1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সু্ইস মিনার নিষেধাজ্ঞার সমালোচনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন

৩ ডিসেম্বর ২০০৯

সুইজারল্যান্ডে নতুন করে মসজিদের মিনার নির্মাণে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনায় যোগ দিয়েছে জাতিসংঘও৷

https://p.dw.com/p/KpYu
ফাইল ফটোছবি: AP

মঙ্গলবার এর নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার নাভি পিল্লাই বলেছেন ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থাপত্য নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা সুস্পষ্টভাবে বৈষম্যমূলক৷

মসজিদের মিনার নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে সু্ইজারল্যান্ডে গণভোটের রায় প্রকাশের পরপরই এই পদক্ষেপের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছে মুসলিম বিশ্বসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ৷ বিভিন্ন ধর্মের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সমালোচনা করেছে ভ্যাটিকানও৷

মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার নাভি পিল্লাই বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা গভীরভাবে বিভক্তিকর, সুইজারল্যান্ডের জন্য এমন পদক্ষেপ নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতার সঙ্গে দেশটিকে সংঘাতময় পথে নিয়ে যাচ্ছে৷

এক বিবৃতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার এই সাবেক বিচারক বলেন, ইসলাম অথবা অন্য যে কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি স্থাপত্য নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ‘সুস্পষ্টভাবে বৈষম্যমূলক'৷

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিটি'র সদস্য এবং ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্সের আইনের অধ্যাপক নাইগেল রুডলি বলেছেন, ‘‘এটা ধর্মীয় ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের লঙ্ঘন৷ এটা গির্জার চূড়া নির্মাণে নিষেধাজ্ঞার সমপর্যায়ের৷''

ওদিকে, মৌলিক অধিকার এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি দ্বারা সংরক্ষিত অধিকারের বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কাউন্সিল অফ ইউরোপ৷

একইভাবে মঙ্গলবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী তাইয়্যেপ এরদোয়ান আঙ্কারায় পার্লামেন্ট ভাষণে বলেছেন, বিষয়টিকে গণভোটে দেওয়া সুইজারল্যান্ডের ভুল হয়েছে৷ একইদিনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল বলেছেন এটা ‘সুইসদের জন্য লজ্জার'৷ উল্লেখ্য, সুইজারল্যান্ডে প্রায় একলাখ তুর্কি বংশোদ্ভূত রয়েছে যাদের বেশিরভাগই মুসলিম৷

সুইজারল্যান্ডে মোট মুসলিমের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ৷ যা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচভাগ৷ এদের বেশিরভাগই তুরস্ক, বসনিয়া এবং কসোভো থেকে আসা৷ দেশটির ক্যথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পর তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী মুসলিমরা৷

সুইডেন, জার্মানি, ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মতোই ব্রিটেনেও এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলন কর্মীরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে৷

লন্ডনের সাবেক মেয়র এবং ব্রিটেনে ‘এক সমাজ, বহু সংস্কৃতি' আন্দোলনের প্রধান কেন লিভিংস্টোন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘সুইজারল্যান্ডে, যে দেশে মোট মিনারের সংখ্যাই মাত্র ৪টি সেখানে মসজিদের মিনার নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা শুধু মুসলিমদের ওপর নয় বরং সমাজের মৌল স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হামলার সামিল৷''

সুইস সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা সুইজারল্যান্ডের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বয়ে আনতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপে এবং বিশ্বের অন্যত্র আমাদের সমাজগুলোর বাস্তবতা হল বিভন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্মের সহ-অবস্থানের বিরুদ্ধে যায় এমন প্রতিটি পদক্ষেপই আমাদের সমাজকে অনিরাপদ করে তোলে৷''

ওদিকে, এ নিষেধাজ্ঞার কট্টর সমালোচক সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ব্লগে লিখেছেন, এ ঘটনার পর জাতিসংঘের এটা বিবেচনা করা উচিৎ যে তারা সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করবে কি না৷ তিনি বলেন যে জেনেভাও এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দিয়েছে সেখানে প্রতিবছর জাতিসংঘের শত শত বৈঠক আর সম্মেলন অনুষ্ঠান করা যায় কি না৷

প্রতিবেদক: মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদক: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক