1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রং বদলাবে যে কাপড়!

২৩ আগস্ট ২০১৪

গল্প হলেও সত্যি: সেফালোপড গোত্রীয় সামুদ্রিক প্রাণীদের ত্বকে এক ধরনের সেন্সর থাকে, যার কল্যাণে তারা পারিপার্শ্বিকের রং ও নকশা নকল করতে পারে৷ মার্কিন প্রযুক্তিবিদ ও জীববিজ্ঞানীরা ঠিক সেই ধরনের কাপড় তৈরি করার চেষ্টা করছেন৷

https://p.dw.com/p/1Cysf
Octopus vulgaris Tarnung Camouflage
ছবি: picture-alliance/OKAPIA KG, Germany

কাটলফিশ, স্কুইড অথবা অক্টোপাস – এরা রং বদলায় হয় প্রাণ বাঁচানোর জন্য, নয়ত শিকার ধরার জন্য৷ ত্বকের রং ও প্যাটার্ন বদলে পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেয়ে সহজ আর কার্যকরী আর কি থাকতে পারে? একেই তো বলে কামোফ্লাজ – সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে যাবার সময় যে বিশেষ ধরনের রং ও ডিজাইনের উর্দি পরে, সেটারও কাজ হলো সৈন্যদের পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে মিলিয়ে ‘অদৃশ্য' করে দেওয়া৷ শুধু সৈন্যদের ফেটিগ বা ইউনিফর্মে কেন – সামরিক বাহিনীর গাড়ি থেকে শুরু করে প্লেন, সব কিছুতেই এই কামোফ্লাজ পাওয়া যাবে৷

কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই কষ্ট করে রং ধরাতে হয়, এবং এক পরিস্থিতি কিংবা পরিবেশের রং অপর পরিবেশ কিংবা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায় না, সেটাও এক সমস্যা৷ সমাধান হলো: যদি সেফালোপডদের চামড়ার মতো কোনো কাপড় তৈরি করা যায়, যা নিজে থেকেই রং বদলে পারিপার্শ্বিকের অনুরূপ হয়ে যাবে৷ মার্কিন নৌবাহিনীর অর্থানুকুল্যে ঠিক সেই গবেষণাই চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, গত তিন বছর ধরে৷ এবং সেই গবেষণার ফলাফল এবার প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর সাপ্তাহিক প্রোসিডিংস-এ৷

সংবেদনশীল ‘ডাই'

ইঞ্জিনিয়ার এবং বায়োলজিস্টরা মিলে যে বস্তুটি সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছেন, তার বাজারে ছাড়ার উপযোগী হয়ে উঠতে এখনও ঢের বাকি৷ অথচ স্থপতি, ইন্টিরিয়র ডিজাইনার, ফ্যাশন হাউস, কে না এই নতুন ‘প্রোডাক্ট'-টির আশায় বসে আছে৷ বিজ্ঞানীদের সর্বাধুনিক রিপোর্ট যে তাদের একেবারে হতাশ করেছে, এমন বলা যায় না৷ রিপোর্টটির মুখ্য রচয়িতা যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেটিরিয়াল সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জন রজার্স৷ তিনি জানিয়েছেন: ‘‘আমরা যদি কাপড়টার উপর সাদা আলো এবং বিভিন্ন নকশা ফেলি, তাহলে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া হয়ে কাপড়টা অনুরূপ একটা প্যাটার্ন তৈরি করে৷ তা সত্ত্বেও আমরা রং বদলাতে পারে, এমন ওয়াল পেপার সৃষ্টি করা থেকে অনেক দূরে৷ তবে এই ফলাফল কালে আমাদের সেদিকে নিয়ে যেতে পারে৷''

কাপড় নামধারী পরীক্ষামূলক পদার্থটি নমনীয়৷ এর বিভিন্ন স্তরে রয়েছে তাপমাত্রার পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল ‘ডাই', অর্থাৎ কাপড় রং করার ইমালশন এবং ফটোসেন্সর, যেগুলি এক-দুই সেকেন্ডের মধ্যে কাপড়টির নকশা বদলে দিতে পারে৷ ‘ডাই'-টাও মজার, কেননা তা কম তাপমাত্রায় কালো দেখালেও, ৪৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপরে স্বচ্ছ হয়ে যায়৷

সেফালোপডদের কেরামতি

রজার হ্যানলন সেফালোপডদের চামড়ার ফিজিওলজির ক্ষেত্রে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে পড়েন৷ তিনি কাজ করেন ম্যাসাচুসেটস-এর উডস হোল-এ, মেরিন বায়োলজিকাল ল্যাবোরেটরিতে৷ তিনি বলেন যে, ‘অ্যাডাপ্টিভ কামোফ্লাজ' সেফালোপড-গোত্রীয় প্রাণীদের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি৷ সেফালোপডদের শরীর নরম এবং তারা তথাকথিত ‘ফুড চেইন'-এর ঠিক মাঝামাঝি৷ কাজেই তারা ডুবুরি পাখি ও শিকারি মাছদের খাদ্য হিসেবে গণ্য৷ কাজেই সেফালোপডরা তাদের রং ও নকশা পরিবর্তনের ক্ষমতার বিকাশ ঘটিয়েছে: মাত্র তিন থেকে পাঁচটি বুনিয়াদি টেম্পলেট থেকে বেছে নিয়ে৷

সেফালোপডদের চামড়া বা ত্বকের সর্বত্র আলোর সেন্সর ছড়ানো আছে, অর্থাৎ সেই মলিকিউলগুলি আছে৷ অর্থাৎ তারা ছদ্মবেশ ধরার জন্য আলোক ব্যবহার করে – কিন্তু কিভাবে? সেটা কারো জানা নেই৷ তবুও বিজ্ঞানীরা যে কামোফ্লাজ ধারণের উপযোগী কৃত্রিম ত্বক সৃষ্টির পথে এতটা এগিয়েছেন, সেটাই বা কম কিসে?

এসি/ডিজি (এএফপি)