1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশী নারীদের অগ্রণী ভূমিকা

মারিনা জোয়ারদার২৭ মার্চ ২০০৮

সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংক একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা আত্মসচেতনবোধে এগিয়ে গেছে বেশ দ্রুত৷ অন্তত ৩০ বছর আগে মেয়েরা যে অবস্হানে ছিল এখন আর সেই অবস্হানে নেই৷

https://p.dw.com/p/Dil6
ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তর
ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তরছবি: AP

বাংলাদেশের মহিলারা ৩০ বছর আগের চেয়ে অনেক বেশী আত্মসচেতন এবং চলাফেরায় স্বনির্ভর হয়েছেন৷ সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক তা প্রকাশ করেছে৷ বিশ্ব ব্যাংক একটি জরিপ চালায় বাংলাদেশের মহিলাদের ওপর৷

সেই জরিপে মূলত পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা ব্যবস্হা এবং কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকাকে প্রাধান্য দেয়া হয়৷ এর সাথে তুলনা করা হয় সমাজে মেয়েদের অবস্হান এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়গুলো৷ দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেয়েরা সাফল্য দেখিয়েছেন৷

অপ্রতুল স্বাস্হ্য ব্যবস্হা, অসম পারিশ্রমিক এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের পরও জরিপ দেখাচ্ছে অন্য চিত্র৷ এসব বাঁধা সঙ্গে নিয়েই বাংলাদেশের মেয়েরা উঠে এসেছে, নিজেদের স্বনির্ভর করতে সক্ষম হয়েছে৷

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে একটি৷ মাথাপিছু আয় এ দেশটিতে অত্যন্ত কম৷ কিন্তু তার পরেও দেশের শিক্ষা ব্যবস্হা বিশেষ করে প্রাথমিক স্কুলগুলো এবং স্বাস্হ্য বিষয়ক দিক দিয়ে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে৷ জানান বিশ্ব ব্যাংক রিপোর্টের বাংলাদেশী প্রণেতা মৈত্রী বর্দিয়া দাস৷

তিনি বললেন, দশ বছর আগেও দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের জীবন যাত্রার যে মান ছিল আজ তার পুরোপুরি ভিন্ন৷ আগে ছেলেদের পিছে মেয়েদের দেখা যেত৷ সেই দিন আর নেই৷ স্কুল এবং বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যাচ্ছে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে৷

শিশু মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে- এ কারণে বলা যেতে পারে বাংলাদেশে মেয়েদের অবস্হান অবশ্যই পাল্টেছে৷

গত ৩০ বছরে পরিবার পরিকল্পনার সাহায্যে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করা গেছে৷ জন্মহার প্রায় অর্ধেক৷ একই সাথে বালিকা অবস্হা থেকেই মেয়েদের সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে অনেক৷ তার সাফল্য বাংলাদেশ পাচ্ছে৷ কিন্তু তার পরেও বেশ কিছু সমস্যা এখনো বিদ্যমান জানান মৈত্রী বর্দিয়া দাস৷ তিনি জানান, গর্ভবতী মায়েরা এখনো বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভোগেন৷ জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন এখনো অনেক মা৷ এর মূলে রয়েছে অপুষ্টি এবং অপ্রতুল স্বাস্হ্য ব্যবস্হা৷

যা এখনো দৃশ্যমান৷ এ নিয়ে অনেক কাজ করার আছে, অনেক কাজ বাকি৷

ইতিবাচক দিক হল গত ১০ থেকে ১৫ বছরে কর্মজীবি মহিলাদের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে৷ বিশেষ করে পোষাক শিল্পে এবং বিভিন্ন গার্মেন্ট্স শিল্প কারখানায় পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের দেখা গেছে বেশী৷ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন তারপরও গোটা জনসংখ্যার মাত্র ২৬ শতাংশ মহিলা কর্মজীবি৷ কাজের পরিবেশ এবং শর্ত নিম্নমানের হওয়ায় মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় কম পারিশ্রমিক পাচ্ছে৷ অথচ একই কাজের জন্য পুরুষ সহকর্মী বেশী বেতন পাচ্ছে৷

তবে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পে কাজ করে বাংলাদেশের মহিলারা নিজেদের নিয়ে গেছে স্বর্ণ শিখরে৷ খুবই অল্প পরিমাণে ঋণ গ্রহণ করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলারা চমক দেখিয়েছেন৷ জার্মানির উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত পেট্রা ডানেকার৷

তিনি বললেন, এই ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণের দুটি দিক রয়েছে৷ এক প্রচুর ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে এর পর কাজও হয়েছে এবং দ্বিতীয়ত কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে সেই ঋণ দিয়ে অন্য কিছু করা হয়েছে অর্থাত্ স্বামীর হাতে সেই ঋণের টাকা তুলে দেয়া হয়েছে৷

জরিপের মাধ্যমে প্রশ্ন করা হয়েছে এই ঋণ কি শুধুমাত্র মহিলাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত্ যেখানে পুরুষরাও একটি ভূমিকা পালন করছে৷ এই ঋণ একটি মহিলার, একটি পরিবারের আমূল পরিবর্তন করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিত্৷

তবে একথা সত্যি বাংলাদেশের মেয়েরা এগিয়ে গেছে, এগিয়ে যাচ্ছে৷

আত্মসচেতনতা, আত্মবিশ্বাস, স্বনির্ভরতা যা ছিল একদিন সোনার হরিণ তা ধরা দিচ্ছে অনেক পরিশ্রমের পর৷ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ৷