1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যৌনকর্মী সন্দেহে গ্রেপ্তার

Debarati Guha৩০ আগস্ট ২০১২

এ মুহূর্তে জিম্বাবোয়ের রাজধানী হারারের নারীদের অবস্থা সত্যিই শোচনীয়৷ হবে না? পথে বের হলেই যে তাদের খপ করে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ৷ আর কারণ দেখাচ্ছে একটাই – তারা সকলেই নাকি যৌনকর্মী৷

https://p.dw.com/p/15ztI
ছবি: privi(c)2012

সমস্যা হলো, আটক হওয়া এই সব নারীদের কেউই কিন্তু আদতে যৌনকর্মী নন৷ বন্ধু-বান্ধবদের হাত ধরে পাবে বা পার্টিতে যাওয়া সাধারণ ঘরের, সাধারণ মেয়ে এরা৷ এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে একটা সুস্থ জীবনের স্বপ্ন, স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর সাধ৷ অথচ এই একবিংশ শতাব্দিতেও সন্ধ্যার পর একা বা অবিবাহিত পুরুষের সঙ্গে চলা-ফেরা করা, আড্ডা দেয়া – এদের জন্য নৈব নৈবচ৷

তবে নারীদের প্রতি এহেন বৈষম্য মেনে নিতে রাজি নয় জিম্বাবোয়ের বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন৷ তারা ইতিমধ্যেই সরকার, তথা পুলিশের এই পুরুষতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব৷ এই যেমন, ‘উইমেন অ্যাকশন গ্রুপ' অথবা উইমেন ফিল্ম মেকার্স অফ জিম্বাবোয়ে'-র মতো সংগঠনগুলি৷ তাদের সঙ্গেই কাজ করছেন জিম্বাবোয়ের অন্যতম লেখিকা এবং সমাজকর্মী সিটসি দাঙ্গারেম্বগা৷

Demonstration Frauen in Harare Simbabwe
নারীদের প্রতি এহেন বৈষম্য মেনে নিতে রাজি নয় জিম্বাবোয়ের বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠনছবি: privi(c)2012

রাজধানীর বিখ্যাত ‘ইউনিয়ন স্কয়ার'-এ একটি বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘নারীদের সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসন যে ব্যবহার করছে – সেটা অন্যায়, অনৈতিক৷ মেয়েদের বাড়ি থেকে বের হওয়াটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন৷ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মেয়েদের স্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নিতে চায় তারা৷ এখানে যারা প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন, তাদের অনেককেই জেল খাটতে হয়েছে, সহ্য করতে হয়েছে অত্যাচার৷ আমরা এর প্রতিকার চাই৷''

নারীর প্রতি অনাচার অবশ্য সাব সাহারান আফ্রিকার দেশগুলিতে নতুন নয়৷ জিম্বাবোয়ে, জাম্বিয়া, উগান্ডা, সুদান, নাইজেরিয়া, ঘানা, কেনিয়া, তানজানিয়া, সোমালিয়া ইত্যাদি দেশগুলির সংস্কৃতি এখনও পুরোপুরি পুরুষ প্রধান৷ রাতে বাইরে যাওয়া তো দূরের কথা, এখানে মেয়েদের ধরাই হয় শুধুমাত্র পুরুষের যৌন পরিতৃপ্তির নিষ্ক্রিয় সঙ্গি হিসেবে৷

তবে সিটসি একা নন৷ মেয়েদের এভাবে আটক করার প্রতিবাদে ইউনিয়ন স্কয়ার'এ উপস্থিত শ'য়ে শ'য়ে ভুক্তভোগী নারী, তাদের পরিবারবর্গ৷ তাদেরই একজন আনা মেকি৷ বয়েস ২৮৷ এই তো, মাত্র ক'য়েক সপ্তাহ আগে বন্ধুদের সঙ্গে একটি ক্লাবে গিয়েছিলেন তিনি৷ ফেরার পথে দূর সম্পর্কের এক দাদার সঙ্গে পুলিশ তাঁকে আটক করে৷

আনা'র নিজের কথায়, ‘‘আমাকে আটক করার সময় আমি প্রতিবাদ করাতে, পুলিশ কর্মকর্তারা আমাকে বোঝাচ্ছিল যে ‘ভালো মেয়েরা' রাতের বেলায় রাস্তায় বের হয় না৷ পুলিশের কথায়, রাতে যে সমস্ত মেয়ে রাস্তায় ঘোরাফেরা করে, তারা নাকি সকলেই যৌনকর্মী৷ তারা বারে বারে জিজ্ঞাসা করছিল আমার স্বামীর নাম৷ যখন বললাম যে আমি অবিবাহিত, তখন সেটা মস্ত এক সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো৷ অবিবাহিত মেয়েদের পুরুষসঙ্গির সঙ্গে ঘোরাটা কি পাপ?''

বলাবাহুল্য, জিম্বাবোয়েতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করা বেআইনী৷ তারপরও রাতের অন্ধকারে সাধারণ ঘরের মেয়েদের যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে আটক বা গ্রেপ্তারের ঘটনা একটা রোজকার ব্যাপারে পরিণত হয়েছে হারারেতে৷ আর শুধু অবিবাহিত পুরুষসঙ্গিই নয়, বিবাহিত স্বামীর সামনেও মেয়েদের ওপর এধরণের যথেচ্ছাচার হয়ে চলেছে৷

Demonstration Frauen in Harare Simbabwe
নারীর প্রতি অনাচার অবশ্য সাব সাহারান আফ্রিকার দেশগুলিতে নতুন নয়ছবি: privi(c)2012

হারারের পুলিশ ইন্সপেক্টর জেমস সাবাউ জানান, ‘‘পতিতাবৃত্তি বেআইনী ঘোষণার করার পর থেকেই আমরা রাতে এই টহলদারি শুরু করেছি৷ কোনো জিনিস বন্ধ করা হলে, স্বাভাবিকভাবেই সেটা লুকিয়ে করার একটা প্রবণতা সর্বত্রই লক্ষ্য করা যায়৷ তাছাড়া আমরা দিনের আলোতে কোনো মেয়েকেই জিজ্ঞাসাবাদ করি না৷ শুধুমাত্র রাতের অন্ধকারে যারা বের হয়, তাদের আটক করে কথা বলি আমরা৷ বোঝার চেষ্টা করি তারা যৌনকর্মী কিনা৷''

স্বাভাবিকভাবেই, পুলিশের এমন ব্যাখায় সন্তুষ্ট নন জিম্বাবোয়ের নারীরা৷ তারা শীঘ্রই আদালতে এ নিয়ে একটা মামলা দায়ের করবে৷ তাদের আকাঙ্খা একটাই – সমানাধিকার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা৷

প্রতিবেদন: ক্যার্সটিন পপেনডিক, দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: জাহিদুল হক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য