জার্মানির সর্বোচ্চ আদালতের ৬০ বছর পূর্তি
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ইউরোজোনের সংকট মোকাবিলায় অনেকটা বড় ভাইয়ের মতো কাজ করছে জার্মানি৷ কেননা এই অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানি৷ এছাড়া ‘ইউরো' নামের যে একক মুদ্রা এখন প্রচলিত রয়েছে, অর্থাৎ ইউরোপের ১৭টি দেশে তার স্বপ্ন যারা দেখেছিল, জার্মানি তাদের মধ্যে অন্যতম৷ তাই ইউরোজোনকে বাঁচাতে এবং গ্রিসকে অনেক বড় অংকের ঋণ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে জার্মানি তৎপর৷ ইতিমধ্যেই ঐ ঋণের একটা বড় অংশ দিয়েছে জার্মানি৷ আর সামনে আরেক কিস্তি দেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে৷
এই যে জার্মানি এতো টাকা দিচ্ছে সেটা আসলে যাচ্ছে জার্মান করদাতাদের পকেট থেকে৷ কিন্তু অন্য একটা দেশের জন্য কেন জার্মান করদাতারা অর্থ দিতে যাবে? তাই অনেকেই সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চেয়েছে৷ আর এক্ষেত্রে, অভিযোগ জানানোর সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে জার্মানির সাংবিধানিক আদালত৷ এই আদালতে গ্রিসকে অর্থ সাহায্য দেওয়া নিয়ে জার্মান করদাতাদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসার পর, বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেন সাংবিধানিক আদালতের বিচারকরা৷ পরে তাঁরা একটি রায় দেন৷ সেটা অবশ্য সরকারের পক্ষে যায়৷ আদালত বলে, ইউরো বাঁচাতে সরকার যেটা করছে সেটা সাংবিধানিক৷
এতো গেল একটি ঘটনা৷ ঠিক এভাবে কোনো নাগরিক যদি মনে করেন যে তাঁর সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তাহলে তিনি সাংবিধানিক আদালতে বিচার চাইতে পারেন৷ বলা হয়, জার্মানিতে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক আদালতের কথাই শেষ কথা৷
এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে৷ ১৯৯১ সালে জার্মান এক দম্পত্তি, যার একজন চীনা বংশোদ্ভূত এবং অপরজন জার্মান, বাভারিয়া রাজ্যের একটি স্কুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন৷ তাঁদের অভিযোগ, তাঁদের মেয়ে যেই স্কুলে পড়ে সেখানকার ক্লাসরুমে বোর্ডের পাশে যীশুখৃষ্টের আকৃতি সম্বলিত একটি ক্রুশ রাখা রয়েছে৷ এটা তাঁদের মেয়ের ভাবাদর্শের দিক থেকে নিরপেক্ষভাবে গড়ে ওঠার বিরোধী বলে মনে করছেন তাঁরা৷ তাই তাঁরা প্রথমে স্থানীয় এক আদালতে অভিযোগ করেন৷ কিন্তু সেখানে তাঁদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়৷ তবে তাতে তাঁরা দমে যাননি৷ পরবর্তীতে অভিযোগ নিয়ে যান সাংবিধানিক আদালতে৷ সেখানকার রায়ে বলা হয়, বাভারিয়ার সরকার যে আদেশের বলে স্থানীয় সব স্কুলে ক্রুশ রাখা বাধ্যতামূলক করেছে, সেটা সাংবিধানিক নয়৷ এই আদালত আরেকটি উল্লেখযোগ্যে রায় দিয়েছিল ১৯৭৫ সালে, গর্ভপাত নিয়ে৷
১৯৫১ সালে গঠিত এই আদালত জার্মানির কার্লসরুহে শহরে অবস্থিত৷ বড় বড় সব প্রতিষ্ঠানের প্রভাবমুক্ত রাখতে একে দূরে রাখা হয়েছে৷ যেমন বার্লিনের সরকার, মিউনিখের জার্মানির বিদেশ বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের কেন্দ্রীয় ব্যাংক - ইত্যাদি থেকে বহু দূরে অবস্থিত এই আদালত
তবে একটি বিশেষ বিচার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত এই সাংবিধানিক আদালত জার্মানির নিয়মিত বিচার ব্যবস্থার অংশ নয়৷ অ্যামেরিকার সুপ্রিম কোর্টের মতো হলেও, জার্মানির এই আদালতের কিন্তু অ্যামেরিকার আদালতের চেয়েও বেশি ক্ষমতা রয়েছে৷
মোট ১৬ জন বিচারক কাজ করেন এই আদালতে, যাদের নিয়োগ দিয়ে থাকে বুন্ডেসটাগ, যেটা সংসদের নিম্নকক্ষ, এবং বুন্ডেসরাট, সংসদের উচ্চকক্ষ৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ