1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আয়রন ফিশ: আগামীর মহৌষধ!

প্রতিবেদন: কাইল জেমস/এসিবি২২ এপ্রিল ২০১৪

পুরোনো গাড়ি থেকে তৈরি হচ্ছে ‘ওষুধ’৷ তা পাত্রের খাবারে ফেলুন৷ সে খাবার খেলে খিটখিটে মেজাজ ঠিক হয়ে যায়, দূর হয় শারীরিক দুর্বলতা৷ রক্তশূন্যতায় আক্রান্তদের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠছে ‘আয়রন ফিশ’!

https://p.dw.com/p/1Blji
Deutschland Fischhandel Symbolbild
ছবি: Getty Images

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্তত ১৬০ কোটি মানুষ রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত৷ রক্তশূন্যতার কারণে মানব দেহে দেখা দেয় নানা ধরণের জটিলতা৷ চেহারায় মলিনতা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া এবং শরীর দুর্বল লাগার মতো কিছু লক্ষণ দেখা দেয় শুরুতে, যা সাধারণের পক্ষে কোনো রোগের পূর্বলক্ষণ বলে মনে করা সম্ভব নয়৷

রক্তস্বল্পতাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষ অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশেই বেশি৷ এ রোগ হয় মূলত রক্তে আয়রন কমে যাওয়ার কারণে৷ কম্বোডিয়ায় কর্মরত ক্যানাডিয়ান গবেষকরা আয়রন ডেফিসিয়্যান্সি বা রক্তে আয়রনের স্বল্পতাজনিত রোগের এক মহৌষধ উদ্ভাবন করেছেন৷ ওষুধটির নাম ‘আয়রন ফিশ!'

২০১০ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, কম্বোডিয়ায় আয়রনের স্বল্পতাজনিত রোগের বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে৷ সে দেশের শতকরা ৫৫ ভাগ শিশু এবং ৪০ ভাগ অন্তঃস্বত্ত্বা নারীই রক্তশূন্যতায় ভুগছে৷ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো কম্বোডিয়াতেও আয়রনের ঘাটতি কমাতে ‘আয়রন ট্যাবলেট' খাওয়ানো হয়৷ কিন্তু রোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এবং আয়রন ট্যাবলেট সবার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে না থাকায় রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷

কিন্তু ক্যানাডীয় এক গবেষক দল উদ্ভাবন করেছেন এমন এক ওষুধ যা কম্বোডিয়ার সাধারণ মানুষও উৎসাহ নিয়েই গ্রহণ করছে৷ হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনালের হয়ে কম্বোডিয়ায় কাজ করতে এসে তাঁরা প্রথমে কাজ শুরু করেন একটি গ্রামে৷ সেই গ্রামের মানুষকে খাদ্যের সঙ্গে আয়রন গ্রহণ করানোর জন্য প্রথমে ঘরে ঘরে গিয়ে একটা করে লোহার খণ্ড দিয়ে আসা হয়৷ সবাইকে বলা হয়, দৈনন্দিন খাবার রান্না করার সময় যেন তাঁরা লোহার খণ্ডটিও বিশেষ উপায়ে ব্যবহার করেন৷

গ্রামবাসীরা লোহার খণ্ডটি ব্যবহার করায় কোনো আগ্রহই দেখালেন না৷ গবেষকদের তখন অন্য রাস্তা ধরতে হলো৷ সবাইকে তাঁরা বললেন, লোহার খণ্ড পছন্দ না হলে লোহার তৈরি পাত্রে রান্না করতে৷ কিন্তু লোহার পাত্রেও কারো আগ্রহ নেই৷ কম্বোডিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের মতো সেই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষও অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রেই রান্না করতে লাগলেন৷ আয়রনের অভাবজনিত রোগ কী আর তাতে কমে!

নিয়মিত মাছ খেলে কিন্তু আয়রনের ঘাটতি খুব একটা দেখা দেয়না৷ কিন্তু কম্বোডিয়ার মানুষের সেই সঙ্গতি থাকলে তো! গবেষকরা তাই এবার কম্বোডিয়ায় খুব জনপ্রিয় এক মাছের আদলে বানালেন লোহার মাছ ‘আয়রন ফিশ'৷ কম্বোডিয়ার সেই গ্রামে এখন অনেকেই অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে রাখা খাবারেই ছেড়ে দেন ধাতব এ মাছ৷ আয়রন ফিশের আয়রন খাদ্যে মেশানোর জন্য সঙ্গে দেয়া হচ্ছে লেবুর রস৷ ব্যস, মানুষ তৃপ্তিভরে খাচ্ছে আর এর ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই গ্রামটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ হয়ে গেছেন রক্তশূন্যতামুক্ত৷

রাজধানী নমপেনের অদূরে এক বাড়িতে জ্বলছে আগুন৷ কাছে গেলে দেখবেন, আগুনের উৎস বিশাল এক চুল্লি৷ চুল্লিতে পুড়ে গলছে লোহার বড় বড় টুকরো৷ পুরোনো গাড়ি ভেঙে তা থেকে পাওয়া টুকরো টুকরো লোহা এভাবে গলিয়েই তৈরি করা হচ্ছে ‘আয়রন ফিশ'৷ বাড়ির মালিক লাও ফুন জানালেন, লোহার তৈরি এমন মাছ শুধু বিক্রি করেন না, নিজেরাও খান৷ দুই সন্তানের জননী সোথ সোখেউমও বললেন, ‘আয়রন ফিশ' তাঁর শরীরের দুর্বলতা, মেজাজের খিটখিটে ভাব দূর করেছে৷

এক গ্রামে সুফল পাওয়া গেলেও ‘আয়রন ফিশ' এখনো কম্বোডিয়া সরকার এবং বড় বড় এনজিওগুলোর স্বীকৃতি পায়নি৷ আরেক গ্রামের ১৫শ মানুষের মাঝে এখন পরীক্ষা করে দেখা হবে ‘আয়রন ফিশ'-এর কার্যকারিতা৷ সফল হলেই সরকারের স্বীকৃতি পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন ক্যানাডীয় গবেষক লরেন রামজে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য