1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পয়ঃনিষ্কাশনকে সম্পদে পরিণত করতে চান বিজ্ঞানীরা

২ মে ২০১১

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নগরায়নের পাশাপাশি বাড়ছে নাগরিক সমস্যাও, যার অন্যতম হলো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা৷ উন্নয়নশীল বিশ্বের মেগাসিটিগুলোতে উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দূষিত হচ্ছে পানি এবং পরিবেশ৷

https://p.dw.com/p/117RT
দুষিত পানিকে আবার ব্যবহারযোগ্য করে তোলাটা হচ্ছে অন্যতম চ্যালেঞ্জছবি: AP

এই দুষিত পানিকে আবার ব্যবহারযোগ্য করে তোলাটা হচ্ছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ৷ ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়, হাজার হাজার মোটরবাইকের শব্দে কান ঝালাপালা, রাস্তার পাশেই দোকানগুলোতে বাজছে ভিয়েতনামি গান৷ যানজট আর জনজট মিলে হ্যানয় ভিয়েতনামের মেগাসিটি৷ এবং এজন্যই এখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন জার্মান বিজ্ঞানী পেটার কর্নেল৷ তিনি এখানে এসেছেন হ্যানয়ের পয়ঃনিষ্কাশন নিয়ে কাজ করতে৷ শহরটিতে কয়েকটি প্ল্যান্ট বসিয়েছেন পেটার কর্নেল৷ এই সব প্ল্যান্ট হ্যানয়ের পয়ঃনিষ্কাশনের পানিকে পরিশুদ্ধ করে আবার নাগরিকদের বাড়িতেই ফেরত পাঠাচ্ছে৷ কেবল পানি বিশুদ্ধই করছে না, পয়ঃনিষ্কাশনের বর্জ্যগুলোকে জ্বালানিকাজে ব্যবহারের জন্য বায়োগ্যাসে পরিণত করছে৷ এরপরও যেগুলো বাকি থাকছে, সেগুলোকেও কাজে লাগাচ্ছেন প্রফেসর কর্নেল৷ যেসব বর্জ্যকে সারে পরিণত করা হচ্ছে এবং কৃষিখেতে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ অর্থাৎ যে বর্জ্য নিয়ে নগরকর্তাদের এত মাথাব্যাথা, তাকেই এখন নাগরিক সুবিধায় পরিণত করছেন এই বিজ্ঞানী৷

তিনি বলেন, ‘‘ আমি পয়ঃনিষ্কাশনকে একটি সম্পদ হিসেবেই দেখছি৷ এর শতকরা ৯৯.৫ ভাগই হচ্ছে পানি৷ এবং বাকি দশমিক পাঁচ শতাংশকেও ব্যবহার করা সম্ভব৷ জ্বালানি, তাপ এবং সার হিসেবেও আমরা এগুলোকে কৃষিতে ব্যবহার করতে পারি৷ কাজটি বেশ আগ্রহ জোগানোর মতই৷''

বিজ্ঞানী পেটার কর্নেল তার এই কাজকে ভিয়েতনামের সুশীল সমাজ এবং রাজনীতিবিদদের সামনে তুলে ধরেছেন৷ হ্যানয়কে গড়ে তোলার মূল দায়িত্ব তো তাদেরই৷ তাই তাদেরকে নগরোন্নয়নের এই চমৎকার বিকল্প সম্পর্কে জানাতে আগ্রহী তিনি৷ জার্মানির ডার্মস্টাড শহরের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পেটার কর্নেল বিগত ৩০ বছর ধরে এই কাজ করে যাচ্ছেন৷ একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পয়ঃনিষ্কাশন কোম্পানিতে কাজ করেছেন৷ সেখানে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা কীভাবে উন্নত করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করেন তিনি৷ বর্তমানে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়েই তাঁর যত আগ্রহ, আর সেজন্য তিনি হ্যানয়ে কাজ করে যাচ্ছেন৷

জার্মানির বৃহত্তম নদী রাইন, যা বয়ে গেছে দেশটির দক্ষিণ থেকে উত্তরে৷ কয়েক দশক আগেও সেই রাইন নদীর পানি ছিল দূষিত, কিন্তু আজ তা অনেকটাই স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার৷ সেই কথা মনে করে পেটার কর্নেল বলেন, ‘‘ ১৯৮০ সালের দিকেও রাইন নদীর পানি ছিল এখনকার চেয়ে অনেক বেশি ঘোলা এবং অপরিষ্কার৷ পাহাড়গুলোতে ছিল একাধিক বাঁধ, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তরুণ বিজ্ঞানী হিসেবে আমার মূল কাজ ছিল এসব নিয়ে৷''

BdT Trinkwasser Versorgung in Südafrika UN Bericht
গোটা বিশ্বে প্রায় প্রতি মুহূর্তেই কোন না কোন শিশু দূষিত পানি পান করে ডায়রিয়া কিংবা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেছবি: AP

জার্মান বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় রাইন নদীর পানি এখন অনেকটাই দূষণমুক্ত হয়েছে৷ বিজ্ঞানী পেটার কর্নেল এখন ইউরোপের এই অভিজ্ঞতাটিকে কাজে লাগাতে চান উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ এজন্য তিনি নানা দেশে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের ধারণাটি দিয়ে যাচ্ছেন, যার অংশ হিসেবে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে তাঁর প্ল্যান্ট বসিয়েছেন৷ কারণ হ্যানয়ের মত দ্রুত বর্ধনশীল মেগাসিটিতে পয়ঃনিষ্কাশন একটি অন্যতম সমস্যা৷ এখানে এখন পর্যন্ত তেমন উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি৷ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় যেসব পানি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো সোজা চলে যায় নদীতে এবং তারপর ভূগর্ভে৷ বিজ্ঞানী কর্নেলের প্রকল্প আগামী দুই দশকের মধ্যে সেই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনবে৷

হ্যানয়ে কাজ করতে গিয়ে সেখানকার পয়ঃনিষ্কাশনের দুরবস্থাও নিজ চোখে দেখেন পেটার কর্নেল৷ নানা ধরণের ময়লা আবর্জনায় ভরপুর সেখানকার পয়ঃপ্রণালি৷ কিন্তু প্রফেসর কর্নেলের দুঃশ্চিন্তা অন্য জায়গায়৷ এই ব্যাপারে তার বক্তব্য, ‘‘ গোটা বিশ্বে প্রায় প্রতি মুহূর্তেই কোন না কোন শিশু দূষিত পানি পান করে ডায়রিয়া কিংবা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে৷ এমন নয় যে এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন৷ কিন্তু এটা নিয়ে এখনও কিছু করা হচ্ছে না, কারণ এটা কোন লাভজনক উদ্যোগ নয় যে এর মাধ্যমে অর্থ আসবে৷ এটা আমাকে সত্যিই কষ্ট দেয়৷''

জার্মানির ডার্মস্টাড শহরের এই প্রকল্প এখন কাজ করে চলেছে হ্যানয়ে৷ এই মুহূর্তে তাদের পরিকল্পনা হলো, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শহরটিতে ১০০ টিরও বেশি প্ল্যান্ট স্থাপন করা, যার মাধ্যমে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা হবে৷ শহরের আয়তন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্ল্যান্টের সংখ্যাও বাড়তে থাকবে৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক