্য তার আগেই মুক্ত বন্দর হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিল৷ এখনো পণ্য গুদামজাতকরণের সুবিধাসম্পন্ন বিশ্বের অন্যতম বড় শহর হামবুর্গ৷ আগামী গ্রীষ্মেই ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ-এর স্বীকৃতি পেয়ে যেতে পারে হামবুর্গ৷
রাজহাঁসের গান
হামবুর্গে শীতের বিদায় বার্তা বয়ে আনে রাজহাঁস৷ শহরে রাজহাঁসের ঝাঁক ফিরতে দেখলেই সবাই বুঝে নেয় বসন্ত এসেছে৷ এই রাজহাঁসদের দেখভালের জন্য বিশেষ অফিস খুলেছে সিটি কাউন্সিল৷ পিতার মতো রাজহাঁসদের দেখাশোনা করার জন্য একজন ‘সোয়ান ফাদার’ও রেখেছে নগর কর্তৃপক্ষ৷
‘বড় স্বাধীনতা’
শহরের ছোট্ট একটা রাস্তা৷ নাম গ্রোসে ফ্রাইহাইট, অর্থাৎ ‘বিগ ফ্রিডম’ বা বড় স্বাধীনতা৷ রাস্তার দু ধারে বার আর ক্লাবের ছড়াছড়ি৷ শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভীষণ প্রিয় এই গ্রোসে ফ্রাইহাইট৷ ষাটের দশকে এখানেই স্টার ক্লাবে পারফর্ম করেছিল বিটলস৷ তখনো কিন্তু তাদের কেউ চিনতো না৷
আবার এসো
এক সফরে হামবুর্গের সবকিছু দেখা সম্ভব নয়৷ শহরের জাদুঘর, গির্জা, কনসার্ট হল, থিয়েটারগুলোতে একবার করে গেলেই তো কয়েকদিন কাবার হয়ে যায়৷ তাই পর্যটকদের অনেকেই সফর শেষ করে ‘আবার আসতে হবে’ ভেবে৷ আর হামবুর্গ তো সবসময় মুখিয়েই থাকে ‘মইন মইন’ অর্থাৎ স্বাগতম স্বাগতম বলে সবাইকে অভ্যর্থনা জানাতে!