1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিজাব না পরায় ইরানি ২০ অভিনেত্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা

৭ নভেম্বর ২০২৩

ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামি নির্দেশনা মন্ত্রণালয় গতমাসের শেষদিকে ২০ জন অভিনেত্রীর নাম প্রকাশ করে বলেছে, হিজাব পরে বাইরে বের না হওয়ায় তারা কাজ করতে পারবেন না৷

https://p.dw.com/p/4YV3G
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: Dimitris Lampropoulos/AA/picture alliance

সংস্কৃতি ও ইসলামি নির্দেশনা বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ মেহদি এসমাইলি জানান, বাধ্যতামূলক হিজাব আইন না মানায় তাদের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব ছিল না৷

এই অভিনেত্রীদের মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি রয়েছেন৷ ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য সেলসম্যান' মুভিতে আলিদুস্তি অভিনয় করেছিলেন৷ এই চলচ্চিত্রের পরিচালক আসগার ফারহাদি সেরা বিদেশি ভাষার মুভি ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতেছিলেন৷

আলিদুস্তি আগে হেডস্কার্ফ পরতেন৷ বিদেশে গেলেও এর ব্যতিক্রম করতেন না৷ কিন্তু গতবছর নীতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২২ বছর বয়সি জিনা মাশা আমিনির মৃত্যু হলে ইরানে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল৷ সেই সময় বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানাতে আলিদুস্তি ইনস্টাগ্রামে তার একটি ছবি প্রকাশ করেছিলেন, যেটিতে তার মাথায় হিজাব ছিল না৷ আর তার হাতে ধরা কাগজে লেখা ছিল ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা'৷

ছবিটি প্রকাশের পর আলিদুস্তিকে আটক করা হয়েছিল৷ দুই সপ্তাহ পর তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন৷

কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আলিদুস্তি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘আমি তোমাদের হেডস্কার্ফ পরার বাধ্যবাধকতা মানব না, যেটা থেকে এখনও আমার বোনদের রক্তে ঝরছে৷''

এদিকে, অক্টোবর মাসের শুরুতে ১৭ বছর বয়সি আরমিতা জেরাভান্দ নামের এক শিক্ষার্থী হিজাব না পরে স্কুলে যাচ্ছিলেন৷ সেই সময় নীতি পুলিশ তাকে ধরেছিল৷ এক পর্যায়ে জেরাভান্দ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ সেখানে কয়েকদিন কোমায় থাকার পর তাকে ‘ব্রেন ডেড' ঘোষণা করা হয়৷ ২৯ অক্টোবর জেরাভান্দকে সমাহিত করা হয়৷

তেহরানের এক শিক্ষার্থী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘বাইরে বের হওয়ার সময় হেডস্কার্ফ না পরে আমরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি৷ অনেক অভিনেত্রীকে এখনও হিজাব পরতে দেখাটা কষ্টকর৷'' এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইরানে সাম্প্রতিক সময়ে আয়োজিত এক শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছেন৷ ইরানের চলচ্চিত্র পরিচালক দারিউশ মেরজুই ও তার স্ত্রী চিত্রনাট্যকার ভাহিদেহ মোহাম্মাদিফারের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান ছিল সেটি৷ সেখানে চলচ্চিত্র জগতের মানুষেরা অংশ নিয়েছিলেন৷

দারিউশ মেরজুই ও ভাহিদেহ মোহাম্মাদিফারকে ১৮ অক্টোবর নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল৷ তাদের শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল৷ কর্তৃপক্ষ বলছে, ঐ দম্পতির বাড়িতে কাজ করা সাবেক মালি ডাকাতি করতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে৷ তবে অনেকেই এতে সন্দেহ পোষণ করেছেন৷ কারণ ইরানি অনেক পরিচালকের মতো মেরজুইও প্রায়ই সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন৷ ২০২২ সালের মার্চে তার পরিচালিত শেষ ছবি ‘লা মাইনর' এর উপর সেন্সর আরোপের পর ৮৩ বছর বয়সি মেরজুই সামাজিক মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে একটি কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন: ‘‘আমাকে মেরে ফেলুন, যা করতে ইচ্ছা করে করুন... কিন্তু আমি আমার অধিকার চাই৷''

মেরজুই ও মোহাম্মাদিফারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অনেক পরিচিত অভিনেত্রী হেডস্কার্ফ পরে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ একমাত্র একজন নারী হিজার পরেননি৷ তিনি হচ্ছেন, ঐ দম্পতির ১৬ বছর বয়সি মেয়ে মোনা মেরজুই৷

২০১৭ সাল থেকে জার্মানিতে বাস করা ইরানি মঞ্চ অভিনেত্রী ও লেখিকা শোলে পাকরাভান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি জানি, তরুণ প্রজন্ম আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ৷ আমাদের প্রজন্ম রক্ষণশীল এবং সতর্ক৷'' জার্মানিতে আসার তিন বছর আগে তার মেয়ে রায়হানেহ জব্বারি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল৷ পরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ পাকরাভান তার মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি৷ এখন তিনি অন্যদের হয়ে কথা বলার চেষ্টা করছেন৷ ‘‘আমি জানি বর্তমানে ইরানে প্রতিরোধের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়,'' বলেন পাকরাভান৷ ‘‘আপনি যদি দৃষ্টির বাইরে অদৃশ্য হতে না চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই অনিচ্ছা সত্ত্বেও হেডস্কার্ফ পরতে হবে৷''

শবনম ফন হাইন/জেডএইচ