1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিনেমা যখন হাতিয়ার

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়২০ জানুয়ারি ২০১৪

২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি কলকাতায় হবে পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, জনতার যে উৎসবে দেখানো হবে আম আদমির প্রতিবাদের ছবি৷

https://p.dw.com/p/1At43
ছবি: IckeT/Fotolia.com

জঙ্গল হাসিল করে আবাদ গড়া হয়, আবাদ উজাড় করে আবাসন৷ সভ্যতার আগ্রাসনের তো এইটাই রীতি৷ কিন্তু কখনও কখনও কোনও ব্যক্তিমানুষ এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়৷ লড়াইয়ে হয়তো তার হার-ই হয়, কিন্তু প্রতিবাদটা নজির হয়ে থেকে যায় ইতিহাসে৷ এমনই এক প্রতিবাদের গল্প ‘‘কোয়ার্টার নম্বর ৪/১১৷'' তথ্যচিত্র এবং অন্য ধরণের ছবি করিয়ে, কলকাতার রাণু ঘোষ অনেক বছর ধরেই পরিবেশ সুরক্ষার ইস্যু নিয়ে কথা বলে আসছেন, ছবি করে আসছেন৷ তাঁর বিশেষ দায়বদ্ধতা রয়েছে শহর কলকাতা থেকে দ্রুত বুজে যেতে থাকা, হারিয়ে যেতে থাকা জলাভূমি বা ওয়েটল্যান্ডের সুরক্ষার প্রতি৷

সেই রাণু যখন জানতে পারলেন, দক্ষিণ কলকাতার একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার বড় জমিতে বিত্তবানদের যে আবাসন তৈরি হচ্ছে, সেখানে পরিবেশ দপ্তরের অনুমতি না নিয়েই বুজিয়ে ফেলা হয়েছে ওই কারখানা এলাকার মধ্যে থাকা বিস্তীর্ণ এক জলাভূমি, সরাসরি লড়াইয়ে নেমে পড়লেন রাণু৷ হাতিয়ার অবশ্যই তাঁর ভিডিও ক্যামেরা৷ কিন্তু কাজ করতে গিয়ে আরও এক লড়াকুর খোঁজ পেয়ে গেলেন তিনি৷ মানুষটি ওই বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার এক শ্রমিক, কারখানা চত্বরেই কোয়ার্টার নম্বর ৪/১১ –এর বাসিন্দা৷ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ১৪০০ শ্রমিক মাটি কামড়ে পড়েছিলেন ওখানেই৷ তাঁদের হয়তো ভরসা ছিল, শ্রমিকদরদী বামপন্থী সরকার নিশ্চয়ই তাঁদের একটা ব্যবস্থা করে দেবে৷

Wolkenkratzer Südstadt Kalkutta
দক্ষিণ কলকাতায় গড়ে ওঠা উঁচু ভবনছবি: Sirsho Bandopadhyay

ব্যবস্থা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা শ্রমিকের স্বার্থে নয়! তখন বামজমানার মদতে ক্রমশ ফুলেফেঁপে ওঠা প্রোমোটারদের স্বার্থে৷ সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বন্ধ থাকা কল-কারখানার জমি ছেড়ে দেওয়া হবে আবাসন প্রকল্পের জন্য৷ শুধু প্রোমোটার নয়, ওই সব বন্ধ কারখানার মালিকদেরও যে বিস্তর লাভ হল এতে, সেটা বলাই বাহুল্য৷ দক্ষিণ কলকাতার ওই বন্ধ কারখানার ১৪০০ কর্মহীন শ্রমিককেও নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিদায় করা হল কারখানা চত্বর থেকে৷ কিন্তু বেঁকে বসলেন একজন৷ ওই কোয়ার্টার নম্বর ৪/১১ –এর বাসিন্দা৷ কিন্তু যে সংস্থা ওখানে আবাসন প্রকল্পটি তৈরি করছিল, সেটা আসলে শহরের বাঘা বাঘা সাতজন প্রোমোটার তথা শিল্পপতির এক জোট৷ বেকার শ্রমিকের সাধ্য কি আইনের মারপ্যাঁচে তাঁদের সঙ্গে পেরে ওঠে! কাজেই অসম এই যুদ্ধে হারতে তাঁকে হলই৷ এখন ওই জায়গায় কলকাতার সবথেকে বিলাসবহুল হাই রাইজ টাওয়ার, যার সামনে আলো করে রয়েছে জনপ্রিয় এক শপিং মল৷ দুনিয়াসেরা ব্যান্ডের সম্ভার সেই মলে৷ সেই চোখ ধাঁধানো পরিবেশে নেহাতই বেমানান এক হারতে নারাজ খেটে খাওয়া মানুষের গল্প৷

তবুও রাণু সেলুলয়েডে গল্পটা বলেছেন৷ তাঁর মতই প্রতিবাদের গল্প বলেছেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সহধর্মী এবং সহমর্মী পরিচালক-চিত্রগ্রাহকরা৷ ওঁরা বলছেন, সিনেমা অফ রেজিস্টেন্স৷ প্রতিরোধের সিনেমা৷ গত আট বছর ধরে মূলত উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রায় ৩৫টি ফিল্ম ফেস্টিভাল করেছেন ওঁরা যেখানে ছোট পরিসরে, মধ্যবিত্ত পল্লি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, বন্ধ কল-কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে, নির্মাণ-শ্রমিক, এমনকি গৃহ পরিচারিকাদেরও জন্যেও ছবি দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছে৷ অন্য ধারার ছবি, সেহেতু ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটাররা ওঁদের পাত্তা দেয় না৷ অবশ্য তার পরোয়াও ওঁরা করেন না৷ নিজেরাই প্রোজেক্টার নিয়ে, পর্দা খাটিয়ে ছবি দেখান ওঁরা এবং ব্যাপক সাড়াও পান জনতার থেকে!

২০১৩ সালের মে মাস থেকে ফিল্মস ফর রেজিস্টেন্স-এর কলকাতা চ্যাপটারের কাজ শুরু হয়েছে৷ তারই ফসল প্রথম পূর্ণাঙ্গ এক চলচ্চিত্র উৎসব, যাকে ওঁরা বলছেন পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল – জনতার চলচ্চিত্র উৎসব৷ আয়োজনে সহযোগী হিসেবে রয়েছে পিপলস ফিল্ম কালেক্টিভ এবং জনসংস্কৃতি মঞ্চ নামে আরও দুই গোষ্ঠী৷ শুধু ছবি দেখান নয়, তার আগে পরে পরিচালকরা হাজির থাকবেন দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি মত বিনিময় করতে৷ ছবি বাছাই হয়েছে তিনটি বিভাগের জন্য৷ নব্য ধারার কাহিনীচিত্র, নব্য ধারার তথ্যচিত্র এবং ধ্রুপদী তথ্যচিত্র৷ শেষের বিভাগটিতে দেখার সুযোগ মিলবে “আমার লেনিন”, “ভয়েসেস ফ্রম বালিয়াপাল” বা “মুক্তির গান”-এর মতো সাড়া জাগানো সব তথ্যচিত্র৷ সমস্ত ছবির মূল সুর একটাই – প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷