1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আল কায়েদার হাল হকিকত

১ মে ২০১২

বছর ঘুরতে চলল৷ বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে গিয়ে মার্কিন অপারেশনে খতম করেছিল মার্কিন সেনারা দোসরা মে৷ আল কায়েদা এখন বেশ দুর্বল বলে দাবি৷ তবে, অ্যামেরিকা পুরোপুরি হুমকি মুক্ত নয়৷

https://p.dw.com/p/14nEN
ছবি: Picture-Alliance/dpa

‘আল কায়েদার কোমর ভেঙে দিয়েছি৷ আর সম্ভব নয় দ্বিতীয়বারের ৯/১১৷ আল কায়েদা এখন অনেকটাই দুর্বল৷ বিশ্বের পশ্চিমাঞ্চলে বিমানে নাশকতার আশঙ্কা৷' এইসব বিবৃতির পাশাপাশি, অ্যামেরিকার স্লোগান, ‘অ্যামেরিকা বেটার, বাট নট সেফ৷' অর্থ, অ্যামেরিকা আগের থেকে ভালো, কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়৷

মন্তব্য অনেক রকমের৷ ভিন্ন মত, ভিন্ন লক্ষ্য, ভিন্ন ধ্যান ধারণা৷ তারপরেও বাস্তবের মাটিতে কী রয়েছে সেটাতে আগে দরকার চোখ বুলিয়ে নেওয়া৷ আল কায়েদার সংগঠনকে দুর্বল করতে পাকিস্তানের দুর্গম এলাকাগুলিতে মার্কিন ড্রোন বিমান হামলা নিয়ে অনেক সমালোচনা শোনা গেছে৷ কিন্তু সেই ড্রোন হামলাতেই যুদ্ধের পরিভাষায় ‘স্ট্র্যাটেজিক ওয়ার ফ্রন্টের' কায়দায় একাধিক আল কায়েদা ঘাঁটি ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ‘আল কায়েদাকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে নিজেদের জান মাল বাঁচাতেই বেশি৷ হামলার অবকাশ তারা তেমন পায় নি৷' এফবি আই-এর এই দাবি কতটা মানা যায় সে প্রশ্ন পরে৷ বরং পাকিস্তানের দিকেই তাকানো যাক৷

পাকিস্তানের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস পড়েছে বিন লাদেনের৷ সেখানেই রাজধানীর কাছে, সেনা ছাউনির ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে সপরিবারে লুকিয়ে ছিল দুনিয়ার মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী৷ অ্যামেরিকার বিশেষ অপারেশনে লাদেন খতম হওয়ার পর যে দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ চোখে পড়েছে, সেও ওই পাকিস্তান৷ আর পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের জন্মভূমি' বলে মার্কিন তকমা লাগানোর পর থেকে তা নিয়ে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও যথেষ্ট চিড় খেয়েছে৷

AP Iconic Images 11. September World Trade Center
‘আল কায়েদার কোমর ভেঙে দিয়েছি৷ আর সম্ভব নয় দ্বিতীয়বারের ৯/১১৷’ছবি: AP

আবার পাশাপাশি একথাও সত্যি যে লাদেনকে খতম করার পর থেকে আল কায়েদার তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি গত এক বছরে৷ পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে কিছু বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ছাড়া আল কায়েদা সেভাবে সন্ত্রাসের মানচিত্রে নিজেদের প্রধান বলে দাবি করতে পারেনি ২০১১ সালের দোসরা মে থেকে এই ২০১২-র এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত৷

তাতে কিন্তু আত্মশ্লাঘায় ভুগছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ লাদেন হত্যার বর্ষপূর্তিতে তাই আগাম সতর্কতা জারি করেছে এফবিআই৷ বলা হয়েছে, পশ্চিম বিশ্বের আকাশপথে হামলা চালাতে পারে আল কায়েদা৷ বোঝা যাচ্ছে, সতর্কতা অনেক বেশি ওপরে তুলেই সব সময়ে সঙ্গিন উঁচিয়ে থাকছে মার্কিন তথা পশ্চিম বিশ্বের গোয়েন্দা মেশিনারি৷ লাদেন নেই মানেই যে আল কায়েদা একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে, তা তো সত্যি নয়৷ বরং আল কায়েদা তাদের ঘাঁটিতে – মানে পাকিস্তান, আফগানিস্তানের দুর্গম অঞ্চলে নিজেদের সংহত করার চেষ্টায় কামাই দিচ্ছে না৷ বারাক ওবামার সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘শত্রু চুপচাপ আছে মানেই হাত পা গুটিয়ে আছে, এটা ভাবা বাতুলতা৷' সেটাকে ভুলছে না যুক্তরাষ্ট্র৷ গত সপ্তাহেই কড়া আর নতুন কানুন তৈরি করা হয়েছে গোয়েন্দাবিভাগের কর্মচারীদের জন্য গাফিলতি যাতে ঠাঁই না পায়, সেটাকে বোঝানোর জন্যই৷

তবে সেসবের পাশাপাশি এই ধারণা করাটাও ভুল যে লাদেনের সংগঠন বা লাদেনের চরম খতমপন্থায় বিশ্বাসীরা পায়ের তলার জমি হারাচ্ছে৷ আল কায়েদা আসলে কোন সংগঠন নয়, এটা একটা আদর্শের নাম৷ যে আদর্শে দীক্ষা অন্য যেকোন নামেই হতে পারে৷ তা সে তালেবান হোক, হিজবুল মুজাহিদিন হোক, সুদূর সোমালিয়ার আল শাবাব হোক কিংবা হোক ইয়েমেনের আল কায়েদা ইন অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা৷ আদতে বিষয়টা একই৷ আর তাদের জন্মঘাঁটি বলে পরিচিত পাকিস্তানের মাটিতে সেদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আল কায়েদা তলায় তলায় ঠিক কোথায় যে অবস্থান করছে, তা তো আর বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়!

রবীন্দ্রনাথ একারণেই বোধহয় বলেছিলেন, স্থির জলের উপরিভাগ একখানি পর্দা টানিয়া রাখে৷ যার তলায় দিব্যি একখানা আস্ত বিশ্ব চলিতে থাকে৷' লাদেন নিহত হওয়ার এক বছরের মধ্যে সেই ‘আস্ত আল কায়েদা বিশ্ব' হাওয়ায় উড়ে গেছে, এমনটা ভাবা বাতুলতা বৈকি!

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় (এএফপি. ডিপিএ)

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য