1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইয়ুঙ্কার: অর্থনৈতিক সঙ্কট সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে

সঞ্জীব বর্মন১৮ মার্চ ২০০৯

লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রী জঁ ক্লোদ ইয়ুঙ্কার ইউরোপের বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের জের ধরে সামিজক স্তরেও অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন৷ চরম বেকারত্ব ও ক্রয়-ক্ষমতা হ্রাসের ফলে এমনটা ঘটতে পারে বলে তাঁর ধারণা৷

https://p.dw.com/p/HF3V
ছবি: AP

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ এই অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরিণাম কী হতে পারে, সেবিষয়ে একের পর এক সাবধানবাণী শোনা যাচ্ছে৷ ইউরো এলাকার দেশগুলির কাঠামো ‘ইউরোগ্রুপ’এর প্রধান – লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রী জঁ ক্লোদ ইয়ুঙ্কার আশঙ্কা করছেন, গোটা ইউরোপ জুড়ে বেকারত্বের হার এমন মাত্রায় বেড়ে যেতে পারে, যে শেষ পর্যন্ত এক সামাজিক সঙ্কটের সূত্রপাত ঘটতে পারে৷ শুধু বেকারত্ব নয়, যাদের চাকরি টিকে থাকবে, তাদেরও আয় অথবা ক্রয়ক্ষমতা আচমকা কমে গেলেও এমন এক পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বলে ইয়ুঙ্কার আশঙ্কা করছেন৷ জার্মানির ‘ডি ভেল্ট’ সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়ুঙ্কার এই সঙ্কটের অন্যান্য কিছু দিকও তুলে ধরেছেন৷ তাঁর মতে, সাধারণ মানুষ এই অবস্থায় অত্যন্ত অসহায় বোধ করতে শুরু করেছেন – বিশেষ করে রাজনৈতিক কাঠামোর প্রতি তাঁদের আস্থা অনেক কমে যেতে পারে৷

ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ইয়ুঙ্কারের অবদান অনস্বীকার্য৷ ফলে তাঁর মতামতকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে৷ এমন এক সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ আছে কি?

ইয়ুঙ্কার মনে করেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যে ভাবেই হোক, স্বল্প সময়ের চাকরি এবং নতুন প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আরও বেশী বিনিয়োগ করতে হবে৷ এই সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে কর্মী ও শ্রমিকদের দক্ষতা ও জ্ঞান বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে, যাতে তাঁরা বর্তমান এই যুগের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন৷ এমন এক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে তার সুফল বহুকাল পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে৷

অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে মার্কিন প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচির ক্ষেত্রে বিশাল পরিমাণ অর্থ ঢেলে চলেছে৷ ইউরোপও একই পথ অনুসরণ করছে, যদিও সেই কর্মসূচির আর্থিক অঙ্ক আমেরিকার সঙ্গে তুলনীয় নয়৷ এটাই কি সঠিক পথ?

‘ডি ভেল্ট’এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইয়ুঙ্কার বলেছেন, ইউরোপ এমন এক সঙ্কট কাটাতে আদৌ যে এত বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে পারে, গত বছরের শেষেও আমি এমনটা ভাবতে পারি নি৷ এটা একেবারেই অবাস্তব৷ তা সত্ত্বেও আমরা এটা করেছি, কারণ পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক, তা আমরা বুঝতে পেরেছি৷ এবার আমাদের অপেক্ষা করে দেখতে হবে, এই কর্মসূচি কতটা ফলপ্রসূ হয়৷ কমপক্ষে ১৮ মাস – অর্থাৎ ২০১০ সালের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখতে হবে, যে বর্তমান পদক্ষেপগুলি কতটা সুফল বয়ে আনছে৷ তার আগে নতুন কোনো পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই৷

বলাই বাহুল্য, বর্তমান সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতি জগতও নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকতে চাইছে না৷ কারণ সঙ্কটের এই সময় ধৈর্য্যের আশা করা কঠিন৷

ইয়ুঙ্কারের মতে, এই সময়কালে প্রত্যেক সরকারকে কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে৷ রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা যাতে মারাত্মক হারে বেড়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ অন্যদিকে সরকারী ব্যয় কমিয়ে এনে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনাকে মূলেই শেষ করে দেওয়া চলবে না৷ ২০১১ সালের মধ্যে ইউরোপ আবার প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে যাবে৷ তাই ২০১১ সালের আগে বাজেটের ভারসাম্য আনার লক্ষ্যমাত্রার দিকে নজর দেওয়া সম্ভব হবে না৷

এমন এক সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য দেশের মধ্যে ঐক্য কতটা জরুরি? কারণ প্রত্যেক দেশই তাদের নিজেদের আভ্যন্তরীণ সঙ্কট কাটাতে ব্যস্ত৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের সদস্য দেশগুলি এমন কঠিন সময়ে ই.ইউ.-র কাছে বিশাল মাত্রায় সহায়তার আশায় রয়েছে৷ ঐক্যের অভাব থাকলে লন্ডনে আসন্ন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বার্থ কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

ইয়ুঙ্কার মনে করেন, প্রত্যেকটি সদস্য দেশ ইউরোপীয় স্তরে সংহতির আশা করতেই পারে৷ কিন্তু তার আগে তাদের দেখাতে হবে যে তারা নিজেদের বাজেট ঘাটতি কমিয়ে এনে দক্ষতার সঙ্গে সরকারী ব্যয় পরিচালনা করতে কতটা উদ্যোগী হয়েছে৷ যেসব দেশ এই সুযোগে দ্রুত ইউরো এলাকায় যোগদান করতে চায় এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত মোটামুটি পূরণ করেছে, তাদের কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে৷ জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনে ই.ইউ.-র বর্তমান সভাপতি দেশ চেক প্রজাতন্ত্র ঐ সম্মেলনে বাকিদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে৷ সেদেশের দায়িত্ব হবে, সব সদস্য দেশের মতামতের প্রতিফলন ঘটানো৷