1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদায় আরাফাত

সঞ্জীব বর্মন১২ নভেম্বর ২০০৪

শুক্রবার প্যালেস্টাইনের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইয়াসের আরাফাতকে রামাল্লাহ-য় তাঁর দপ্তর প্রাঙ্গণ মুকাতায় দাফন করা হয়৷ এর আগে মিশরের রাজধানী কায়রোয় তাঁর শেষকৃত্যে যোগ দেন দেশ-বিদেশের নেতারা৷

https://p.dw.com/p/DPzB
ছবি: AP

মৃত্যুর আগের কয়েক বছর আরাফাতকে যে চার দেওয়ালের মধ্যে কার্যত গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটাতে হয়েছে, সেই মুকাতার প্রাঙ্গণেই তাঁর দাফন কাজ সম্পন্ন করা হলো গতকাল৷ এর আগে তাঁর জন্মের শহর কায়রোয় দেশ বিদেশের নেতাদের উপস্থিতিতে ইয়াসের আরাফাতের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়৷ আরাফাতই বোধহয় ইতিহাসের একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যাঁর শেষকৃত্য বিদেশের মাটিতে সম্পন্ন করতে হয়েছে, কারণ বেশীরভাগ বিদেশী নেতার পক্ষে ইস্রায়েল অধিকৃত জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে যাওয়া সম্ভব ছিলো না৷

আরাফাতের শেষকৃত্য প্যালেস্টাইন ও আরব দেশের রাজপথে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করতে পারে, এই আশঙ্কায় কায়রো ও রামাল্লাহ - কোথাও সাধারণ মানুষকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয় নি৷ ইস্রায়েল অধিকৃত এলাকায় মানুষের চলাচলের উপর নানারকম নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিলো৷ গাজ়া থেকে পশ্চিম তীরে আসার পথও বন্ধ ছিলো৷ ফলে অনেকেই ইচ্ছা সত্ত্বেও রামাল্লাহয় যেতে পারে নি৷

তবে সবরকম বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও গতকাল প্রিয় নেতাকে বিদায় জানাতে মুকাতায় উপস্থিত হয়েছিলেন কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি৷ ভোর থেকেই দলে দলে বাসে করে তারা আসতে থাকে৷ পশ্চিম তীরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৪০টি ও পূর্ব জেরুজ়ালেম থেকে ১০০টি বাস এসেছে৷ এমনকী গাজ়া থেকেও কিছু ফিলিস্তিনি এসে পড়েছিলো৷ একসময়ে মুকাতার দেওয়াল ঘিরে এত মানুষ এসে পড়েছিলো, যে নিরাপত্তা কর্মীরা বাধ্য হয়ে একটি গেট খুলে দেয়৷ সঙ্গে সঙ্গে গোটা প্রাঙ্গণ পুরোপুরি ভরে যায়৷ ফিলিস্তিনি পুলিশ ও সৈন্যরা শুধুমাত্র গতকালের দিনটি রামাল্লাহর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হাতে পেয়েছিলো৷ ফলে তাদের পক্ষে পরিস্থিতি সামলানো আর সম্ভব হয় নি৷ সাধারণত ইস্রায়েলী সেনাবাহিনীর হাতেই রামাল্লাহর নিয়ন্ত্রণ থাকে৷

স্থানীয় সময় দুপুর ২:২০ মিনিটে দুটি হেলিকপ্টার মুকাতার প্রাঙ্গণে এসে নামে৷ আকাশে সেদুটিকে দেখতে পেয়েই মানুষ আরাফাতের নামে স্লোগান দিতে থাকে৷ সাধারণ ফিলিস্তিনিদের কাছে আরাফাত আবু আমার নামেই পরিচিত ছিলেন৷ হেলিকপ্টার নামার পর সবাই ছুটে যান সেদিকে৷ যেসব ফিলিস্তিনি নেতারা আরাফাতের মরদেহ নিয়ে আসতে কায়রোয় গিয়েছিলেন, তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ সিঁড়ি দিয়ে নামতেই পারছিলেন না৷ প্রায় ২০ মিনিট পর সায়েব এরেকাত ও আরও কয়েকজন আরাফাতের শবাধার কাঁধে নিয়ে হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসেন৷ মূহুর্তের মধ্যে জনতার কাঁধে চলে যায় সেই শবাধার৷

মানুষের আবেগের রাশ টেনে ধরতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়েছে৷ এমনকী গোলযোগের আশঙ্কায় অনুষ্ঠানের সময় কমিয়ে আনতে হয়েছে৷ মূল পরিকল্পনা অনুযায়ি জনতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দিতে কিছুক্ষণের জন্য শবাধারটি এক জায়গায় রাখার কথা ছিলো৷ মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ সবাই একটি বারের মতো আরাফাতের শবাধার ছুঁয়ে দিতে চাইছিলো৷ এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা শূণ্যে গুলি ছুড়েছে৷ কিন্তু কোন্ গুলি আরাফাতের সম্মানে, আর কোন্ গুলি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে চালানো হয়েছে, তা আর স্পষ্ট ছিলো না৷ গুলিতে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ এমনকী আরাফাতের শবাধার থেকে একবার ফিলিস্তিনি জাতীয় পতাকা খুলে গিয়েছিলো৷

আরাফাতের ইচ্ছা ছিলো, মৃত্যুর পর তাঁকে যেন জেরুজ়ালেমের পবিত্র আল-আক্সা মসজিদের প্রাঙ্গনে দাফন করা হয়৷ ইস্রায়েলের আপত্তিতে সেই ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয় নি৷ তবে দাফনের আগে আল-আক্সার মাটি ছড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁর শবাধারের উপর৷ শেষ হলো একটি যুগ৷ এক স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র না দেখেই চলে যেতে হলো আরাফাতকে৷