1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে সোচ্চার চরমপন্থিরা

১১ আগস্ট ২০১২

কিছুদিন আগেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা বন্ধের দাবিতে মিয়ানমারকে হুমকি দিয়েছিল পাকিস্তানের তালেবান জঙ্গি গোষ্ঠী৷ আর এবার, ইন্দোনেশিয়ার একদল চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনও সোচ্চার রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে৷

https://p.dw.com/p/15nxf
ছবি: AP

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা হয়ত বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যহত জনগোষ্ঠী৷ এককালে যাদের স্বাধীন রাষ্ট্র, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ছিল, তারাই এখন ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর বলির শিকার৷ মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় মুসলিম রোহিঙ্গা এবং বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যকার দাঙ্গায় হাজারো রোহিঙ্গার হতাহতের খবর পাওয়া গেছে৷ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, গত জুন মাসের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরুর কিছুদিন পর সেটা প্রশমিত হলেও, নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা বেড়ে চলেছে৷

অ্যামনেস্টি'র দাবি, রোহিঙ্গাদের ওপর রাখাইন সম্প্রদায় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চালানো নির্যাতন, ধর্ষণ, সম্পত্তি বিনষ্ট করা এবং অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ডের ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ' রয়েছে৷ শত শত বাড়ি-ঘর সেখানে জ্বলছে লেলিহান অগ্নিশিখায়৷ তার ওপর বাংলাদেশে ঢুকতে না পেরে গুলি খাওয়া, জখম হওয়া শত শত মুসলিম নারী-পুরুষ নাফ নদীতে ভাসছে, গুনছে মৃত্যুর প্রহর!

Sittwe Kämpfe zwischen Muslimen und Buddhisten
অ্যামনেস্টি'র দাবি, রোহিঙ্গাদের ওপর রাখাইন সম্প্রদায় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চালানো নির্যাতন, ধর্ষণ, সম্পত্তি বিনষ্ট করা এবং অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ডের ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ' রয়েছেছবি: Reuters

জাতিসংঘের ভাষায় রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন নাগরিক৷ তারা মিয়ানমারে নাগরিকতার কোনো সনদ জোগাড় করতে পারে নি৷ অবাক করার বিষয়, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক গণতান্ত্রিক সংস্কার বিশ্বজুড়ে সাধুবাদ পেলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের দিকে স্থানীয় রাজনীতিকদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই৷ বলাবাহুল্য, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে মিয়ানমার৷ আর জাতিসংঘও মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বিধানের কথা না বলে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশকে তাদের আশ্রয় দেয়ার আহ্বান করেছে৷ কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেদেশে আশ্রয় দিতে চায় না৷ সে জন্যই হয়ত আজীবন নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের ধর্ম-পরিচয়টিকেই বড় করে দেখছে পাকিস্তানের তালেবান, সৌদি আরব অথবা ইন্দোনেশিয়ার চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনগুলি৷

তারা সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইট ফেসবুক'এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে ‘মুসলিম হত্যাযজ্ঞ' হিসেবে অবহিত করে একটি প্রচারণা অভিযান শুরু করেছে৷ স্তূপাকৃতি রোহিঙ্গা মুসলমানদের লাশের পাশে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা দাঁড়িয়ে – এহেন ছবি ব্যবহার করে জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টি করতে উদ্যত তারা৷ অথচ ছবিটি আদতে যে হাইতির ভূমিকম্পের সময় তোলা, সেটা অনেকেরই জানা নেই, জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার ইসলাম বিশেষজ্ঞ ইসান আলি৷ তাঁর কথায়, ‘‘২০১১ সালে সেরা ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফোটো' পুরস্কার জয়ী অলিভার লাবান-মাত্তাই'এর তোলা ছবি এটি৷ সেটাকেই ‘সুপার ইম্পোজ' করে ব্যবহার করছে উগ্রবাদী সংগঠনগুলি৷ এটা খুবই দুঃখের বিষয়৷''

Unruhen in Myanmar (Rohingya)
রাখাইন'এ যে দাঙ্গা হয়েছে এবং তার জের যে এখনও চলছে – তা যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনই এটাও মেনে নেয়া যায় না যে মিয়ানমারের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা হত্যা করে চলেছে রোহিঙ্গাদেরছবি: dapd

এদিকে ইন্দোনেশিয়া সরকার সাগর থেকে উদ্ধারকৃত প্রায় চার'শ রোহিঙ্গা মুসলমানকে শরণার্থী হিসেবে বিবেচনা করার ইঙ্গিত দিয়েছে ইতিমধ্যে৷ তাই ইসান আলি'র মতে, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যাটি একটি মানবাধিকার ইস্যু৷ এটাকে ধর্মীয় রঙ দেয়ার কোনো অর্থ হয় না৷ অর্থ হয় না রাখাইন প্রদেশকে ‘জিহাদ'-এর একটি পটভূমি হিসেবে তুলে ধরার৷''

রাখাইন'এ যে দাঙ্গা হয়েছে এবং তার জের যে এখনও চলছে – তা যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনই এটাও মেনে নেয়া যায় না যে মিয়ানমারের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা হত্যা করে চলেছে রোহিঙ্গাদের৷ তেহরিক-ই-তালেবান অফ পাকিস্তান বা টিটিপি মিয়ানমারের মুসলমান নারী-পুরুষদের বাঁচাতে যে হুমকি দিয়েছিল – ‘‘আমরা তোমাদের রক্তপাতের বদলা নেব'' – সেই হুমকি এবার ফেসবুক মারফত যদি ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে, তাহলে সাধারণ মানুষকেই তার মোকাবিলা করতে হবে, বলেন ইসান আলি৷

প্রতিবেদন: অ্যান্ডি বুদিমান / ডিজি

সম্পাদনা: জাহিদুল হক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য