নারী কর্মী
৮ মার্চ ২০১২সংবাদ ও বিনোদন মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রাটা শুরু হয়েছে মোটে এক যুগ৷ প্রথম দিকে টেলিভিশনে যারা অনুষ্ঠান বা সংবাদ প্রযোজনা করতেন তাদের প্রায় শতভাগই ছিলো পুরুষ৷
টেলিভিশন প্রযোজক পেশায় নারীদের এই যাত্রাটা বাংলাদেশে নতুন৷ এই যাত্রারই সফল মুখ সুমি শাহাবুদ্দিন৷ সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেল সময় টিভি'র নিউজ এডিটর এবং শিফট ইনচার্জ হিসেবে কাজ করছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনো নারী পুরুষের অনেক বৈষম্য আছে৷'' তবে টেলিভিশনে বা গণমাধ্যমে এই ব্যবাধানটা দিন দিনই ঘুচে আসছে বলেই মনে করেন তিনি৷
আজ থেকে পাঁচ সাত বছর আগেও কোনো একজন মেয়েকে টেলিভিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে কর্তাব্যাক্তিরা আশঙ্কা পেতেন৷ কিন্তু মেয়েরা নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই আজ সবার আস্থা অর্জন করে নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
বর্তমানে দেশ টিভিতে কাজ করছেন অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন, সুমনা সিদ্দিকী৷ তাঁর মতে, নারীরা ভালো কাজ করছে৷ নিউজ রুমেও আছে তাদের নিয়ে প্রশংসা৷ কিন্তু তবুও অনেক চ্যানেলেই এখনো নারীদেরকে কাজ দেবার ব্যাপারে একধরণের প্রথাবদ্ধ ধারণা প্রকাশ পায়৷
এই প্রথাবদ্ধা ধারণার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত মানুষ ভাবে যে, সৌন্দর্য বিষয় বা ঘর সজ্জা ইত্যাদি মেয়েদের বিষয়৷ তাই এই জাতীয় অনুষ্ঠান এবং তারকাদের আমন্ত্রণ করে আলোচনা অনুষ্ঠানের করার মতো হালকা অনুষ্ঠানগুলোই মেয়েদের বেশি করতে দেয়া হয়৷''
তবে সময় টিভির বার্তা প্রধান তুষার আব্দুল্লাহ'র বলেন, ‘‘নারী পুরুষের ব্যাবধান বা বৈষম্য যে একেবারে ঘুচে গেছে এমনটা বলা যাবে না৷ হয়তো এখনো কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে কিছু কিছু সমস্যা থাকতে পারে৷ কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের পরিবেশই আজ পাল্টেছে এবং তারা এখন নারী সহকর্মী গ্রহণে সক্ষম৷'' তিনি আরো বলেন, এখন যোগ্যতাটাই হলো আসল প্রশ্ন৷ মেয়ে না-কি ছেলে এটার চেয়েও এখন ব্যাক্তির যোগ্যাতাটাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়৷
তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান সময় টিভির উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার চ্যানেলে পলিটিক্যাল রিপোর্টার থেকে শুরু করে ক্রাইম রিপোর্টার, সংবাদ সম্পাদক, প্যানেল প্রডিউসার এমনকি সিরিয়াস টক শো-এর প্রডিউসার-ও মেয়ে৷ সুতরাং নারীদের এখন আর শুধু ঘর গোছানো বা শিশু-কিশোরের যত্ন নেয়া বিষয়ক অনুষ্ঠান করতে দেবার দিন আর নেই৷''
পাঁচ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে টেলিভিশনে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে৷ কিন্তু সুমি শাহাবুদ্দীন বলছেন, রিপোর্টিং-এ নারীর সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, অনুষ্ঠান বা সংবাদ প্রযোজকের সংখ্যা তেমনটা বাড়ে নি৷ বরং ‘‘এই সংখ্যাটি এখনো পুরুষের তুলনায় মোটে একভাগ'' বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
সুমী শাহাবুদ্দীন, সুমনা সিদ্দিকী এবং তুষার আব্দুল্লাহ সবাই বলছেন, পর্দার পেছনে কাজ করার ক্ষেত্রে এখনো নারীর সংখ্যা কম৷ এর পেছনে কারণও আছে অনেক৷ তবে তারা এটিও বলছেন যে, ‘‘সময় পাল্টাচ্ছে৷ আর সে পরিবর্তনই দেখা যাচ্ছে টেলিভিশনে নারীদের পেশা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে৷''
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ