1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদ অনুষ্ঠানের সেদিন-এদিন

১ আগস্ট ২০১৪

বাংলাদেশে একসময় এক ঘণ্টার নাটকের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া৷ সেই জনপ্রিয়তার কাছে হার মেনে যেত হিন্দি ধারাবাহিক৷ বর্তমানে দেশের নাটক, টেলিফিল্মের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ এ বিষয়ে নানা মতামত উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷

https://p.dw.com/p/1CnJG
Eid al Fitr Asien Bangladesch Ferien Reise Dritte Welt
ছবি: Reuters

সামহয়্যারইন ব্লগে মাহফুজ লিখেছেন,

‘‘আমাদের দেশে ঈদে বিনোদন বলতে টিভি নাটক আর টেলিফিল্ম৷ প্রতি ঈদেই নির্মাতারা চ্যানেলগুলোর জন্য প্রচুর নাটক-টেলিফিল্ম তৈরি করেন৷ কিন্তু যে পরিমাণ নাটক বা টেলিফিল্ম নির্মিত হয়, সে পরিমাণ অভিজ্ঞ শিল্পী দেশে নেই৷ প্রায় সব নাটকেই নতুন নতুন চেহারা দেখা যায়৷ অভিনয় শিল্পে চেহারার সাথে সাথে অভিনয়দক্ষতাও প্রয়োজন৷ ফলে দু-একটা বাদে বেশিরভাগ নাটকগুলোতে অভিনয়ে সাবলীলতা নেই, তার ওপর ডায়ালগের ভয়াবহ অবস্থা৷ কেমন জানি কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর চেষ্টা৷''

তিনি উল্লেখ করেছেন হাসির নাটকে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারের কথা৷ লিখেছেন, ‘‘ আঞ্চলিক ভাষার নামে নাটকগুলোতে বাংলা ভাষার ওপর তো বটেই, আঞ্চলিক ভাষাগুলোর ওপরও অত্যাচার হচ্ছে৷ হাসানোর জন্য বিকৃত ভাষার দরকার নেই৷ জাহিদ হাসানের পুরোনো নাটকগুলো যারা দেখেছেন তাদের মনে আছে, সেসব নাটকগুলোর ডায়ালগ থাকতো প্রমিত বাংলায়৷ তখন কি কেউ হাসেনি?''

মাহফুজ একটি চ্যানেলের নাটকের উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘অনেক হাসবো এই আশা নিয়ে গতকাল মোশারফ করিমের ‍‘সিকান্দার বক্সের হাওয়াই গাড়ি' দেখতে বসেছিলাম৷ ১০ মিনিট দেখার পর আর দেখতে ইচ্ছে হলো না৷ উঠে যেতে বাধ্য হলাম৷ দেশের হাই রেটেট আর্টিস্টের নাটক যদি হয় এই মানের, তাহলে বাকিগুলোর অবস্থা কি হবে সেটা ভাবতে হয় না!

নাটকের জন্য যে সুনাম আমাদের রয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে সে সুনাম নষ্ট হতে বেশিদিন লাগবে না৷ সুস্থ বিনোদনের এই ধারাটিকে ধীরে ধীরে নিজেরাই অসুস্থ করে তুলছি৷''

একই ব্লগে নাভিদ আরমান শিফাত লিখেছেন,

‘‘ভারতীয় নাটক বা সিরিয়াল আমাদের ঘরে চললে জাত গেল জাত গেল বলে লাফাই৷ আমাদের সংস্কৃতি ডুবল ডুবল বলে লজ্জায় ডুবে যাই৷ কিন্তু একটা জিনিস ভেবে দেখলাম, ঈদে মানুষের সিরিয়াল আসক্তি কতটা কমে যায় চিন্তা করে দেখেছেন? আমার মনে হয় সিরিয়াল প্রেমী প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ঈদের ৭ দিন সিরিয়ালের দিকে তাকায় না৷ তখন ভালো নাটক, টেলিফিল্ম দেখায়- এজন্য৷

আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আমাদের ভারভীয় চ্যানেল আসক্তির প্রধান কারণ কি? আমি এক কথায় বলব, প্রযোজকদের উদাসীনতা৷ দেশের মিডিয়াগুলো নিজেদের দর্শক ধরে রাখতে পারছে না সেকারণেই৷ ভারতের মিডিয়াগুলো কিন্তু পেরেছে৷ সেটা সিরিয়াল দিয়ে হোক, সিনেমা দিয়ে হোক বা অন্য যে-কোনো ভাবেই হোক৷ তারা পেরেছে, তারা পারছে৷''

অভ্র শাহরিয়ার লিখেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি ম্যাগাজিন ‘ইত্যাদি' নিয়ে৷ তিনি অনুষ্ঠানটির কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন৷

তিনি লিখেছেন, ‘‘ইত্যাদি সমাজের সব অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরছে কয়েক দশক ধরেই এবং সেই কাজে তারা অসম্ভব মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়ে আসছে বরাবরই৷ সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরে বলেই ইত্যাদির কোনো অসঙ্গতি আমাকে বেশ পীড়া দেয় বৈকি... কাল রাতে চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে থমকে গেলাম ইত্যাদি-র এক কৌতুকের অংশবিশেষ দেখে৷ দৃশ্যটা হলো, একটি সিনেমার শুটিঙের ফাঁকে জনপ্রিয় এক নায়িকার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন এক সাংবাদিক৷

সাংবাদিকঃ এই চলচ্চিত্রে আপনার বিপরীতে নায়ক হিসেবে কে আছেন?

নায়িকাঃ জী, কুদ্দুস ভাই

সাংবাদিকঃ ওহ, আমগো কুদ্দুইসা? (গাল ভরা হাসি দেখে বোঝা গেল উনার খুব কাছের লোক এবং তার বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউও নিয়েছেন বিভিন্ন সময়)

আমাদের সাধারণ মানুষগুলোর উপর ইত্যাদির প্রভাব এতোটাই বেশি (দুই দশকের উপর বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের মর্যাদা তাই প্রমাণ করে) যে এই ধরনের কৌতুক উদ্দীপক কথাগুলোই শহর-গ্রামে মানুষের মুখে মুখে ঘুরবে৷ হানিফ সংকেত কি আরেকটু সচেতন হতে পারতেন না? ''

সুব্রত সরকার একই ব্লগে লিখেছেন ঈদের বিশেষ নাটক ‘ভিটামিন টি' নিয়ে৷ লিখেছেন,

রাতে ভিটামিন টি পুরোটা সহ্য হবার আগেই ঘুমিয়ে পড়ছিলাম৷ তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন পরিচালক, প্রযোজক মহোদয়দের প্রতি৷ লিখেছেন, ‘‘আমাদের দেশি নাটকে কিছুদিন আগেও তরুণ সমাজের একটা অন্যরকম চাহিদা তৈরি হয়েছিলো৷ এই চাহিদা, এই ঝোঁকটাকে বাঁচিয়ে না রাখতে পারলে নিজের সর্বনাশটা নিজের চোখেই দেখতে হবে৷ বিদেশি চ্যানেলের সাথে প্রতিযোগিতায় আমাদের হার সুনিশ্চিত৷ তাই বেশি নয়, ভালো নাটক বানান৷''

একই ব্লগে মফিজ লিখেছেন,

‘‘বর্তমানে রেডিও আর টিভি চ্যানেলগুলিতে কিছু উপস্থাপক, উপস্থাপিকা অপ্রয়োজনীয় এবং অশুদ্ধ ইংরেজি শব্দ-বাক্য বলে বোঝাতে চেষ্টা করে তারা যথেষ্ট স্মার্ট!'' বিরক্তিকর কিছু উদাহরণ তুলে ধরেছেন তিনি৷ লিখেছেন, ‘‘একটি প্রাইভেট টেলিভিশনে দুপুরে আর সন্ধ্যায় দুইটি অনুষ্ঠান হয়, তেমনি একটি অনুষ্ঠানে তারকা অতিথি'র সাথে কথপকথন৷

উপস্থাপিকা: ‘সো' দর্শক, অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বাগতম৷ ‘সো' আজকের অতিথির সাথে আলাপ শুরু করি৷ ‘সো' অবসরে কী করা হয়?

(ভাববাচ্যে আলাপ করতে হবে কেন? তুই, তুমি, আপনি কিছু একটা বল)

এরপর ‘সো' আমাদের অনুষ্ঠান আজকের মতো শেষ৷''

সংকলন: অমৃতা পারভেজ

সম্পাদনা: জাহিদুল হক