নারী অধিকার
২৩ জানুয়ারি ২০১৩‘‘পুলিশের পদক্ষেপটা আরেকটু জোরদার করা দরকার৷ আইনের কিছু পরিবর্তন করা দরকার৷ এবং দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি হওয়া দরকার,'' বললেন সুনন্দা মুখার্জি৷
উদাহরণ দিলেন ধর্ষণের পর মহিলাদের তথাকথিত মেডিকাল টেস্ট-এর, যেখানে সাধারণত বলা হয়, ‘কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না'৷ তাঁর অভিযোগ, শুধু ধর্ষণই নয়, মহিলাদের উপর আক্রমণ সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়কে বড় শিথিলভাবে নেওয়া হয়, ফাঁক-ফোকর থেকে যায়৷ সেই ফাঁকগুলো আটকানোর জন্য আইনগুলোর আরো বিন্যাস দরকার৷ এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া দরকার, বিশেষ করে অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য৷
শুধু মেডিকাল চেক করে ছেড়ে দেওয়া নয়, সুনন্দা চাইছেন জেলায় জেলায় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি হোক, যেখানে ফরেন্সিক টেস্ট করার ব্যবস্থা থাকবে৷ অরপাধীদের মনেও এর ফলে ভয় হবে, কেননা তারা চিহ্নিত হতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, বিচার প্রক্রিয়া আরো ত্বরান্বিত করতে হবে, ধর্ষণের মামলা তিন বছর, চার বছর, পাঁচ বছর ধরে গড়ালে চলবে না: ‘‘এর ফলে মানুষের মনে বিচার সম্পর্কে শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে যায়৷ অপরাধীরাও এতটা সময় ধরে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারে এবং অপরাধের সমস্ত প্রমাণ নষ্ট করে দেবার একটা সুযোগ পায়৷''
পাঁচ বছর ধরে ধর্ষণের মামলা চললে ‘‘মেয়েটি মানসিক শক্তি হারায়, তাঁর সামাজিক অবমাননা হয়, শেষমেষ বিচার পায় না''৷
এক্ষেত্রে কোন স্তর থেকে পুলিশের সচেতন হওয়া উচিত, এ প্রশ্নের জবাবে সুনন্দা মুখার্জি বললেন, ‘‘একেবারে বুনিয়াদি জায়গা থেকে, যখন একটি মেয়ে তাঁর অভিযোগ নথিভুক্ত করতে প্রথম পুলিশের কাছে যায়৷'' সেখানেও ঠিক সেকশনটি লাগানো দরকার, ৩৭৬ ধারার এ, বি না সি, অপ্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে এফ, গণধর্ষণের জন্য টু-জি৷ কিন্তু তা না করে স্রেফ ‘মলেস্টেশন' বা যৌন হয়রানি লিখে ছেড়ে দেওয়া হয়৷
হাসপাতালেও মেডিকাল টেস্ট হয় যেন তেন প্রকারে, অভিযোগ করলেন সুনন্দা মুখার্জি৷ অথচ ঐ মেডিকাল টেস্টকে ফরেন্সিক টেস্টের পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিত, কেননা অপরাধীর সনাক্তকরণের জন্য সোয়াব টেস্টে যে ‘সিমেন' পাওয়া যেতে পারে, তার আয়ু মাত্র দিন দু'য়েক৷ তার পরে তা শুকনো হয়ে নষ্ট হয়ে যায়৷
অন্যদিকে, সনাক্তকরণ প্যারেডে অপরাধীকে চিহ্নিত করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না৷ ‘‘ক'টি মেয়ের ক্ষমতা থাকে গ্রাম বাংলায়, সেই মামলাকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবার?'' প্রশ্ন করলেন সুনন্দা মুখার্জি নিজে৷ এবং পরিস্থিতি খুব দ্রুত বদলানোর কোনো সম্ভাবনাও সুনন্দা দেখছেন না৷
পরিস্থিতি বদলানোর জন্য প্রয়োজন: ‘‘মহিলাদের একজন মানুষ হিসেবে দেখতে হবে৷ মহিলারাও মানুষ, একেবারে সহজ-সরলভাবে মানুষ৷ তাঁকে ভগবানও বানাতে হবে না, দেবীও করতে হবে না৷ একেবারে পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের মতো সে-ও খায়-দায়, ঘুমোয়, আহার-নিদ্রা-মৈথুন, তাঁর সব কিছুর দরকার আছে৷ এইভাবে তাঁকে দেখতে হবে, দেখার অভ্যাস করতে হবে,'' বললেন সুনন্দা মুখার্জি৷
সাক্ষাৎকার: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ