1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভূতের আতঙ্ক

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২

বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ জাপানেও এবার আসর জমিয়েছে ভৌতিক সত্তা৷ ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং সুনামির ধ্বংসলীলার এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে৷ আর এমন সময় ভূতের ভয়ে ফুকুশিমায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ৷

https://p.dw.com/p/14Bfj
ছবি: REUTERS

জাপানের ইশিনোমাকি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে ভূতের ভয়৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্ক, গত বছরের ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং সুনামির ছোবলে মারা যাওয়া মানুষের আত্মা এখন ঐ অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং স্থানীয়দের উপর নানাভাবে ভর করছে৷ এমন আতঙ্ক থেকে স্থানীয় একটি নির্মাণ প্রকল্পের কাজও স্থগিত করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷

গত বছরের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি বাজার পুননির্মাণ করা হচ্ছিল৷ কিন্তু মাঝপথেই সেই কাজ থামিয়ে দেওয়া হয়৷ সেই অর্ধ-সমাপ্ত ভবনের দিকে দেখিয়ে ৬৪ বছর বয়সি সাতোশি আবে বললেন, আমি শুনেছি যে, যারা এই ভবনটি পুননির্মাণের কাজ করছিল তারা ভৌতিক প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ আসলে অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছিল৷ এখানে-সেখানে সর্বত্রই মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷''

এক সময় জমজমাট মাছ ধরা ও কেনা-বেচার বন্দর ছিল এই ইশিনোমাকি৷ কিন্তু গত বছরের সুনামি ঐ অঞ্চলকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল৷ সেখানে বসবাসকারী ১৯ হাজার মানুষের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগই প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ সেই ধ্বংসযজ্ঞের উপর আবারো গড়ে উঠছে মানুষের বসবাসের ঘর৷ বাজার-ঘাট, রাস্তা, বিদ্যালয় পুননির্মাণ করা হচ্ছে৷ ছেলে-মেয়েরা আবারো স্কুল-কলেজে যাওয়া শুরু করেছে৷ কিন্তু হারানো স্বজনদের আর কখনই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়৷ তাদেরই স্মৃতি সারাক্ষণ ঘুরে ফিরছে দুর্যোগ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষের মনে৷

সেসব স্মৃতিই এখন ভূতের আসর হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন শিনিচি সাসাকির মতো অনেকেই৷ সাসাকি বলেন, ‘‘২০১১ সালের ১১ই মার্চ বারবার আমাদের মনে ফিরে ফিরে আসে৷ আপনি যদি এমন কাউকে চিনতেন যিনি এখানে হঠাৎ করেই মারা গেছে, তাহলে মনে হবে যেন সেই ব্যক্তি এখনও এখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ আমি ভুতে বিশ্বাস করি না, তবুও আমি বুঝতে পারি যে কেন সারা শহর জুড়ে এমন ভূতুড়ে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে৷''

বার্তা সংস্থা এএফপি'র প্রতিবেদক জানিয়েছেন, পথের মাঝে ট্যাক্সি চালকদের থামতে ইঙ্গিত করা হলেও অনেকেই যাত্রী পাওয়ার জন্য না দাঁড়িয়ে চলে যাচ্ছে৷ তবে তাদেরই একজন জানালেন, ট্যাক্সি চালকরাও এখন এমন আতঙ্কে রয়েছে যে, তাদের আশঙ্কা হয়তো পথের মাঝে যিনি থামতে বলছেন তিনি কোন মানুষ না হয়ে কোন ভূত হতে পারে৷ স্থানীয় এক মহিলা জানিয়েছেন, তিনি এরকম বেশ কিছু গল্প শুনেছেন যে, মানুষরা এখন মাঝে মাঝেই দেখতে পায় - অসংখ্য নারী-পুরুষ দল বেঁধে দূর পাহাড়ের দিকে দৌড়াচ্ছে তেড়ে আসা জলের ছোবল থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য৷ এ যেন মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য তাদের নিষ্ফল প্রচেষ্টা, যার কোন শেষ নেই এবং পরিণতিও নেই৷

ইশিনোমাকির মানুষের মনে এমন ভূতের আসর সম্পর্কে নৃতত্ত্ববিদ তাকিও ফুনাবিকি বলেছেন, যে কোন বড় ধরণের বিয়োগান্তক করুণ ঘটনার পর এমন ভৌতিক আতঙ্ক এবং শঙ্কা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়াটা স্বাভাবিক৷ কারণ বৃদ্ধ বয়সে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরণ ছাড়া অন্য সব ধরণের মৃত্যুই স্বজনদের ভয়ানকভাবে আলোড়িত, ব্যথিত ও মর্মাহত করে৷

যাহোক, বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে এর নানা ব্যাখ্যা থাকলেও হারানো স্বজনদের প্রেতাত্মাগুলোকে শান্ত করতে এবং সমাজ থেকে ভূতের ভয় দূর করতে সেখানে গির্জা এবং মঠ থেকে খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের গুরুদের ডাকা হয়েছে৷ যথারীতি বিশেষ প্রার্থনা ও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়েছে জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই শহরটিতে৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য