1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বৈরশাসকদের বিপক্ষে লড়তে শব্দ অন্যতম অস্ত্র : লিনা

৬ জুন ২০১১

‘এ টিউনিশিয়ান গার্ল’৷ ডয়চে ভেলের ব্লগ প্রতিযোগিতায় এ বছর ‘সেরা ব্লগ’ নির্বাচিত হয়েছে এটি৷ লিনা বেন মেহনি নামের ২৭ বছরের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা প্রায় চার বছর আগে এই ব্লগ প্রতিষ্ঠা করেন৷

https://p.dw.com/p/11UxS
লিনা বেন মেহনিছবি: Screenshot http://atunisiangirl.blogspot.com/

২০ জুন জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিতব্য ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম' অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে৷

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে আফ্রিকার দেশ টিউনিশিয়ার ব্লগ এটি৷ বছরের শুরুতে সারা বিশ্বের নজর ছিল এই দেশটির প্রতি৷ কারণ ২৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বেন আলির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল দেশটির আপামর জনসাধারণ৷ আর তা ঠেকাতে সরকার নিয়েছিল দলন নির্যাতনের পথ৷ সে সময় এসব নির্যাতনের বিস্তারিত ছবিসহ নিজের ব্লগে তুলে ধরেছিলেন লিনা৷ সেজন্য তাঁকে যেতে হয়েছিল আন্দোলনের মাঠে৷ নিতে হয়েছিল ঝুঁকি৷ কেননা টিউনিশিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে লেখাটাই ছিল একটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ৷ কিন্তু এসব কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি লিনাকে৷ অদম্য সাহস নিয়ে তিনি লিখে গেছেন একের পর এক ব্লগ৷ তারই স্বীকৃতি যেন পেলেন ডয়চে ভেলের ব্লগ প্রতিযোগিতায় সেরা ব্লগ নির্বাচিত হয়ে৷

লিনা ব্লগ লেখেন তিন ভাষায়৷ ইংরেজি, ফরাসি আর আরবিতে৷ সে কারণে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেন তিনি৷ লিনা ব্লগ লেখা শুরু করেন ২০০৭ সালে৷ কিন্তু কেন ব্লগের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মেছিল? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ছেঁড়াফাটা কাগজে নিজের চিন্তাভাবনা লিখে রাখার শখ ছিল তার৷ পরে একদিন খবরের কাগজে ব্লগ সম্পর্কে একটা প্রবন্ধ দেখেন তিনি৷ ব্যস, সঙ্গে সঙ্গেই সেটার প্রতি আগ্রহ জন্মে যায় তার৷ আর বাড়তি পাওনা হিসেবে পেয়ে যান সবার সঙ্গে নিজের মনোভাব আদানপ্রদানের সুবিধা৷ তিনি যখন লেখালেখি শুরু করেন তখন তাঁর দেশে স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা ছিল না৷ কেউ সেটা করলে সরকারের লোকজন এসে হয় তাকে ধরে নিয়ে যেত, নয়তো তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতো৷ ঠিক এমন এক অসম্ভব পরিবেশে লেখা শুরু করেন লিনা, তাও আবার নিজের নামে৷ যেখানে অন্যরা লিখতো ছদ্মনামে৷ লিনা মনে করেন মানবাধিকার নিয়ে লেখাগুলোতে আসল নাম থাকলে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হয় বেশি৷ এছাড়া লেখার মাধ্যমে কাউকে কোনো কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করতে চাইলেও আসল নাম থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷

Gewinner der BOBs Preise Flash-Galerie
লিনা প্রায় চার বছর আগে এই ব্লগ প্রতিষ্ঠা করেনছবি: atunisiangirl.blogspot.com

টিউনিশিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বেন আলির পতনের পর সেখানে এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে৷ তারা জুলাইতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই এই সময়ে দেশটিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকার কথা৷ কিন্তু লিনা বলছেন অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুরোটা নয়৷ কেননা অন্তর্বর্তী সরকারও আগের সরকারের মতো আন্দোলন ঠেকাতে নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে৷ লিনার সাম্প্রতিক ব্লগগুলোতে এই বিষয়গুলোই উঠে আসছে৷ যেমন গতমাসের একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে তাঁর ব্লগে৷ জানা যায়, সরকার ষড়যন্ত্র করে আরও দীর্ঘমেয়াদে থাকার পাঁয়তারা করছে এমন একটি খবরে উত্তেজিত হয়ে সাধারণ জনগণ আবারও মাঠে নেমেছিল৷ তখন পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে৷ এছাড়া অনেক সাংবাদিক আর ব্লগারকেও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নির্মমভাবে পেটায়, কাউকে কাউকে ধরেও নিয়ে যায়৷ অথচ এই ঘটনাটা তেমনভাবে বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচার পায়নি৷

এসব কারণে লিনা মনে করেন না যে, বেন আলির সরকারের পতনের পর ব্লগের প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে৷ বরং গণতান্ত্রিক সরকারের ভুল ধরিয়ে দেয়া, প্রয়োজনে কিছু পরামর্শ দেয়ার জন্যও ব্লগ লেখা প্রয়োজন, বলছেন লিনা৷

টিউনিশিয়ার পর একই ধরণের অভ্যুত্থান হয় মিশরে৷ এরপর সেটা ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যেও৷ এখনও চলছে ঐ আন্দোলন৷ সেসব দেশেও ব্লগারদের নির্যাতন করা হচ্ছে৷ তাদের উদ্দেশ্যে লিনা বলেন ধৈর্য না হারিয়ে লেখা চালিয়ে যেতে৷ কেননা টিউনিশিয়ার মতো ঐসব দেশের সরকারও বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না৷ কারণ বেন আলির মতো স্বৈরশাসকদের বিপক্ষে লড়তে শব্দও এক ধরনের অস্ত্র হিসেবে কাজ করে৷

টিউনিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লিনা স্বপ্ন দেখেন, ব্লগই একটি আরব বিশ্বে বসন্তের সুবাতাস ফিরিয়ে আনতে পারবে৷ লিনার ব্লগ পড়তে চলে যান এই ঠিকানায় http://atunisiangirl.blogspot.com

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক