1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জোর করে বিয়ে দেওয়ার হাজারো ঘটনা জার্মানিতে

১২ নভেম্বর ২০১১

অবাক মনে হলেও একথা সত্যি৷ এই জার্মানিতেই অভিবাসী পরিবারের বহু মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ একটি সমীক্ষার রিপোর্ট থেকে বেরিয়ে এসেছে এই সত্যটি৷

https://p.dw.com/p/139Xe
এই অপরিণত বয়সে যে বিয়ে, তা নিশ্চয়ই স্বেচ্ছায় নয়!ছবি: AP

জার্মানির পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এই প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী একটি সমীক্ষা চালায়৷ লক্ষ্য ছিল একটাই – এদেশে অভিবাসী পরিবারে মেয়েদের আদৌ জোর করে বা তাদের অমতে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা – তা জানা৷ আর সেটা হলে, তার সংখ্যাটা কতো!

সমীক্ষার ফল অবাক করবার মতো, তবে অপ্রত্যাশিত নয়৷ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৮৩০টি ‘কনসাল্টেশন সেন্টার'-এর সরবরাহ করা তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে এই সমীক্ষায়৷ অন্যতম নারী অধিকারবাদী সংগঠন ‘তের দ্য ফাম' এবং হামবুর্গভিত্তিক ‘লাভেৎস' পুরো সমীক্ষা পরিচালনা করে৷ যে চমকপ্রদ সত্যটি উঠে আসে তা হলো, ২০০৮ সালে জার্মানিতে অন্ততপক্ষে ৩,৪৪৩-টি জোর করে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ অধিকাংশ ঘটনাই অবশ্য ঘটেছে বিদেশি বংশোদ্ভূত পরিবারে৷ জানান অভিবাসীদের জার্মান সমাজে সম্পৃক্ত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারিয়া ব্যোমার৷

জার্মান পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ক্রিস্টিনা শ্র্যোডার বলেন, জার্মানিতে মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়া আইনত নিষিদ্ধ৷ যাদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যাক মেয়েই সাহস করে পুলিশের কাছে যায় অথবা যেতে সক্ষম হয়৷ এক্ষেত্রে, এ ধরণের ঘটনা রোধ করা সহজসাধ্য নয়৷ তাই ‘‘আমার ধারণা, সরকারি হিসেবের বাইরেও এহেন বহু ঘটনা ঘটে চলেছে - যা আমাদের অগোচরেই রয়ে গেছে৷''

Fußball Deutschland Phillipp Lahm Claudia Hochzeit Flash-Galerie
সব বিয়ে এমন সুখের হয়না৷ এ ছবি জার্মান ফুটবল তারকা ফিলিপ লামের৷ তিনি বিয়ে করেছেন ক্লাউডিয়াকে৷ছবি: AP

সাম্প্রতিক এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যাদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, তাদের প্রায় ২৩ শতাংশের জন্ম তুরস্কে, ৮ শতাংশের সার্বিয়ায়, কসোভো বা মন্টিনেগ্রোয়, ৬ শতাংশের ইরাক বা আফগানিস্তানে, ৫ শতাংশের সিরিয়ায়, ৩ শতাংশ মরোক্কোয় এবং ২ শতাংশের জন্ম আলবানিয়া, লেবানন অথবা পাকিস্তানে৷

অর্থাৎ বাকি প্রায় ৩৫ শতাংশের জন্ম জার্মানিতে৷ আশ্চর্যের বিষয়, যারা এহেন ঘটনার শিকার, তাদের অন্তত ৪৪ শতাংশ জার্মান পাসপোর্টধারী৷ তবে শুধুমাত্র জার্মান নাগরিকত্ব কোনো রক্ষাকবচ নয়৷ কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েটি পারিবারিক অনুশাসনের ফলে নিজের মত না থাকলেও বিয়ে করতে বাধ্য হয়৷ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এরা ১৭ থেকে ২১ বছরের মধ্যে এবং এদের প্রায় ৮৩.৪ শতাংশ মুসলমান৷

তাই বিদেশি বা বিদেশি বংশোদ্ভূতদের জার্মান সমাজে সম্পৃক্ত করার জন্য ছোট থেকেই প্রয়োজন জার্মান ভাষার শিক্ষা৷ অভিবাসীদের জার্মান সমাজে সম্পৃক্ত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারিয়া ব্যোয়মার বলেন, বাবা-মার কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে একটি আত্মবিশ্বাসী, স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়া জীবন চালানোর চাবিকাঠি হচ্ছে জার্মান ভাষার শিক্ষা৷ তিনি মনে করেন, জোর করে বিয়ে দেওয়া মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন৷ ব্যোয়মার চান স্কুলের মাধ্যমেও ইস্যুটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হোক৷

পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ক্রিস্টিনা শ্রোয়ডার জার্মানির মুসলিম সংগঠনগুলিকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার এই প্রথা রোধে বড় রকমের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে নারীদেরও৷

অন্যদিকে, জার্মানি থেকে প্রাপ্ত বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিদেশে নিয়ে গিয়েও জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে৷ তাই এবার, তাদের আবার জার্মানিতে ফিরে আসার অধিকারকেও স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত জার্মানি৷ সেই সূত্রেই এ সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়ার কথা জানান ব্যোমার৷ তিনি বলেন, তুরস্ক অথবা অন্যান্য দেশ থেকে আসা নারীদের প্রায়ই যেভাবে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, তা আর চলতে দেওয়া যায় না৷''

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক