1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আকিল ইব্রাহিম: ত্রাস ও স্বাধীনতা

১ আগস্ট ২০১১

নাইন-ইলেভেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলশ্রুতি সম্ভবত ইরাক যুদ্ধ৷ ইরাকিদের কাছে সাদ্দাম হুসেনের পতনের অবাধ আনন্দ শীঘ্রই নৈরাজ্য এবং সহিংসতার দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়৷

https://p.dw.com/p/127IL
Nur für Projekt 9/11: Porträt Aqeel Ibrahim Lazim (Irak)
আকিল ইব্রাহিমছবি: DW

আকিল ইব্রাহিম লাজিম যখন নাইন-ইলেভেনের খবরটা পান, তখন তাঁর নিজের বিয়ের আয়োজন চলেছে৷ বসরার তরণ দাঁতের ডাক্তার আকিল৷ বাগদত্তার সঙ্গে বসে বিয়ের খুঁটিনাটি ঠিক করছেন, চোখে পড়ল টিভি'তে সুদূর মার্কিন মুলুকের এক আশ্চর্য দৃশ্য৷ খোদ নিউ ইয়র্কে জেটপ্লেন গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে সুউচ্চ টাওয়ারে৷ আগুন জ্বলছে৷ মানুষজন ঝাঁপ দিচ্ছে৷ টাওয়ার ভেঙে পড়ছে৷ ধুলোর ঝড় বেয়ে আসছে রাজপথ ধরে৷

দ্বন্দ্ব

আকিল তো প্রথমে ভেবেছিলেন এটা কোনো মার্কিন থ্রিলার ছবি৷ পরে ভাবলেন, মানবসভ্যতার অন্ত ঘটছে৷ কিন্তু নিজের যে অনুভূতিটা ৩৫ বছর বয়সী আকিলের আজও মনে আছে, সেটা হল: এই অভাবনীয় আক্রমণের শিকার যে সব নিরপরাধ মানুষ, তাদের জন্য এক আশ্চর্য মমতা৷ অথচ সেই আক্রমণ যারা চালিয়েছে, তারা তো আকিলের মতোই মুসলমান৷ আকিল এই দ্বন্দ্বে অভ্যস্ত ছিলেন না৷

Bild 6: Motiv: Aqeel Ibrahim Lazim, im Auto, Basra/Irak, März 2011 Copyright: Ahmed Mohamed Mansour für DW, März 2011 Text Bildergalerie: Angst vor Autobomben und Entführungen bestimmten jahrelang den Alltag. Lazim denkt heute noch oft an seinen Cousin Mohammed, der 2006 entführt und später für tot erklärt wurde. Im ganzen Land hatte die Familie nach ihm gesucht. ***Achtung: Bild darf nur im Zusammenhang mit der Bildergalerie "Irak 9/11 verwendet werden.***
ছবি: DW

১১ সেপ্টেম্বরের রাতে শহরের পথে পথে হঠাৎ নিরাপত্তা বাহিনী এবং শাসক বাথ পার্টির সদস্যদের বন্দুক হাতে টহল দিতে দেখেন আকিল - যেন ইরাকই পরবর্তী আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারে৷ বিয়ের দিনগুলোতেও আকিল যতো না অভিনন্দনবার্তা পেয়েছেন, তার চেয়ে বেশি নাইন-ইলেভেনের খবর শুনেছেন৷ কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা যায় যে, নাইন-ইলেভেনের ফলশ্রুতি হিসেবে ইরাককেও আরো একটি যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হবে৷ মার্কিন সরকার সাদ্দাম হুসেনের বিরুদ্ধে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র মজুদ করার অভিযোগ তোলে৷ সেই সঙ্গে আল-কায়েদার সঙ্গে সংযোগেরও অভিযোগ ছিল৷

২০০৩ সালের ১৯ মার্চ৷ ইরাক যুদ্ধের শুরু৷ এবারও আকিলের দ্বিধাবিভক্ত অবস্থা৷ বহু ইরাকির মতো তিনিও স্বদেশের উপর এই আক্রমণে সুখী ছিলেন না৷ অপরদিকে সাদ্দাম হুসেনের পতনের প্রত্যাশা ছিল৷ যা ঘটতে মাত্র ২২ দিন সময় লাগে এবং ইরাকে হর্ষ-উল্লাসের বন্যা বয়ে যায়৷ অপরদিকে বসরার রাস্তায় দখলদারী বিদেশি সৈন্যদের দেখে অন্যান্য অনেক ইরাকির মতোই খুশী হতে পারেননি আকিল৷ অথচ সেই নতুন পাওয়া স্বাধীনতার স্বাদ, নিজের মনোভাব প্রকাশ্যে এবং নির্ভয়ে ব্যক্ত করার এই অভূতপূর্ব স্বাদ ভুলতে পারেননি আকিল৷ পেশাগতভাবেও: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর চাকরিটাও থাকল, আবার নিজের চেম্বারও খুলতে পারলেন আকিল, সাদ্দাম এবং তার পেটোয়াদের আমলে যা দুঃসাধ্য হতো৷

স্বাধীনতার মূল্য

Bild 12: Motiv: Aqeel Ibrahim Lazim, zu Fuß gehend mit seinen Kindern Sarah und Mohammed, Basra/Irak, März 2011 Copyright: Ahmed Mohamed Mansour für DW, März 2011 Text Bildergalerie: Aus Angst vor Autobomben, Morden und Entführungen begleitet Lazim seine beiden eigenen Kinder, Sarah und Mohammed, bis heute jeden Tag persönlich in die Schule. ***Achtung: Bild darf nur im Zusammenhang mit der Bildergalerie "Irak 9/11 verwendet werden.***
ছবি: DW

কিন্তু স্বাধীনতার মূল্য দিতে হয়৷ ইরাকিদের তাদের সদ্যলব্ধ স্বাধীনতার মূল্য দিতে হয়েছে বছরের পর বছর চরম বিশৃঙ্খলা, শিয়া-সুন্নি রক্তাক্ত সংঘাত এবং একের পর এক সন্ত্রাসী আক্রমণ সহ্য করে৷ ‘‘এ তো আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা নয়,'' বলেছেন আকিল৷ এ কেমন স্বাধীনতা, যা হাজার হাজার ইরাকির প্রাণ নিয়েছে, দেশকে নৈরাজ্যে ডুবিয়ে দিয়েছে? ২০০৬ সালে আকিলের এক আত্মীয় অপহৃত হন৷ তার খোঁজে আকিল মর্গে গিয়ে দেখেন লাশের পর লাশ, পচনের গন্ধ৷ তাঁর সেই আত্মীয়ের লাশ কিন্তু কোনোদিনই খুঁজে পাওয়া যায়নি৷

তাই আজ নাইন-ইলেভেনের ছবি দেখে আকিল ভাবেন: এদেশেও তো মানুষেরা, শিশুরা এই যুদ্ধ, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসের পরিবেশেই বেঁচে আছে, বড় হচ্ছে৷ তাদের সকলের মধ্যেও ভয় দানা বেঁধে আছে৷ নয়তো আকিল প্রতিদিন তাঁর দুই ছেলেমেয়েকে ব্যক্তিগতভাবে স্কুলে পৌঁছে দেন কেন৷

প্রতিবেদন: মুনাফ আল সাইদি/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ